দল পাচ্ছেন না মস্তিষ্কের টিউমার থেকে ফেরা মোশাররফ

প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে দল পাওয়া কঠিনই হচ্ছে ব্রেন টিউমার থেকে সেরে ওঠা মোশাররফের। ছবি: প্রথম আলো
প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে দল পাওয়া কঠিনই হচ্ছে ব্রেন টিউমার থেকে সেরে ওঠা মোশাররফের। ছবি: প্রথম আলো

আজ দুপুরে মোশাররফ হোসেনকে দেখা গেল একাকী দাঁড়িয়ে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের বারান্দায়। ক্রিকেটাররা সব উৎসবমুখর পরিবেশে দলবদল করতে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) কার্যালয়ে ভিড় করছেন। মোশাররফ তখন বিষণ্ন মুখে দাঁড়িয়ে। বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে যে দল পাচ্ছেন না বাঁহাতি স্পিনার।

গত একটা বছর বড় ঝড়ই গেছে মোশাররফের ওপর। বাংলাদেশের হয়ে ৫ ওয়ানডে খেলা এ বাঁহাতি স্পিনার গত মার্চে জানতে পারলেন মস্তিষ্কের টিউমারে আক্রান্ত। প্রাণঘাতী এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে এই একটা বছর ঢাকা-সিঙ্গাপুর করে কেটেছে তাঁর। পুরোপুরি সেরে উঠতে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।

বিপুল এই চিকিৎসা ব্যয় তিনি সামলেছেন বিসিবি, সতীর্থ ক্রিকেটার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তা আর ধারদেনা করে। চিকিৎসার অর্থ জোগাতে মাঝে নিজের ফ্ল্যাটও বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আর বিক্রি করা হয়নি। ভেবেছিলেন, এবার প্রিমিয়ার লিগ খেলে কিছুটা ধারদেনা পরিশোধ করবেন। কিন্তু দল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় চোখে অন্ধকার দেখছেন মোশাররফ, ‘বাস্তবতা কতটা কঠিন, ভীষণ টের পাচ্ছি। রোগ থেকে সেরে উঠেছি। অনুশীলন করছি, খেলায় ফেরার চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো দল পাচ্ছি না। আদৌ পাব কিনা, নিশ্চিত নই। গত এক বছর পারফরম্যান্সের কারণে বাইরে ছিলাম, তা তো নয়। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে জীবনে। ক্রিকেটের বাইরে ছিলাম এ কারণে।’

এই প্রিমিয়ার লিগে দল পাওয়ার ব্যাপার তো আছেই। মোশাররফের অসন্তুষ্টি আছে তাঁর গত মৌসুমের দল গাজী ক্রিকেটার্সের গ্রুপের ওপরও। ক্ষোভ নিয়েই বললেন, ‘আমাকে গতবার প্লেয়ার্স ড্রাফটের প্রথম ডাকে ২০ লাখ টাকায় নিয়েছিল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। ৩ লাখ টাকা দিয়েছে। বাকি ১৭ লাখ টাকা দেয়নি। অথচ আমি কী বিপদের মধ্যে দিয়ে তখন গিয়েছি। এখানে আমার তো দোষ ছিল না। চোটে পড়লে কি তারা টাকা দিত না?’

মোশাররফ আজ সিসিডিএমে গিয়েছিলেন ‘টোকেন’ নিতে। দলবদলের আগের নিয়মে টোকেন না নেওয়ার অর্থ গত মৌসুমের দলেই খেলতে হবে একজন ক্রিকেটারকে। টোকেন তুলে একজন খেলোয়াড় জানিয়ে দেন, তিনি যেকোনো দলে খেলতে আগ্রহী। সিসিডিএম অবশ্য মোশাররফকে জানিয়েছে, নিয়মটা বদলেছে। এখন আর টোকেন তুলতে হবে না। তাঁকে যদি কোনো দল নেয়, সিসিডিএম এমনি ছাড়পত্র দিয়ে দেবে।

জীবনের কঠিন এক ধাপ পেরিয়ে আসা মোশাররফ বর্তমান বাস্তবতা মেনে নিচ্ছেন, ‘দল বদলের এখনো দুদিন আছে, দেখি কী হয়। জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্ত পেরিয়ে এসেছি, এটা আর কী! এখানে সর্বোচ্চ যেটা হতে পারে, আর ক্রিকেট খেলব না। তাই তো?’