০-৩ থেকে ৪-৩, বাংলাদেশের ফুটবলে এমন রোমাঞ্চ

ঘরের মাঠে এই প্রথম বসুন্ধরাকে হার উপহার দিল চট্টগ্রাম আবাহনী। ছবি: প্রথম আলো
ঘরের মাঠে এই প্রথম বসুন্ধরাকে হার উপহার দিল চট্টগ্রাম আবাহনী। ছবি: প্রথম আলো
>প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে আজ নীলফামারীতে ঘরের মাঠে প্রথম হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। চট্টগ্রাম আবাহনী অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচটি জিতেছে ৪-৩ গোলে

এত দিন নীলফামারীর মাঠ মানেই ছিল বসুন্ধরা কিংসের জয়। আজও ৩ গোলে এগিয়ে আরেকটি জয়ের পথে এগোচ্ছিল লাল জার্সিধারীরা। কিন্তু ধারেভারে অনেক এগিয়ে থাকা বসুন্ধরা জেতেনি। এমনকি ড্রও করতে পারেনি। ঘরের মাঠে এই প্রথম কোনো ম্যাচ হারল বসুন্ধরা কিংস। অবিশ্বাস্য এক ম্যাচের জন্ম দিয়ে ৪-৩ গোলে ম্যাচ জিতে নিয়েছে মারুফুল হকের চট্টগ্রাম আবাহনী। ম্যাচের ৬৩ মিনিট পর্যন্ত ৩-০ গোলে এগিয়েছিল বসুন্ধরা। ঘরের মাঠে বসুন্ধরার হারের রেকর্ড নেই। ৩-০ গোলে এগিয়ে ছিল তারা। এ অবস্থাতেও হাল না ছাড়ার দুর্দান্ত এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে চট্টগ্রাম আবাহনী।

আগের ম্যাচেই কুমিল্লায় ঢাকা মোহামেডানের কাছে হেরেছে বসুন্ধরা। সেই হারের পর এএফসি কাপে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফর্মে ফিরেছিল দলটি। সেই ম্যাচে ৪ গোল করা আর্জেন্টাইন জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার হার্নান বার্কোস লিগ ম্যাচে আপাতত খেলতে পারছেন না নিবন্ধন না থাকায়। তারপরও আজ জয় দেখছিল ভালোভাবেই। কিন্তু শেষ দিকে চট্টগ্রাম আবাহনীর দ্রুত গতির ফুটবল আর হার না মানা অদম্য লড়াইয়ের সামনে ভেঙে পড়ে তপু, ইয়াছিনদের নিয়ে গড়া বসুন্ধরা রক্ষণ। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান একে একে বল কুড়ান জাল থেকে।

৪৩ মিনিটে পেনাল্টিতে বসুন্ধরাকে এগিয়ে নেন তাজিক ডিফেন্ডার আকতাম নাজারভ। বিরতির ঠিক আগে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার নিকোলাস দেলমন্তে হেডে করেন ২-০। ফ্রি কিক থেকে উড়ে আসা বলে দুর্দান্ত এক ডাইভিং হেড করেছেন দেলমন্তে। দেলমন্তের হেডটি বহুদিন চোখে লেগে থাকতে পারত। কিন্তু ম্যাচে এর পর এত দুর্দান্ত সব গোল হয়েছে যে দেলমন্তেও আড়ালে চলে গেলেন।

শুরুটা দানিয়েল কলিন্দ্রেসের। ৫৯ মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর রক্ষণের ভুলে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে বল পেয়ে যান কলিন্দ্রেস। তাঁর পায়ের কাজে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে যান সঙ্গে থাকা ডিফেন্ডার। তাঁর দারুণ এক বাঁকানো শট গোলরক্ষককে কোনো সুযোগ দেয়নি। গোলরক্ষকের বাড়ানো হাতের ওপর দিয়ে উড়ে ঠিক সময় মতো নিচে নেমে ঢুকে গেছে জালে।

স্বাগতিকদের ৩-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরই দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। অতি আত্মবিশ্বাসী বসুন্ধরা ভুল করে অনেক। চট্টগ্রাম আবাহনী দুই উইং ব্যবহার করে আক্রমণ করেছে একের পর এক। তবে ডান প্রান্ত দিয়ে বারবার ভয় ছড়িয়েছে তারা। এমনই এক আক্রমণে ডান প্রান্ত থেকে আসা এক ক্রসে আইভরি কোস্টের স্ট্রাইকার চার্লিস দিদিয়ের ৬৪ মিনিটে ৩-১ করেন।

এরপর ৬৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্রাজিলের স্ট্রাইকার নিক্সন রোকার গোল ম্যাচ জমিয়ে দেয়। ডান প্রান্ত দিয়ে ওঠা আরেক আক্রমণেই ৮৭ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পেয়েছেন নিক্সন। প্রতিপক্ষ রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে করা তাঁর গোলটা দারুণ ছিল। তবে গোলের চেয়েও দুর্দান্ত ছিল যেভাবে আক্রমণে উঠেছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। শেষ মুহূর্তে এভাবে সমতায় ফেরা প্রাণবন্ত অতিথিরা জয়টা নিশ্চিত করেছে যোগ করা সময়ের একদম শেষে। ৯৪ মিনিটে দ্রুত গতির এক আক্রমণকে সফল পরিণতি দেন নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার চিনেদু ম্যাথিউ। দারুণ আক্রমণের পরিণতি দিয়েছেন দুর্দান্ত এক শটে (৪-৩)।

৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও এভাবে জয় পাওয়া বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে কমই দেখা যায়। ৬ ম্যাচে ৩ জয়, ২ হার ও ১ ড্রয়ে ১০ পয়েন্ট বসুন্ধরার। চট্টগ্রাম আবাহনী ৬ ম্যাচে ৪ জয় এবং ১টি করে ড্র-হারে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে আজ শীর্ষে উঠে এসেছে। এক ম্যাচ কম খেলে ১০ পয়েন্ট পাওয়া ঢাকা আবাহনী আজই একটু পর ঢাকায় মুখোমুখি হবে মুক্তিযোদ্ধার সংসদ ক্রীড়াচক্রের সঙ্গে। ১২ পয়েন্ট নিয়ে মোহামেডান ও শেখ জামাল যৌথভাবে শীর্ষে ছিল গতকাল পর্যন্ত।