তিন মোড়ল বলেই সর্বনাশটা তাদের বেশি

ছবিটি প্রতীকী। বিসিসিআইয়ে করোনার কালো ছায়ায় থমকে গেছে আয়-রোজগার। ছবি: রয়টার্স
ছবিটি প্রতীকী। বিসিসিআইয়ে করোনার কালো ছায়ায় থমকে গেছে আয়-রোজগার। ছবি: রয়টার্স
>করোনাভাইরাস মহামারি হয়ে ওঠায় প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী তিন ক্রিকেট বোর্ড

‘ব্যাকফুটে’ খেলার চেষ্টা করছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড? ইঙ্গিতটা সেরকমই।

এ মাসের শুরুতে আইপিএলের প্রাইজমানি কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড। চলতি সপ্তাহে খরচ কমানোর আরও একটি ঘোষণা দেয় তারা। এখন থেকে প্রধান নির্বাচক ছাড়া আর কেউ ঘরোয়া ফ্লাইটে সিনিয়র ও জুনিয়র দলের প্রধান নির্বাচকেরাই শুধু উড়োজাহাজের বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন। নির্বাচক প্যানেলের বাকিরা ইকোনমি ক্লাসে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্কে স্থগিত হলো ৬৮০ কোটির ব্র্যান্ড মূল্যের আইপিএল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইপিএল কাট-ছাঁট করে বিদেশিদের ছাড়াই মাঠে গড়াতে পারে বছরের শেষ নাগাদ।

আইপিএল কাটছাঁট করে কিংবা বাতিল হয়ে গেলে বিসিসিআইকে বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। ঘরোয়া এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের সম্প্রচার স্বত্ব ও অন্যান্য স্পনসর থেকে প্রতি বছর ৫.৩৮ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা) পায় বিসিসিআই।

ভারতে খেলাধুলা নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যবেক্ষণ করা প্রতিষ্ঠান ‘স্পোর্টজপাওয়ার’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা থমাস আব্রাহাম বলেন, ‘লোকসানের বিষয়টি ধারণাগত। একটি অর্থনৈতিক পরিকাঠামোয় সবচেয়ে বেশি লোকসানে থাকারাই সাধারণত সবচেয়ে বেশি লাভ করে। বিসিসিআইয়ের ক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে। স্টার ইন্ডিয়ার জন্যও এটা সুযোগ হারানো ক্ষতি।’

আইপিএল কাটছাঁট করে আয়োজন করা হলে অবশ্যই স্টার ইন্ডিয়ার সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হবে বিসিসিআইকে। ডিজনির মালিকানাধীন এই সম্প্রচারক প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে কী ভাবছে জানতে পারেনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। ২১৯ মিলিয়ন রুপি খরচায় ২০১৮-২০২২ পর্যন্ত আইপিএলের টাইটেল স্বত্ব পেয়েছে মুঠোফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভো। রয়টার্স মনে করছে আইপিএল নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান খুব একটা ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। আব্রাহামের ভাষায়, ‘আইপিএল নিয়ে ওরা নতুন করে পরিকল্পনা করছে। ক্ষতিটা ওরা পুষিয়ে নিতে পারে।’

ভিভো ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি পরিচালক নিপুণ মারয়া অবশ্য আইপিএল স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, ‘স্বাস্থ্য ভাবনা থেকে বিসিসিআইয়ের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত।’

আইপিএলে একজন ক্রিকেটারের বার্ষিক ফি-র ২০ শতাংশ সেই ক্রিকেটারের বোর্ডকে দিয়ে থাকে বিসিসিআই ও আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি দল। করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাটছাঁট হওয়া আইপিএলে যদি তারা খেলতে না পারেন তাহলে ওই খেলোয়াড়ের বোর্ড টাকার ভাগও কম পাবে। এ ছাড়াও রাজস্ব ও টিকিট বিক্রি থেকে আয় কমবে।

লোকসানের সম্মুখীন হবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ায়ও (সিএ)। এ বছরের শেষ দিকে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। এই সিরিজ না হলে ১৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার লোকসান দিতে পারে সিএ। প্রধান নির্বাহী কেভিন রবার্টস বলেন, ‘অনিশ্চিত সময় চলছে। ঠিক বুঝতে পারছি না সামনের কয়েক মাসে কী ঘটবে। তবে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।’

করোনায় ইংল্যান্ডে থমকে গেছে ‘দ্য হান্ড্রেড’ টুর্নামেন্টের মাঠে গড়ানো। ১০০ বলের এ টুর্নামেন্টে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে ইসিবি। এ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে আইপিএলের চুক্তি হারানোর শঙ্কায় আছেন ভারতের বাইরের ক্রিকেটাররা। ধরা যাক, আইপিএল ছোট সংস্করণে মাঠে গড়াল। কিন্তু বিদেশি ক্রিকেটাররা করোনা আতঙ্কে কিংবা বোর্ড অনুমতি না দেওয়ায় যেতে পারলেন না—তখন কিন্তু কাড়ি কাড়ি টাকার চুক্তি হারাবেন তারা।