হায় রে জাপানের এক লাখ কোটি টাকা

পেছাচ্ছে টোকিও অলিম্পিক। ছবি : এএফপি
পেছাচ্ছে টোকিও অলিম্পিক। ছবি : এএফপি
>

ইতিহাসের প্রথমবারের মতো পেছাচ্ছে অলিম্পিক। আর এই পেছানোর কারণে স্বাগতিক জাপানের ক্ষতি হচ্ছে অনেক

আধুনিক অলিম্পিকের ১২৪ বছরের ইতিহাসে যা আগে কখনো ঘটেনি, এবার হতে যাচ্ছে সেটাই। এই প্রথমবারের মতো নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী না হয়ে পেছাচ্ছে অলিম্পিক গেমস। যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ইউএসএ টুডেকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির সদস্য ডিক পাউন্ড বলেছেন, টোকিও ২০২০ অলিম্পিক গেমস স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে।

জাপান সরকার, জাপানের অলিম্পিক কমিটি আর আইওসি বারবারই বলে আসছিল, গেমস যথাসময়ে ২৪ জুলাই শুরু হবে। সেটা যদি দর্শকশূন্য গ্যালারিতেও আয়োজন করতে হয়, তাই করা হবে! এর মধ্যেই গতকাল কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এবারের অলিম্পিকে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য দুটি দেশের অলিম্পিক কমিটিই একটি পাদটীকা জুড়ে দিয়েছিল—করোনাভাইরাস মহামারি শেষ হয়ে যাওয়ার পর গেমসটি ২০২১ সালে আয়োজন করলে তারা অংশ নেবে।

অলিম্পিক পেছানোর চাপ আসছিল গ্রেট ব্রিটেন, নরওয়ে, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক দেশ থেকেই। শেষ পর্যন্ত সেই চাপের সামনে গেমস স্থগিতের সিদ্ধান্তই নিতে হয়েছে আইওসিকে। ইউএসএ টুডেকে ডিক পাউন্ড বলেছেন, ‘আইওসির কাছে যে তথ্য আছে, তার ওপর ভিত্তি করে সংস্থাটি গেমস স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এরপর কী হবে, তা এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে আমি যত দূর জানি, গেমস আপাতত ২৪ জুলাই শুরু হচ্ছে না।’

ইউএসএ টুডে পত্রিকার খবর অনুযায়ী, টোকিও ২০২০ অলিম্পিক গেমস শুরু হবে ২০২১ সালে। ওই বছর আবার বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ আছে। তবে বিশ্ব অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন গতকালই বলেছে, বিষয়টি নিয়ে আইওসির সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। অলিম্পিক গেমসের সফল আয়োজনের স্বার্থে তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পিছিয়ে অন্য কোনো সময়ে করতে রাজি আছে। এরপরই হয়তো আইওসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে গতকালই জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশটির সংসদে গেমস স্থগিতের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কথা বলেছেন, ‘অলিম্পিক স্থগিতের ঘোষণা দেওয়াটা আমাদের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।’ এ ছাড়া গেমস পেছানোর ইঙ্গিত গতকাল আইওসি সভাপতি টমাস বাখও দিয়ে রেখেছিলেন। তবে গেমস স্থগিত হওয়াটা জাপান সরকারের জন্য বিরাট এক ক্ষতির কারণই হবে। এরই মধ্যে দেশটির সরকার গেমস আয়োজনের পেছনে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার খরচ করে ফেলেছে। এ ছাড়া স্পনসর ও সম্প্রচারের দিক থেকেও অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে দেশটি।

কিন্তু পুরো বিশ্বে যেভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, গেমস পেছানোটা অবধারিতই হয়ে পড়েছিল। দেশে দেশে অ্যাথলেটরা অনুশীলন করতে পারছেন না। নিজেদের রেখেছেন গৃহবন্দী করে। এমনকি ঠিকভাবে জিম আর সুইমিংও করতে পারছেন না। এমন অপ্রস্তুত অবস্থায় কীভাবে তাঁরা অলিম্পিকের মতো একটি আসরে অংশ নিতে পারেন! তা ছাড়া এখনো অলিম্পিক গেমসের অনেক খেলার বাছাইপর্বও শেষ হয়নি। সব মিলিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মাইক রায়ান বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, শিগগিরই (গেমস স্থগিতের) সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত করে আইওসি প্রকাশ করলে অলিম্পিক গেমসে তৈরি হবে নতুন ইতিহাস। আধুনিক অলিম্পিক শুরুর পর তিনবার গেমস বাতিল হয়েছে—১৯১৬, ১৯৪০ ও ১৯৪৪ সালে। প্রথমবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে, দ্বিতীয় দুটি বাতিল হওয়ার কারণ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এ ছাড়া ১৯৮০ সালে মস্কো আর ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে অনেক দেশ অলিম্পিক বয়কট করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অলিম্পিক গেমস স্থগিত হওয়ার ঘটনা এটাই হবে প্রথম।