ডাবল হ্যাটট্রিক আর ২৬ রান

জ্যাক ক্যালিসকে ফিরিয়ে হয়েছিল মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক। ছবি: এএফপি
জ্যাক ক্যালিসকে ফিরিয়ে হয়েছিল মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক। ছবি: এএফপি
ক্রিকেট ইতিহাসে ২৮ মার্চ দিনটিকে রাঙিয়ে রেখেছে ৫২ বছর আগে-পরের দুটি ঘটনা। প্রথমটি টেস্টে, পরেরটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে।

২৮ মার্চ, ২০২০। ১০, ২০ বা ৫০ বছর পর ক্রিকেটের একনিষ্ঠ কোনো অনুসারী বা কোনো ক্রিকেট ইতিহাস অনুরাগী যদি খুঁজে বের করতে চান এই দিনে কী ঘটেছিল ক্রিকেটে, কিছুই পাবেন না। না, একেবারে যে কিছু পাবেন না তা নয়। একটা শব্দ লেখা থাকবে ক্রিকেট ইতিহাস বইয়ের পাতায়। ২৮ মার্চ, ২০২০—ক্রিকেট লকডাউন!

সংক্ষিপ্ত একটা পাদ টিকাও হয়তো থাকবে সেখানে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সব দেশে সব ধরনের ক্রিকেট বন্ধ ছিল। বাড়তি একটু লেখাও থাকতে পারে, শুধু ক্রিকেট নয়, বন্ধ ছিল আসলে পৃথিবীর প্রায় সব খেলাই। খেলোয়াড়েরা বন্দী নিজ ঘরে। কিন্তু ১৯৫৫ বা ২০০৭ সালে তো আর বিশ্বে কোনো মহামারি বা দুর্যোগ ছিল না, তাই থেমে ছিল না ক্রিকেটও।

নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাস অবশ্য ভিন্ন ইঙ্গিত দেবে। ১৯৫৫ সালের ২৮ মার্চ দুর্যোগ নেমে এসেছিল নিউজিল্যান্ড দলের ওপর। মহামারি নেমে এসেছিল কিউইদের দ্বিতীয় ইনিংসের ওপর! অকল্যান্ডে ৬৫ বছর আগের এই দিনে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে মড়কটা লাগিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের তিন পেসার—বব অ্যাপলইয়ার্ড, ফ্রাঙ্ক টাইসন ও ব্রায়ান স্ট্যাথাম। তিনজনে মিলে নিয়েছেন ৯ উইকেট।

উইকেট পতনের গ্রাফটা একবার দেখে নিন: ১-৬, ২-৮, ৩-৯, ৪-১৪, ৫-১৪...এভাবে এগোতে এগোতে ২৬ রানে অলআউট ৪৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা নিউজিল্যান্ড। যেটি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এক ইনিংসে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড। ১৯৫৫ সালের সেই রেকর্ড এখনো হাতছাড়া হয়নি কিউইদের। হলে হয়তো তারা হাঁপ ছেড়েই বাঁচত!

এমন মড়কের দিনেও দুই অঙ্ক পেরিয়েছিলেন ওপেনার বার্ট সাটক্লিফ (১১ রান)। বাকিদের রান? ঠিক যেন মোবাইল নম্বর—১, ০, ১, ১, ৭, ৫, ০, ০, ০! ম্যাচটি ইনিংস ও ২৯ রানে জিতেছিল ইংল্যান্ড। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানের ইনিংসটি এর আগে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৮৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ৩০ রানে আউট হওয়ার ২৮ বছর পর আবার একই রানে একই দলের বিপক্ষে আরেকবার অলআউট হয়েছিল প্রোটিয়ারা।

১৯৫৫ সালে নিউজিল্যান্ড তাঁদের কাছ থেকে টেস্টে ইনিংসে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডটা ‘কেড়ে’ নিলেও, ২৮ মার্চ দিনটি দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তবু হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানিয়াই। ২০০৭ সালের এই দিনে যে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শেষ দিকে প্রায় জেতা ম্যাচেও প্রোটিয়াদের বুকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা। ম্যাচটি ছিল ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের, সুপার এইটে। গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা করেছিল ২০৯ রান। সেই রান তাড়া করতে নেমে ৫ উইকেটে ২০৬ রান তুলে সহজ জয়ের পথেই এগোচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু শ্রীলঙ্কা দলে যে ছিলেন একজন মালিঙ্গা!

৪৫তম ওভারে বল করতে এসে শেষ দুই বলে শন পোলক ও অ্যান্ড্রু হলকে তুলে নেন মালিঙ্গা। ৪৭তম ওভারের প্রথম দুই বলে আবার তুলে নেন জ্যাক ক্যালিস ও মাখায়া এনটিনিকে। ৪ বলে ৪ উইকেট! ক্রিকেট বিশ্ব যে ঘটনা সেবারই প্রথম দেখল। মালিঙ্গার কল্যাণে ক্রিকেট বিশ্বের প্রথম পরিচয় ঘটল ডাবল হ্যাটট্রিক নামের শব্দ যুগলের সঙ্গে! এরপরও ম্যাচটি অবশ্য হেরেছে শ্রীলঙ্কা।