করোনায় করুন সিডন্সের 'ক্লাস'

যখন তামিম সাকিবদের কোচ ছিলেন জেমি সিডন্স। ফাইল ছবি: এএফপি
যখন তামিম সাকিবদের কোচ ছিলেন জেমি সিডন্স। ফাইল ছবি: এএফপি
>

নিজের কোচিং ওয়েবসাইটে বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ জেমি সিডন্স বিনা মূল্যে দিচ্ছেন ব্যাটিং টিপস। করোনার স্থবির সময়ে সেসব সহায়ক হতে পারে উঠতি ক্রিকেটারদের।

এনামুল হক (বিজয়) ছাদে ব্যাটিং অনুশীলন করছেন। সৌম্য সরকার স্ট্রেচিং করছেন ঘরে। তামিম ইকবাল দৌড়াদৌড়ির কাজটা এখন সারছেন ট্রেডমিলে। মাশরাফি বিন মুর্তজার সময় কাটে ছেলের সঙ্গে বাসায় ক্যারম খেলে।

করোনাভাইরাসের ছোঁয়াচে আগ্রাসনের ভয়াল সময়ে এই হচ্ছে ক্রিকেটারদের ঘরবন্দী জীবন। সামনে কী আছে, কেউ জানে না। তবু মানুষ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই দিন গোনে। এনামুলের অনুশীলন যখন আঁধার কাটিয়ে আলো আসবে, তখন প্রিমিয়ার লিগে ভালো কিছু ইনিংস খেলার জন্য। তামিম-সৌম্য নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ তো এখনো বাতিল হয়ে যায়নি। শরীরটাকে ঠিক রাখি।

ঘরবন্দী জীবনের দিনগুলোতে তামিম-সৌম্যদের অনুজ ক্রিকেটাররা চাইলে আরও একটা কাজ করতে পারেন। বাড়িতেই তাঁরা শিখে নিতে পারেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের ব্যাট সুইং করানোর কৌশল। ব্যাটিংটা কী করে তাঁদের কাছে এত সহজ কাজ হয়ে উঠল, সেটি জেনে নিতে পারেন ল্যাপটপ, ট্যাব কিংবা মোবাইলের স্ক্রিন থেকেই। সারা বিশ্বের ক্রিকেটারদের জন্যই ঘরে বসে ক্রিকেট শেখার এ সুবিধাটা করে দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ জেমি সিডন্স।

অস্ট্রেলিয়ান এই কোচের ওয়েবসাইট ‘জেমি সিডন্স ক্রিকেট কোচিং’ সবাইকেই দিচ্ছে বিনা মূল্যে ক্রিকেটীয় টিপস, শেখাচ্ছে ব্যাটিংয়ের কার্যকর কলাকৌশল। বিশেষ করে উঠতি ক্রিকেটারদের জন্যই বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচের এই উদ্যোগ। নিজের ওয়েবসাইট নিয়ে সিডন্স এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘এই সাইটের মাধ্যমে আমি উঠতি খেলোয়াড়দের টিপস দিই, অনলাইন কোচিং সেশন করাই। এসবই একদম ফ্রি।’

বাংলাদেশে থাকার সময় এই দেশটার প্রেমেই পড়ে গিয়েছিলেন। ছুটির দিনে স্ত্রীকে নিয়ে রিকশায় ঘোরা ছিল সিডন্সের প্রিয় শখ। ক্রিকেট খেলতে চলে গিয়েছিলেন পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠেও। করোনার দিনগুলোতে অস্ট্রেলিয়ায় বসে সিডন্স কল্পনায় এখনো সেই বাংলাদেশকেই দেখেন, ‘আমার বিশ্বাস, করোনা তোমাদের সবকিছুই এখনো গ্রাস করে নেয়নি। এখনো সব আগের মতো আছে।’

সবাইকে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দিয়ে সঙ্গে বলেছেন, অপ্রত্যাশিত এই অবসরে ঘরে বসে থাকা ক্রিকেটাররা চাইলে তাঁর সাহায্য নিতে পারেন, ‘আমার ওয়েবসাইট থেকে তরুণ ক্রিকেটাররা শিখতে পারবে সঠিক ব্যাট সুইং কীভাবে করানো যায়। আধুনিক ক্রিকেটে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুব সহজ কিছু টিপসেই আমি দেখিয়ে দিব সাকিব-তামিম কী করে এত সহজে ব্যাট সুইং করায়। এগুলো এমন কিছু টিপস যা সহজেই ঘরে বা বাড়ির পাশের খোলা জায়গায় অনুশীলন করে নেওয়া সম্ভব।’

২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১১ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সহকারী কোচ জেমি সিডন্স। বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিদায় নিতে হলেও তাঁর সময়ের সব ক্রিকেটারই স্বীকার করেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের উত্থানের পেছনে সিডন্সের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। মাশরাফি তো এই সেদিন অধিনায়কত্ব ছাড়ার সংবাদ সম্মেলনেও বলেছেন, ‘সিডন্স আর চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতো দুই কোচের কারণেই বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ এই জায়গায়।’

সিডন্সের ওয়েবসাইট যদিও মূলত তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য, তামিম তবু মাঝেমধ্যেই ঢুঁ মারেন সেখানে। পুরোনো কোচ সম্পর্কে তাঁর কথা, ‘আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি, আমার দেখা সেরা ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স। ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি যা কিছু শিখেছি, সব তাঁর কাছ থেকেই।’ জেমি সিডন্স ক্রিকেট কোচিং ওয়েবসাইটকেও উঠতি ক্রিকেটারদেও জন্য উপকারী মনে করেন বাংলাদেশ দলের ওপেনার, ‘আমি সাইটটিতে মাঝেমধ্যে ঢুকি। তরুণ ক্রিকেটাররা চাইলে সেখান থেকে অনেক কিছুই নিতে পারে। বিশেষ করে এখন যখন বাইরে অনুশীলন করা কঠিন। তবে তাদের উচিত নিয়মিতই এটা ফলো করা।’

ক্রিকেটাররাই শুধু কেন, যেসব বাবা-মা সন্তানদের ক্রিকেটার বানাতে চান, বা এটুকু অন্তত চান যে বাচ্চারা অবসরের সময়ে ঘরে খেলা নিয়ে থাকুক, ওয়েবসাইটে তাদের জন্যও পরামর্শ আছে সিডন্সের। সিডন্স বলছিলেন, ‘আমার সাইটের ফেসবুক পেজে গেলে দেখবেন আমার ৯ বছরের ছেলে টবিও কি সুন্দর টেকনিকগুলো কাজে লাগাচ্ছে। বেশ কিছু সুন্দর ভিডিও আর ড্রিল দেওয়া আছে সেখানে।’
দূরে থেকে কাছে থাকো—ইনভেলপের ভেতর লুকিয়ে থাকা করোনাভাইরাস আমাদের এই শিক্ষাই দিয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেটের দূরশিক্ষণ নিয়ে জেমি সিডন্সও দূরে থেকেই থাকছেন ক্রিকেটারদের কাছে।