কেমন আছেন জুয়েল রানা?

স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে জুয়েল রানা। ছবি: জুয়েল রানার ফেসবুক
স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে জুয়েল রানা। ছবি: জুয়েল রানার ফেসবুক
>

প্রায় দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী হয়েছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক জুয়েল রানা। আশির দশকে ঢাকার ফুটবলের জনপ্রিয় তারকা সম্রাট হোসেন এমিলি আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। কেমন আছেন প্রবাসী ফুটবল তারকারা?

২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল অভিবাসী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান জুয়েল রানা। নিউইয়র্কে ছিলেন ১৩ মাস, স্থায়ী আবাস গড়ার চিন্তাভাবনা ছিল সেখানেই। কিন্তু গত জুলাইয়ে চলে যান ভার্জিনিয়ায়। স্ত্রীর দুই বোন নিউ জার্সি থেকে ভার্জিনিয়ায় স্থানান্তর হয়েছেন। সেখানকার স্কুল গোটা মার্কিন মুলুকে ভালো। যেহেতু দুই সন্তানের কথা ভেবেই দেশ ছেড়েছিলেন, তাঁদের জন্য তিনিও নতুন ঠিকানা গড়েন নিউ জার্সিতে। সিদ্ধান্তটা কত ভালো ছিল, তা এখন বুঝতে পারছেন ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু সাফ গেমসে সোনা জেতা বাংলাদেশ দলের গর্বিত অধিনায়ক জুয়েল রানা।

করোনাভাইরাসের থাবায় পুরো নিউইয়র্ক এখন যেন হাসপাতাল! ৬০ হাজারের বেশি আক্রান্ত মানুষ। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে প্রায় ৩০ জন বাংলাদেশিও। এমন দুঃসময়ে নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলাররা কেমন আছেন, তা জানতেই জুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ হলো মঙ্গলবার ভোরে। টেলিফোনে জুয়েল সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, ‘গত জুলাইয়ে যখন নিউইয়র্ক ছেড়ে আসি তখন জানতাম না শহরটি করোনার হানায় এভাবে বিধ্বস্ত হবে। এখন মনে হয় ভালো কাজই করেছি। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন।’

নিউইয়র্ক ছাড়ার কিছু কারণ ছিল জুয়েলের। সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও জীবনমান নাকি কমছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে এসে ১০-১২ দিন নিউ জার্সিতে ছিলাম। সেখান থেকে প্রথম যখন নিউইয়র্ক আসি, জ্যামাইকায় ঢোকার সময় আমার বাচ্চারা বলে আমরা কি বাংলাদেশে চলে এলাম নাকি? আমরা এখানে থাকব না।’ নিউইয়র্কে জ্যামাইকা মানে এক টুকরা ঢাকা শহর। চটপটি, ফুসকা, লেবুর পানি...কী পাওয়া যায় না! ‘মনেই হচ্ছিল না যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি’-বলছিলেন জুয়েল।

নিউইয়র্ক ছাড়লেও সেখানে আছেন জুয়েলের অনেক পরিচিতজন। এই দুঃসময়ে নিয়মিত কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে। জুয়েল বলছিলেন, ‘বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়ানক অবস্থা নিউইয়র্কে। অনেক বাংলাদেশি মারা গেছেন। কবর দেওয়ার জায়গাও নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। একটা দুঃস্বপ্ন চলছে যেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই এখন।’

নিউইয়র্ক থেকে গাড়িতে সাড়ে ৪ ঘণ্টা দূরত্বে জুয়েলের নতুন আবাস। তবে নিউইয়র্কেরই কুইন্সে থাকেন বাংলাদেশের আরেক সাবেক ফুটবলার সম্রাট হোসেন এমিলি। আবাহনী ও মোহামেডানের হয়ে ১৯৮৩-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত রেকর্ড টানা ছয়টি লিগজয়ী এমিলি ২০১৪ সাল থেকে আছেন প্রবাসে। করোনার এই ভয়াল থাবায় তিনিও ঘরে ঢুকে গেছেন। মুঠোফোন বলছিলেন, ‘জীবনে এমন বিপর্যয় আসবে, কখনো ভাবিনি। মহা দুশ্চিন্তায় কাটছে আমাদের দিন।’

দুশ্চিন্তায় কাতর পাঁচটি সাফ গেমস খেলা জুয়েল রানাও। ২১ বছর আগে তাঁর হাত ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে প্রথম সোনা জেতে বাংলাদেশ। কখনো আবাহনীতে খেলেননি। তবে মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্সে খেলে তিন দলকেই জিতিয়েছেন লিগ। যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে ইচ্ছে ছিল ফুটবল কোচিংয়ের কাজ খুঁজে নেবেন। নিউইয়র্কে সেটা হয়নি। চাকরি নেন এক ওষুধ কোম্পানিতে। আর এখন ভার্জিনিয়ায় একটি পোশাক বিপণন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পাশাপাশি সপ্তাহে দুই দিন একটি একাডেমির হয়ে ছোটদের ফুটবল শেখান। করোনার কারণে একাডেমির কার্যক্রম জুন পর্যন্ত বন্ধ। দুই সপ্তাহ আগে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর ছেলেমেয়েদের স্কুলও।

ওয়াশিংটনের খুব কাছে জুয়েলের আবাসস্থলেও করোনাভাইরাস কিছুটা হানা দিয়েছে। তবে তা ছড়িয়ে পড়েনি। লকডাউনও হয়নি। তবে সব চলছে সীমিত আকারে। সবার আশঙ্কা, করোনার ছোবল সেখানেও প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে। দেশে বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যদের জন্যও চিন্তা হচ্ছে তাঁর।

চিন্তাটা আসলে কার না হচ্ছে! করোনার অভিশাপ থেকে কবে মুক্তি পাবে বিশ্ব?