৮ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা এভাবে হারিয়ে যাবে?

অর্থনীতি বড় এক ধাক্কা খাচ্ছে করোনাভাইরাসে। ছবি: এএফপি
অর্থনীতি বড় এক ধাক্কা খাচ্ছে করোনাভাইরাসে। ছবি: এএফপি

ফুটবলে এত দিন অর্থের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। এই ক্লাব কোটি টাকা দিয়ে কাউকে কিনছে তো অন্য ক্লাব শত কোটি দিয়ে স্টেডিয়াম ঠিক করছে। কোনো ফুটবলার শখ করে নতুন মডেলের গাড়ি কিনছেন তো আরেকজন সঙ্গীকে খুশি করতে ছোট খাট দ্বীপই কিনে নিচ্ছেন। করোনাভাইরাস এবার উল্টোটাও দেখিয়ে দিল।

মার্চের শুরু থেকেই ইউরোপের ফুটবল থমকে গেছে। প্রথম দিকে যাও কয়েকটি ম্যাচ দেখা গেছে সেগুলোও ছিল দর্শকশূন্য মাঠে। ফলে টিকিটের অর্থ বাবদ কিছুই মেলেনি ক্লাবগুলোর। এরপর তো খেলাই বন্ধ হয়ে গেছে বড় বড় লিগগুলোয়। ফলে টিভির সুবাদেও খেলা দেখার পথ বন্ধ। আর টিভিতে খেলা না থাকা মানেই টিভি স্বত্বের সুবাদে যে টাকা পাওয়ার কথা লিগ ও ক্লাবগুলোর, সেটাও মিলছে না তাদের। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবাই। এর মাঝেই ক্লাবকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে ও অন্যান্য কর্মীদের বেতন নিশ্চিত করতে নিজেদের বেতন ৭০ ভাগ কমিয়ে এনেছেন মেসি ও বার্সেলোনার মূল দলের খেলোয়াড়েরা। জুভেন্টাসে রোনালদো ও তাঁর সতীর্থেরা আগামী চার মাস বেতন নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

প্রায় সব ক্লাবই কর্মী ছাঁটাই করছে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য। রিয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো অবশ্য এখনো সকল কর্মীকে এই বিপদে পূর্ণ সহযোগিতা করায় বদ্ধ পরিকর। কিন্তু বাকিরা সবাই আসন্ন ক্ষতি ও এই বিপদ থেকে পার হওয়ার উপায় খুঁজছে।

তাই ইউরোপের সব লিগই চেষ্টা করছে যেকোনোভাবেই হোক, মাঠে খেলা গড়ানোর। তাহলে যে অন্তত টিভি স্বত্বের টাকা মিলবে। কিন্তু সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে কী হবে, সেটাও ভেবে রাখছে তারা।

লা লিগা যেমন হিসাব কষে দেখেছে, যদি এ মৌসুমে আর মাঠে না নামানো যায় দলগুলোকে তবে ৯৫ কোটি ৬৬ লাখ ইউরো ক্ষতি হবে তাদের। বাংলাদেশের মূল্যমানে যা ৮ হাজার ৮৭২ কোটি টাকার কাছাকাছি। আর যদি স্টেডিয়াম খালি করেও লিগ শুরু করা যায় তবে ক্ষতির পরিমাণ হবে ৩০.৩৪ কোটি ইউরো। এমনকি মাঠে দর্শক ফিরে এলেও (বর্তমানে যা একেবারেই অসম্ভব), ক্ষতির পরিমাণ হবে ১৫ কোটি ৬৪ লাখ।

তবে ক্ষতির বড় একটা অংশ খেলোয়াড়দেরই বহন করতে হবে। অর্থাৎ, বার্সেলোনা বা জুভেন্টাসের খেলোয়াড়রা যেভাবে নিজ থেকে বেতন কমিয়ে এনেছেন, সেভাবেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে ক্লাবগুলো। নিজ থেকে তাঁরা রাজি না হলে ক্লাবগুলোর পক্ষে এটা বাস্তবায়নের আইনি পথ খোলা আছে। সে ক্ষেত্রে ৪৫ কোটি ১০ লাখ ইউরো বহন করতে হবে ফুটবলারদেরই। আর যদি খালি স্টেডিয়ামে খেলা হয়, খেলোয়াড়দের ক্ষতির পরিমাণ নেমে আসবে ১৪ কোটি ইউরোতে। দর্শকদের কোলাহলের মাঝে খেলা সম্ভব হলে ফুটবলাররা আর্থিক ক্ষতির ক্ষেত্রে একটু হলেও সুবিধা পাবেন। তখন তাঁদের ব্যাংক ব্যালেন্সে নেতিবাচক ঘরে থাকবে ৭ কোটি ৭০ লাখ ইউরো।

এটা শুধু লা লিগার হিসেব। ইউরোপের সবগুলো লিগ হিসেব করলে হয়তো অঙ্কটা কল্পনাতীত ঠেকতে পারে। করোনাভাইরাস কবে মাঠে ফুটবল ফিরতে দেবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে যখনই ফিরুক, বদলে যাবে বিশ্ব ফুটবল ও তার অর্থের ঝনঝনানির গল্প।