হেলমেট পরায় ক্যারিবীয় 'সাম্রাজ্যে'র পতন, ভাবাই যায় না

ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় হেলমেট ব্যবহার না করা রিচি রিচার্ডসন শেষ দিকে এসে হেলমেট পরেছিলেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় হেলমেট ব্যবহার না করা রিচি রিচার্ডসন শেষ দিকে এসে হেলমেট পরেছিলেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

কথাটা বলেছিলেন কলিন ক্রফট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি এ পেসার মনে করেন, ‘হেলমেট কাপুরুষদের জন্য’! ব্যাটসম্যানেরা এটি পরেন বলেই বাউন্সার সামলানোর সহজাত দক্ষতাগুলো ভুলে যান।

মাত্র পাঁচ বছরের ক্যারিয়ারে ক্রফট ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বজয়ী দলটার সদস্য। সত্তর দশকের মাঝ থেকে পুরো আশির দশক রাজত্ব করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নব্বই দশকের মাঝামাঝি এসে রাজ্যপাট হারায় তারা।

ক্রফটদের সেই দলের ব্যাটসম্যানদের সাহস নিয়ে নতুন করে বলার নেই। ভিভ রিচার্ডস যেমন হেলমেট পরতেন না। আবার শর্ট লেংথের বল পেলে সীমানাছাড়া করতেও ভুল হতো না। ভিভদের সেই দলের দাপট শেষ হয়ে আসার পথে আবির্ভাব ঘটেছিল রিচি রিচার্ডসনের। পুল-হুকে দুর্দান্ত রিচার্ডসনও হেলমেট পরতেন না। কিন্তু তাঁর এক ব্যতিক্রমী ঘটনার সঙ্গে আজও মেলানো হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি।

১৯৮০ থেকে ১৯৯৫-এ সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটাই অন্যরকম ছিল। প্রতিপক্ষের পেসারদের খেলতে তাদের যেমন হেলমেট লাগত না, তেমনি এ সময় প্রতিটি টেস্ট সিরিজ জিতেছে তারা। কিন্তু সেন্ট জোনসে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ধরা পড়ল কিছু একটা গড়বড় আছে। ক্যারিবীয় ক্রিকেট আর আগের মতো নেই। সেটি ১৯৯৫ সালের কথা। রিচার্ডসন তখন অধিনায়ক।

প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ২১৬ রানে অলআউট হওয়ার পর বিনা উইকেটে ১৪ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিয়ারের ৭৮তম ম্যাচে এসে প্রথমবারের মতো হেলমেট পরে ব্যাট করেছিলেন স্বয়ং রিচার্ডসন। খুব ভালো পুল-হুক খেলতেন তিনি। কিন্তু সেদিনের ঘটনাটা চমকে দিয়েছিল সবাইকে।

এখন অবশ্য নিরাপত্তার খাতিরেই ব্যাটসম্যানদের হেলমেট ছাড়া চলে না। কিন্তু রিচার্ডসনরা আসার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশির ভাগ ভালো ব্যাটসম্যান একটা ধারা ঠিক করে দিয়েছিলেন। হেলমেট ছাড়াই পেসারদের খেলা। এর লাভ কম ছিল না। সবচেয়ে বড় জয়টা ছিল মানসিক। ভালো পুল-হুক খেলতে পারলে রানও তোলা যেত প্রচুর। কিন্তু রিচার্ডসন সেদিন হেলমেট পরায় সবাই বুঝে নিয়েছিল দ্রুতই পতন ঘটতে যাচ্ছে ক্যারিবীয় ক্রিকেটের। তারা এখন আর অজেয় না। খুব ভালো পুল-হুক খেলতে পারা রিচার্ডসনের হেলমেট পরা এই অজেয় না থাকার প্রতীক। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে হেলমেট পরার কারণটা নিয়ে একবার প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রিচার্ডসন বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, শেষ দুটি ম্যাচে হেলমেট পরেছিলাম। হয়তো অনেক বোঝার বয়স হয়েছে তখন। হেলমেট পরতে খুব অস্বচ্ছন্দ বোধ করতাম। যখন ক্রিকেট শুরু করি ওয়েস্ট ইন্ডিজে হেলমট পরার চলও খুব একটা ছিল না। নিজের ওপর আস্থা রেখেছি। দৃষ্টি, রিফ্লেক্সের ওপর বিশ্বাস ছিল। আমার সৌভাগ্য কখনো আঘাত পাইনি। অনুশীলনে দ্রুতগতির বোলারদের প্রচুর খেলতাম। তাতেও একটা অভ্যস্ততা গড়ে উঠেছিল।’

ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়ে যিনি হেলমেট পরেননি, সেই রিচার্ডসন শেষ দিকে সরে এলেন আগের ভাবনা থেকে। তিন সপ্তাহ পরই বিষয়টি প্রমাণও করে ছাড়ল অস্ট্রেলিয়া। ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জেতে অস্ট্রেলিয়া। সেই সিরিজে রিচার্ডসন হেলমেট পরার পর ক্যারিবীয় ক্রিকেট আর কখনো আগের মতো হয়নি। বিশেষ করে ঘরের বাইরে।

রিচার্ডসনের সেই হেলমেট পরার ২৫ বছর পূর্তি আজ।