করোনার মধ্যে দৌড়াদৌড়ি, গুরুর ওপর বিরক্ত শিষ্য

ট্যাঙ্গয় এনদোমবেলে। ছবি: টুইটার
ট্যাঙ্গয় এনদোমবেলে। ছবি: টুইটার
>

আগামী মৌসুমে দলে আনার জন্য টটেনহামের এক মিডফিল্ডারকে বেশ মনে ধরেছে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার

গত মৌসুমে অলিম্পিক লিওঁর হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ফরাসি মিডফিল্ডার ট্যাঙ্গয় এনদোমবেলে।

দুর্দান্ত খেলা এই মিডফিল্ডার নজরে পড়েছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজির মতো ক্লাবগুলোর। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়ে ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ডে এনদোমবেলেকে দলে ভেড়ায় ইংলিশ ক্লাব টটেনহাম হটস্পার। তাদের সাবেক কোচ মরিসিও পচেত্তিনো এনদোমবেলের বড় ভক্ত ছিলেন। মিডফিল্ড-সমস্যা মেটাতে তাই এনদোমবেলের পেছনে এত টাকা ঢালতে বিন্দুমাত্রও কার্পণ্য করেননি এই আর্জেন্টাইন কোচ। এনদোমবেলে নিজেও লন্ডনে ‘রাজত্ব’ কায়েম করার উদ্দেশ্যে সাত-পাঁচ না ভেবেই যোগ দেন টটেনহামে।

কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে তার কিছুদিন পর থেকেই। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলা দলটা নতুন মৌসুমের শুরুতেই ফর্ম হারিয়ে বসে।লিগ অভিষেকে গোল করা এনদোমবেলেও চোটে আক্রান্ত হয়ে মাঠের বাইরে চলে যান। টটেনহামের ফর্ম হারানোর সবচেয়ে বড় খেসারত দেন কোচ পচেত্তিনো। ছাঁটাই হতে হয় তাঁকে। তাঁর জায়গায় দলে আসেন কিংবদন্তি পর্তুগিজ ম্যানেজার হোসে মরিনহো। এনদোমবেলের কপাল খারাপ, এই পর্তুগিজ ম্যানেজার মোটেও তাঁর ভক্ত নন।

মৌসুমের শুরু থেকেই এনদোমবেলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার জন্য যেমন শারীরিক সক্ষমতা থাকার দরকার আপাতত তেমনটা নেই এনদোমবেলের। এই মিডফিল্ডার সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে বসে থেকে আক্রমণ করতে যেমন পারদর্শী, রক্ষণে তেমন আগ্রহ নেই তাঁর। অথচ মরিনহোর দলে খেলতে হলে আক্রমণের চেয়ে রক্ষণকাজেই বেশি পটু থাকতে হয় খেলোয়াড়দের। গোল করা হোক বা না হোক, দল যেন গোল একদমই না খায়, সে ব্যাপারে মরিনহো থাকেন সদা সতর্ক। মরিনহোর শিষ্যদের তাই গোটা নব্বই মিনিট আক্রমণ থেকে রক্ষণ, রক্ষণ থেকে আক্রমণে যন্ত্রের মতো দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। আর এই পরীক্ষাতেই আপাতত ‘ফেল’ মেরেছেন এনদোমবেলে। ফলে মরিনহো দায়িত্বে আসার পর এনদোমবেলে সুস্থ থাকলেও দেখা গেছে বহু ম্যাচেই মূল একাদশে নামানো হয়নি এই ফরাসি তারকাকে। ফলে মরিনহোকে নিয়ে একটু হলেও মনে মনে অসন্তুষ্ট ছিলেন এনদোমবেলে।

সে অসন্তুষ্টি আরও বেড়েছে কিছুদিন আগে। করোনাভাইরাসের কারণে খেলাধুলা এখন সব বন্ধ। খেলার চেয়ে প্রাণ বাঁচানো ফরজ, এই নীতি মেনে বাকি সবার মতো খেলোয়াড়েরাও ঘরবন্দী করে রেখেছেন নিজেদের। নিজেদের ফিট রাখার জন্য অনুশীলন সারছেন ঘরে বসেই। এনদোমবেলেও তাঁর ব্যতিক্রম নন। সেদিন ঘরোয়া অনুশীলন শেষ করে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন, এমন সময় মরিনহো হুট করে চলে আসেন তাঁর বাসার নিচে, কলিং বেল বাজান এনদোমোবেলের বাসার। ইন্টারকমে এনদোমবেলে দেখতে পান, নিচে নেমে অনুশীলন করার কথা বলছেন মরিনহো! ‘তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসো, চলো আমরা দৌড়াদৌড়ি করে আসি কিছুক্ষণ’—মরিনহোর উক্তি!

করোনাভাইরাসের কারণে যেখানে সবাই সংক্রমণ এড়াতে বাসায় অবস্থান করছেন, সেখানে নিজের কোচের এই পাগলামি ভালোভাবে নেননি এনদমোবেলে। যদিও মনমরা হয়ে ঠিকই অনুশীলন করতে হয়েছে আরও দুই সতীর্থ রায়ান সেসেনিওন ও ডেভিনসন সানচেজের সঙ্গে। তাঁদের ভাগ্যও এনদোমোবেলের মতোই, মরিনহোর আস্থা এখনো অর্জন করতে পারেননি তাঁরা, মরিনহোর অধীনে টটেনহামের মূল একাদশের খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের জায়গা পাকা করতে পারেননি।

অবস্থা এমন চলতে থাকলে টটেনহামে আর থাকবেন না বলে নিজের এজেন্টকে জানিয়ে দিয়েছেন এনদোমবেলে। পুরো ঘটনাটাই ফাঁস করেছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপ। আর এই সুযোগটাই নিতে চাইছে বার্সেলোনা। আর্তুরো ভিদাল-সার্জিও বুসকেটস বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন, ফর্মহীন ইভান রাকিতিচ যেকোনো মুহূর্তে ক্লাব ছাড়তে পারেন, ফলে মেসিদের নতুন মিডফিল্ডার লাগবেই। আর সে কারণেই এনদোমবেলেকে দলে আনার ব্যাপারে আবারও আগ্রহী হয়ে উঠেছে তাঁরা।

বার্সা কি পারবে মরিনহোর ‘কবল’ থেকে এনদোমবেলেকে উদ্ধার করতে?