ওই কাজটা করার পরিকল্পনা আগেই করে রেখেছিলেন নেইমার

এভাবে উদ্‌যাপন করবেন, আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন নেইমার। ছবি: নেইমার ইনস্টাগ্রাম
এভাবে উদ্‌যাপন করবেন, আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন নেইমার। ছবি: নেইমার ইনস্টাগ্রাম
>

ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে প্যারিসের দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে সেদিন দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকার আর্লিং ব্রট হরলান্ডকে নকল করে ‘ধ্যানে’র ভঙ্গিতে উদ্‌যাপন করেছিলেন নেইমার। সমালোচনাও হয়েছিল অনেক

ঘটনাটা কয়েক সপ্তাহ আগের। করোনাভাইরাসের প্রকোপ তখন ধীরে ধীরে। ফুটবল চলছে, তবে চূড়ান্ত সতর্কাবস্থায়, দর্শকশূন্য মাঠে। এমনই অবস্থায় এক কাণ্ড ঘটালেন নেইমার।

গত তিন বছর ধরেই চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে এগোতে পারেন না নেইমাররা। এবার সেই গেরো কাটিয়েছিল পিএসজি। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল প্যারিসের দলটা। দুই লেগে ডর্টমুন্ডকে ৩-২ গোলে হারানোর পথে শেষ লেগে একটি গোল করেছিলেন ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় এই তারকা। গোলটা করেই ‘ধ্যানমগ্ন ঋষি’র মতো মাঠের মধ্যে বসে উদ্‌যাপন করলেন নেইমার। ব্যস, সমালোচনা শুরু হয়ে গেল।

সমালোচনা কেন? একটু খোলাসা করে বলা যাক। গোল করার পর ‘ধ্যানমগ্ন ঋষি’ হয়ে বসে থাকাটা মূলত ডর্টমুন্ডের ১৯ বছর বয়সী স্ট্রাইকার আর্লিং ব্রট হরলান্ডের ‘ট্রেডমার্ক’ উদ্‌যাপন। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ডর্টমুন্ড যখন পিএসজিকে ২-১ গোলে হারায়, জোড়া গোল করেছিলেন হরলান্ড। করেই ওই উদ্‌যাপনটা করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে নেইমারের উদ্‌যাপনটা এক দিক দিয়ে হরলান্ডের নকল। শুধু সেটা করেই ক্ষান্ত হননি নেইমার। নিজেদের হাতে ডর্টমুন্ডের বিদায় যখন নিশ্চিত হলো, গোটা স্কোয়াড নিয়ে মাঠের মধ্যে এই উদ্‌যাপনটা করেছিলেন নেইমার।

ম্যাচের পরে জানা যায়, স্ন্যাপচ্যাটে হরলান্ডের এক পোস্ট দেখে বিরক্ত হয়েছিলেন নেইমার। যে কারণে গোটা দল নিয়ে ম্যাচ শেষে ওই উদ্‌যাপন করেছেন নেইমার।

কী ছিল সেই পোস্টে? ডর্টমুন্ডের জাম্পার পরা হরলান্ড নিজের একটা ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘প্যারিস, শহরটা আমার, তোমাদের নয়।’ ব্যস, আগুনে সলতে পড়ল যেন!

গোল করে ম্যাচ জেতানোর পর নেইমার আবার নিজের উদ্‌যাপনের ছবি ইনস্টাগ্রামেও দিয়েছিলেন। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘প্যারিস আমার শহর, তোমার নয়।’ ফলে সবাই সমালোচনা করা শুরু করে, হরলান্ডকে খোঁচাতেই অমন উদ্‌যাপন করেছেন নেইমার, কানাঘুষা শুরু হয়। পিএসজির অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের খেলোয়াড়েরা, বিশেষ করে হরলান্ডের চেয়ে আট বছর বেশি বয়সী নেইমার কীভাবে এমন বাচ্চাসুলভ আচরণ করতে পারেন, ভেবে বের করতে পারেননি অনেকেই। গ্যারি লিনেকারই যেমন। সাবেক এই ইংলিশ স্ট্রাইকার নেইমারের ওই ভিডিও দেখে টুইট করেছিলেন, ‘খুবই মানহীন একটা কাজ!’

এত দিন পর এসে জানা গেল, খুব ভেবেচিন্তে আগে থেকে পরিকল্পনা করেই অমনটা করেছিলেন নেইমার! আর নেইমারের এই পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দিয়েছেন তাঁর পিএসজি ও ব্রাজিল সতীর্থ মার্কিনিয়োস। নেইমার যে কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না, সেটারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল এই ডিফেন্ডারের কণ্ঠে, ‘নেইমার শুধু একজন ফুটবল খেলোয়াড়ই নয়। ওকে উত্ত্যক্ত করা হলে ও সমুচিত জবাব দেবেই। ও এটা করতে পছন্দ করে।’ ইউটিউব চ্যানেল দেসিম্পেদিদোসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিনিয়োস আরও বলেছেন, ‘গোল করার পর ওর উদ্‌যাপন দেখে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে উদ্‌যাপন শেষ হয়েছে কী না। ম্যাচটা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললাম। কিন্তু ও মানল না। সবাইকে ওরকম উদ্‌যাপন করতে বলল।’

যদিও নেইমারের ওই পোস্টের পর জানা যায়, এত পরিকল্পনা করে নেইমার যা দেখে ‘উত্ত্যক্ত’ হয়ে উদ্‌যাপনটা করলেন, সে পোস্টটাই নকল। ইউরোপের অনেক সংবাদমাধ্যম ‘অনুসন্ধানী’ খবর বের করেছিল, হরলান্ডের স্ন্যাপচ্যাট অ্যাকাউন্টই নেই! অর্থাৎ, হরলান্ডের যে পোস্টটা নেইমারদের খোঁচা মারার কারণ, সেটি হরলান্ড করেননি। হরলান্ডের ছবিটা নকল নয়, কিন্তু স্ন্যাপচ্যাটে যে পিএসজিকে নেইমারদের নয়, তাঁর শহর বলে দাবি জানিয়ে ক্যাপশনটি লিখেছেন, সেটি হরলান্ড লেখেননি!