লকডাউনে ব্যাটিং শিখলেন ব্রাজিলিয়ান মডেল

ব্যাটিং শিখছেন কোকো কুনিয়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ব্যাটিং শিখছেন কোকো কুনিয়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
>

লকডাউনের সময় ব্রাজিলিয়ান বান্ধবীকে দুই সপ্তাহেই ব্যাটিং শিখিয়ে ফেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট কোচ জো কোলুচ্চি

সঙ্গদোষে লোহা ভাসে! কথাটার মানে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কোকো কুনিয়া। কুনিয়ার বাড়ি ব্রাজিল, পেশা মডেলিং। ব্রাজিল ফুটবলের দেশ। পেলে-গ্যারিঞ্চা-রোনালদোদের দেশের কত শতাংশ মানুষ ক্রিকেট খেলার নাম জানেন সেটি একটি প্রশ্ন বটে। সেই দেশের মেয়ে কিনা দিব্যি পুল, কাট, ড্রাইভ করে যাচ্ছেন।

কুনিয়া যে ব্যাটিং শিখেছেন, তাতে বড় অবদান করোনাভাইরাসের! ব্রাজিলিয়ান মডেলকন্যা এখন বন্ধু জো কোলুচ্চির সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে বাস করছেন। অন্যান্য দেশের মতোই করোনায় থমকে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার জীবনযাত্রাও। ২১ দিনের লকডাউন চলছে দেশটিতে। বেকার এই সময়েই ক্রিকেট কোচ বন্ধুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন কুনিয়া—‘পারলে ক্রিকেট শেখাও’। কী ভুলটাই না করেছিলেন কুনিয়া! এখন যে প্রতিদিনই নিয়ম করে ২৫ মিনিট ক্রিকেট ক্লাস করতে হচ্ছে। আসল ক্রিকেট বলে নয়, কুনিয়া ব্যাটিং করছেন টেনিস বলে।

ব্রিটেনের দ্য মেইল অন সানডেকে গত পরশু কুনিয়া বললেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা, ‘আমি মজা করেছিলাম। সে কিনা এটাকে এত গুরুত্ব দিয়ে ফেলল। আমি মনে মনে বলছিলাম ও খোদা, আমি কিসের মধ্যে পড়ে গেলাম।’

এর পর থেকে প্রতিদিনই কুনিয়াকে ব্যাটিং শিখতে হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে ক, খ শেখা শেষ। কুনিয়া এখন সহজেই ড্রাইভ, কাট, পুলও করতে পারছেন। তাঁর বন্ধু কোলুচ্চি কেপটাউনের একটি ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান টম ওয়েস্টলি, কাউন্টি দল ডার্বিশায়ারের অধিনায়ক বিলি গডলম্যান ও টম ও স্যাম কারেনের ভাই বেন কারেন কোলুচ্চির ছাত্র।

এবার যে ছাত্রকে পেলেন কোলুচ্চি তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার আগে ক্রিকেট নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না। এই নামে যে একটি খেলা আছে সেটিই জানা ছিল না কুনিয়ার। সেই মেয়ে জানালেন এখন উপভোগ করতে শুরু করেছেন ক্রিকেটকে, ‘শুরুতে মনে হতো আমি কেন এটা (ক্রিকেট অনুশীলন) করছি। প্রথম দিনটাই সবচেয়ে বাজে ছিল। ব্যাট কীভাবে ধরতে হয়, কীভাবে দাঁড়াতে হয় কিছুই জানা ছিল না আমার। ভাবছিলাম কী বিরক্তিকর একটা ব্যাপারেই না জড়িয়ে গেলাম! তবে যখনই বলটাকে মারতে শুরু করলাম, তখন থেকেই একটু মজা পেতে শুরু করলাম। বল পেটাতে এতই ভালো লাগে যে মাঝে মাঝে মনে হয় ব্যাটই ভেঙে ফেলি। কিন্তু জো (কোলুচ্চি) আমাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে বলে।’

নতুন শিষ্যকে নিয়ে কোলুচ্চিও খুব উচ্ছ্বসিত, ‘অনেক উন্নতি হয়েছে তাঁর। সে যে পারবে তা নিয়ে কখনোই আমার সংশয় ছিল না তবে সে ধারণার চেয়েও দ্রুত উন্নতি করেছে। সে কী চমৎকারভাবেই না ড্রাইভ করতে পারছে!’ কুনিয়ার ব্যাটিং অনুশীলনের ভিডিও প্রতিদিনই ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন কোলুচ্চি।

ক্রিকেট শেখা নিয়ে কি দুজনের তর্কাতর্কি হয়, নেতিবাচক উত্তরই দিলেন কুনিয়া, ‘না! এখনো হয়নি। মাঝে মাঝে সে বলে এভাবে করো, আমি বলি ‘‘আমি তো ঠিকভাবেই করছি’। কিন্তু সে বলে ‘‘না ঠিক হচ্ছে না’’। আমি একটু জেদি স্বভাবের। মাঝেমধ্যেই মনে হয়ে ওকে মেরে ফেলতে পারলে ভালো হতো!’

এখন পুলও করতে পারেন কোকো। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
এখন পুলও করতে পারেন কোকো। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

১৪ বছর বয়স থেকে মডেলিং করছেন কুনিয়া। ৩১ বছর বয়সী মেয়ে স্নাতক করেছেন সাংবাদিকতায়। সাও পাওলোয় একটি সংবাদমাধ্যমে কিছুদিন কাজও করেছেন। এখন ব্রাজিলিয়ান খাবারের ব্যবসাও করছেন। ছয় বছর আগে কেপটাউনের এক পার্টিতে পরিচয় কুনিয়া ও কোলুচ্চির। বোনকে দেখতে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছিলেন কুনিয়া। দেড় বছর পর বোনের বিয়েতে যোগ দিতে আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় আসেন কুনিয়া। সেখানেই আবারও দেখা কোলুচ্চির সঙ্গে। এরপর থেকে দুজন একসঙ্গেই আছেন।

ক্রিকেট কতটা বিরক্তিকর ছিল কুনিয়ার কাছে সেটির একটি উদাহরণ দিয়েছেন কোলুচ্চি, ‘দুই বছর আগে ওকে নিয়ে নিউল্যান্ডসে টেস্ট ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলাম। হাশিম আমলার আর্মির অংশ হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। ঝলমলে পোশাক পরে বিয়ার খাচ্ছিলাম। আধঘণ্টা পরেই তাঁর বিরক্তি ধরে গেল, বলল আমি বাড়ি গেলাম।’

ক্রিকেটে বিরক্ত সেই মেয়েকেও কী সহজে ব্যাটিং শিখিয়ে ফেললেন কোলুচ্চি। কীভাবে ব্যাট ধরলে ভারী ব্যাটকেও হালকা মনে হবে তাও শেখানো সাড়া। ‘এত ভারী ব্যাট দিয়ে কীভাবে মারব’—শুরুতে তাই ভাবছিলেন কুনিয়া। সেই কুনিয়া এখন কী সহজেই না পিটিয়ে যাচ্ছেন বল।

তবে কি এবার মেয়েদের ক্রিকেটেও নাম খেলাবেন কুনিয়া? কোলুচ্চি জানালেন এমন কোনো ইচ্ছে নেই তাঁর বান্ধবীর, ‘সত্যি বলতে ও রকম কোনো ইচ্ছে নেই। এটা মূলত মানুষকে এটাই জানানো দেখ কাজটা কত সহজ। ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে যার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না সে-ই যদি পারে তবে যে কেউই পারবে।’