স্ত্রী কাছে থাকলে ভালো লাগত

আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অণুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো

জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। ছবি : প্রথম আলো
জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। ছবি : প্রথম আলো

করোনাভাইরাস আতঙ্কে জাতীয় দল ও ঘরোয়া লিগ স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরই বাড়ি আসার জন্য খুব আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। সৌভাগ্য ক্রমে শেষ সময়ে পাওয়া টিকিটে থাইল্যান্ড হয়ে ২৫ মার্চ ডেনমার্কে পৌঁছাই। এখন মা-বাবার সঙ্গে বাড়িতেই আছি। বউ জার্মানিতে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে আছে।

খেলা না থাকলেও প্রতিদিন দুই বেলা অনুশীলন করছি। সকালে বাসায় জিম আর বিকেলে মাঠে বল নিয়ে অনুশীলন। তবে এই সময়ে অতিরিক্ত অনুশীলন করছি না। কবে থেকে খেলা শুরু হবে ঠিক নেই। এখন বেশি অনুশীলন করলে খেলা শুরু হওয়ার আগেই ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি। সুনির্দিষ্ট সূচি জানা না থাকলে পরিমিত অনুশীলন করাই ভালো।

ঘুম থেকে উঠতে উঠতেই সকাল ৯ টা বেজে যায়। নাশতা সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে জিমে ঢুকি। ঘণ্টা খানিক সময় কাটে সেখানে। দুপুরের খাবারের পর টিভি দেখি। এখানে রাত ১০টায় সূর্য ডুবে বলে বিকেলের অনুশীলনটা একটু দেরি করে করি। মাঠে যেতে যেতে ৫টা-৬টা বেজে যায়। বাসা থেকে মাঠে যেতে মাত্র ৫ মিনিট লাগে। অনুশীলন শেষ করে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে সাড়ে ৮টা প্রায়।

করোনার কারণে ডেনমার্কের অবস্থাও খুব ভালো নয়। তবে কোপেনহেগেনের বোর্নলিতে আমরা যে এলাকায় থাকি, সেখানকার অবস্থা এখনো মোটামুটি ভালো। আগের মতো রাস্তা ঘাটে বেশি মানুষ দেখা যায় না। তবে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে। দোকান-পাটও খোলা থাকে কিছু। স্থানীয় ছেলেরা তো মাঠে এসে বিকেলে খেলছেও। আমি তাদের সঙ্গেই অনুশীলন করি।

ক্লাব ও জাতীয় দলের কোচের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয়। জেমির সঙ্গে তো প্রতিদিনই কথা বলতে হয়। সে আমার খুব ভালো বন্ধুও। পারিবারিক বিষয়েও কথা হয় আমাদের। ও প্রতিদিনই মনে করিয়ে দেয়, কোনো ভাবেই যেন ওজন না বাড়ে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিয়মিত আলোচনা চলে অনুশীলনের ব্যাপারে।

ঢাকায় অবসরে ছবি আঁকতাম। ডেনমার্কে এসে ছবি আঁকা হচ্ছে না। ছবি আঁকার কোনো উপকরণই তো সঙ্গে আনতে পারিনি! একেবারেই শেষ মুহূর্তে হুট করে ক্লাবের কাছ থেকে ছুটি পাওয়ায় কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়া ডেনমার্কে চলে এসেছি। বিমানের টিকিটটাও পেয়েছিলাম ভাগ্যক্রমে। আগের দিন রাতেও নিশ্চিত ছিলাম না আমি ফ্লাইট পাচ্ছি।

অবসর সময়টাতে বাড়িতে থাকতে পেরে ভালো লাগছে। ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলছি আর ঘরোয়া লিগে খেলা শুরু ২০১৪ সালে। এর পর থেকে পরিবারের সঙ্গে তেমন থাকাই হতো না। এবার এই সুযোগে বাবা-মা ও ভাইদের সঙ্গে অনেক সময় কাটাতে পারছি। তাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে অনেক খোঁজ খবর জানতে চান, সেসব কৌতূহল মেটাই। খবরে বাংলাদেশের কোনো খারাপ কিছু দেখলে তাঁরা খুব হতাশ হন। অমার সঙ্গে আলাপ করেন।

আমরা কেউই এ রকম অবসর চাই না। তবে সেটা যখন এসেই গেল, স্ত্রী কাছে থাকলে ভালো লাগত। সে জার্মানিতে, ফোনেই খোঁজ খবর রাখি। স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ খবর নিতে হয়। করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তাটা বাদ দিলে সময়টা হয়তো খারাপ যাচ্ছে না। তবে মাঠে খেলা না থাকলে কোন খেলোয়াড়েরই বা ভালো লাগে!