মনোবল হারানো যাবে না

মাবিয়া আক্তার। ছবি : প্রথম আলো
মাবিয়া আক্তার। ছবি : প্রথম আলো
>

আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অণুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো

তখনো দেশে লকডাউন শুরু হয়নি। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছিল, মনে হচ্ছিল পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাবে। ১৭ মার্চ থেকে তাই আর ঘর থেকে বের হচ্ছি না। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লুডু খেলাটা এখন আমার দৈনন্দিন রুটিনের একটা অংশ হয়ে গেছে। বাবা-মা, ভাই বোনদের নিয়ে লুডু খেলতেই হবে। সকালে ও বিকেলে হালকা অনুশীলন করি। বার্বেল তো নেই; তাই হালকা ব্যায়াম, ইয়োগা এসব করি।

এমনিতে তো খুব বেশি বাসায় থাকতে পারি না। বেশির ভাগ সময় ক্যাম্পে থাকতে হয়। হঠাৎ পাওয়া ছুটিতে তাই সুযোগ পেলেই রান্না করছি। ভাত, ডাল, তরকারি রান্নার চেয়ে বিশেষ কিছু তৈরি করতেই বেশি আনন্দ লাগে। পুডিং, কেক এসব বানাই। সবাইকে নতুন রেসিপি খাওয়াই। জিজ্ঞাসা করি, ‘কেমন হয়েছে?’

কখনো বেশি একঘেয়েমি লাগলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢু মারি। বন্ধুদের খোঁজখবর নিই। নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষদের সাহায্যের নামে অনেকে ফটোসেশন করছে। ফেসবুকে এসব দেখে খারাপ লাগে। কাউকে সাহায্য করলে সেটা এভাবে প্রচার করতে হবে কেন!

খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একদমই ঘর থেকে বের হচ্ছি না আমি। বাইরে গেলেও সব রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বের যাই। ঘরে সময় কাটাতে সিনেমাও দেখি। আমার ভালো লাগে ভূতের ছবি দেখতে। এ ছাড়া ঐতিহাসিক ও সত্য ঘটনা নিয়ে সিনেমা, খেলাধুলা বিষয়ক সিনেমাও দেখা হয়। কদিন আগে নতুন করে দেখলাম আমির খানের দঙ্গল, সালমান খানের সুলতান।

টিভিতে খেলাধুলা খুব একটা দেখি না। তবে ইউটিউবে নিজের খেলার ভিডিও দেখি। বিভিন্ন সময়ের বিশ্ব ভারোত্তলন চ্যাম্পিয়নশিপের ভিডিওগুলোও দেখা হয়। অনেক কিছু শেখার থাকে ভিডিওগুলোতে। বিশেষ করে শেষ দিকের লিফটগুলো কীভাবে তুলতে হয়, সেসব ভালোভাবে শিখি।

বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে অনেক সময় নিজে খেলেছি, কিন্তু অন্য গ্রুপে থাকায় হয়তো চ্যাম্পিয়নদের খেলা দেখতে পারিনি। একবার থাইল্যান্ডে গিয়ে এমনটা হয়েছিল। খেলা শুরুর একদিন আগে থাইল্যান্ডে পৌঁছালাম। পরদিন খেলায় অংশ নিয়ে পরের দিনের ফ্লাইট ধরেই দেশে ফিরতে হয়েছিল। ওই চ্যাম্পিয়নশিপের সবটুকু ভিডিও দুদিন আগে ইউটিউবে দেখলাম।

আমি মাদারীপুরের মেয়ে। ওই এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বেশি। গ্রামে যে সব আত্মীয়স্বজন আছেন তাদের সঙ্গে নিয়মিত ভিডিও চ্যাটিং করি। সবার খোঁজখবর নিচ্ছি। ভারত ও নেপালে আমার কিছু বন্ধু আছে। ওদেরও খোঁজ নিচ্ছি।

আমরা খেলোয়াড়। আমরা কখনোই মনোবল হারাই না। করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়েও হাল ছাড়ছি না। মনোবল হারানো যাবে না। যদি আমরা সাবধান ও সচেতন হাই তাহলে হয়তো এই খারাপ সময় আর বেশি দিন থাকবে না। কিন্তু বোকার মতো আচরণ করতে থাকলে চাইলেও এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাব না।

আমরা সবাই ঘরে থাকব, এটাই এই মুহূর্তে শেষ কথা হওয়া উচিত। কিন্তু অনেকেই তা মানছে না। আইনশৃঙ্খলার লোক এলে এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়। তারা চলে গেলে আবার রাস্তায় নেমে আড্ডা দিচ্ছে মানুষ। আসলে আমরা চাইছি না বলেই হয়তো দেশে আক্রান্তের হার বাড়ছে। এখনই আমাদের সচেতন হওয়ার সময়।

অন্ধকারের শেষেই আলো জ্বলে। আমার বিশ্বাস এই অন্ধকার বেশি দিন থাকবে না। তবে তার একটিই শর্ত- আমাদের সচেতন হতে হবে।