নেইমারদের জন্য মূল্য হারাচ্ছেন যাঁরা

নিজেদের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের তেমন পরিচর্যা করেনি পিএসজি। ছবি : এএফপি
নিজেদের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের তেমন পরিচর্যা করেনি পিএসজি। ছবি : এএফপি
>২০১১ সালে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টের অধীনে চলে যাওয়ার পর থেকেই একের পর এক খেলোয়াড় কিনে গেছে পিএসজি। দলে এসেছেন নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো তারকারা

ইব্রাহিমোভিচ, থিয়াগো সিলভা, এডিনসন কাভানি, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পে, অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, ডেভিড লুইজ…

এরা সবাই ক্যারিয়ারের কোনো না কোনো সময়ে আকাশছোঁয়া দামে এসেছিলেন ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে। ২০১১ সালে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট যখন পিএসজির মালিকানা নিয়ে নেয়, তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দামি খেলোয়াড় দলে আনার এই ধারাটা ধরে রেখেছে প্যারিসের ক্লাবটি। অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে এই ধারাটা চলতেই থাকবে, বলে দেওয়া যায়।

কিন্তু বাইরের ক্লাব থেকে বেশি দামে খেলোয়াড় কেনার ফলে পিএসজি নিজেদের একাডেমির কত তরুণ খেলোয়াড়কে সুযোগ না দিয়েই বিক্রি করে দিয়েছে? হিসেব করে দেখলে তাঁদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনকে দেখে নেওয়া যাক, যারা পিএসজিতে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ না পেয়ে অন্য ক্লাবে আলো ছড়িয়েছেন, বা ছড়ানোর অপেক্ষায় আছেন!

মামাদু সাখো (সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার)
পিএসজি 'বড়লোক' হওয়ার ঠিক পরপর যেসব তারকার কপাল পুড়েছিল, তাঁর মধ্যে পিএসজির এই সাবেক অধিনায়ক অন্যতম। প্রতিভাবান এই সেন্টারব্যাক মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ক্লাবের অধিনায়ক হয়ে দেখিয়েছিলেন। কিন্তু থিয়াগো সিলভা, মার্কিনিওস, অ্যালেক্স, মিলান বিসেভাচদের 'দৌরাত্ম্যে' আর পিএসজিতে থাকা হয়নি তাঁর। পরে যোগ দেন লিভারপুলে। সেখানে বেশ কয়েক মৌসুম বেশ দাপটের সঙ্গেই খেলেছেন। এক সময় ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশমেরও ভরসার খেলোয়াড় ছিলেন। এখন খেলছেন ক্রিস্টাল প্যালেসে।

আলফঁস আরেওলা
একাডেমির এই গোলরক্ষকের ওপর ফরাসি ক্লাবটার তেমন আস্থাই ছিল না যেন। সুযোগ পেলেই অন্য ক্লাব থেকে গোলরক্ষক কিনে এনে আরেওলার সামনে 'চ্যালেঞ্জ' ছুঁড়ে দিত পিএসজি। বারবার সামনে আসা এত শত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও এক মৌসুম পিএসজির মূল গোলরক্ষক থাকতে পেরেছিলেন। শেষমেশ সালভাতোরে সিরিগু, জিয়ানলুইজি বুফন, কেভিন ট্রাপ, কেইলর নাভাসদের সঙ্গে না পেরে এই মৌসুমের শুরুর দিকে ধারে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছেন ফ্রান্সের হয়ে তিন ম্যাচ খেলা এই গোলকিপার।<pমাইক মাইগনান
বুফোন, সিরিগু, নাভাস, ট্রাপদের কারণে পিএসজিতে সুযোগ না পাওয়া আরেক গোলরক্ষক। গত পাঁচ বছর ধরে লিলের মতো ক্লাবে নিজের জাত চেনাচ্ছেন।

ইউসুফ সাবালি
প্রতিভাবান এই রাইটব্যাক সেনেগালের হয়ে গত বিশ্বকাপে খেলেছেন। অথচ পিএসজিতে জায়গা হয়নি তাঁর। তরুণ এই খেলোয়াড়ের জায়গায় গ্রেগরি ফন ডার উইল, টমাস মুনিয়ের, দানি আলভেসদের ওপর পিএসজি ভরসা করে গেছে বছরের পর বছর।

জোনাথান ইকোনে
গতিশীল এই উইঙ্গারও জায়গা পাননি পিএসজিতে। সুযোগ না পেয়ে ২০১৬ তে যখন ক্লাব ছাড়লেন, দলে ততদিনে তাঁর জায়গায় খেলার জন্য এসে গেছেন হাতেম বেন আরফা, হেসে রদ্রিগেজ, ইউলিয়ান ড্রাক্সলার, গনসালো গেদেস প্রমুখ। পরে তো নেইমার আর এমবাপ্পেই এসে গেলেন। অথচ সেই ইকোনে লিলে আলো ছড়িয়ে এখন ডাক পেয়েছেন ফ্রান্স দলে। আলবেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেকে গোলও করেছেন একটি।

জাঁ-কেভিন অগাস্তিন
নেইমার-এমবাপ্পেদের কারণে সুযোগ হারানো আরেক প্রতিশ্রুতিশীল স্ট্রাইকার। পিএসজি থেকে লাইপজিগে গেছিলেন, এখন আছেন মার্সেলো বিয়েলসার মতো কোচের অধীনে, লিডস ইউনাইটেডে। ফ্রান্সের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে ইউরোও জিতেছেন।

ওদসোনে এদোয়ার্দ
ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক দলগুলোর হয়ে গোলের বন্যা ছোটানো এই তারকা পিএসজিকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি কোনোভাবেই। ২০১৮ সালে স্কটিশ ক্লাব সেল্টিকে যোগ দিয়ে বজায় রেখেছেন গোল করার ধারা। ৬৬ ম্যাচে ৩৭ গোল তাঁর।

টিমোথি উইয়াহ
নামের শেষ অংশ দেখেই বুঝে যাওয়ার কথা, ব্যালন ডি'অর জয়ী কিংবদন্তি লাইবেরিয়ান তারকা জর্জ উইয়াহর ছেলে টিমোথি। বাবার মতো খেলেন স্ট্রাইকার হিসেবে। কিন্তু সুযোগ পাননি নেইমারদের সঙ্গে খেলার। জোনাথান ইকোনের মতো তিনিও নাম লিখিয়েছেন লিলে।

আদ্রিয়েন রাবিও
তালিকার বাকিদের তুলনায় যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। পিএসজিতে জায়গা হারিয়েছেন বিতর্কিত সব কাণ্ড করে। পিএসজিও 'দুষ্ট ছেলে' কে বেশিদিন ঘরে রাখতে চায়নি। দলে এনেছে অ্যান্ডার হেরেরা, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, ইদ্রিসা গেয়েদের। রাবিও এখন খেলছেন জুভেন্টাসে।

মুসা দিয়াবি
প্রতিভাবান এই ফরাসি উইঙ্গার খেলতে পারেন উইংব্যাক হিসেবেও। তাও টমাস মুনিয়েরকেই মূল রাইটব্যাক হিসেবে রাখার সিদ্ধান্তে অটল ছিল পিএসজি। জার্মান ক্লাব বায়ার লেভারকুসেন বুঝেছিল দিয়াবির মূল্য। ২০ বছর বয়সী এক স্ট্রাইকারের জন্য লেভারকুসেনের মতো ক্লাব ১৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করছে, এটুকু তথ্যই যথেষ্ট তাঁর প্রতিভা বোঝানোর জন্য।

ক্রিস্টোফার এনকুনকু
লেফট ব্যাক, লেফট উইংব্যাক, সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার – কোথায় না খেলতে পারতেন এনকুনকু! আর্সেনালের সাবেক কোচ উনাই এমেরি খুব করে চেয়েছিলেন পিএসজির আদর না পাওয়া এই ছেলেকে। পরে আর বি লাইপজিগে যোগ দেন এনকুনকু, ১৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে।

স্ট্যানলি এনসোকি
প্রতিভাবান এই সেন্টারব্যাকের সামনে বাধা ছিল প্রচুর। থিয়াগো সিলভা, মার্কিনিওস, থিলো কেহরার, আবদু দিয়ালো, প্রেসনেল কিমপেম্বে – এত শত তারকার ভীড়ে তরুণ এই সেন্টারব্যাক নজরেই পড়তেন না কোচ টমাস টুখেলের। সুযোগ বুঝে ১৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আরেক ফরাসি ক্লাব নিস তাই কিনে ফেলে তাঁকে।

এ তো গেল যারা এর মধ্যেই সুযোগ না পেয়ে পিএসজি ছেড়েছেন তাঁদের কথা। বর্তমানে পিএসজিতে থাকা মিডফিল্ডার আদিল আউচিচে, ডিফেন্ডার লোইক এমবে সো ও তাঙ্গো কাউয়াসি, রাইটব্যাক কলিন দাগবা – যেকোনো মূহুর্তে ওপরের তালিকায় যোগ দিতে পারেন। তরুণদের সুযোগ দেওয়ার ইচ্ছে এখনও যে সেভাবে জেগে ওঠেনি পিএসজির!