শচীনকে খোঁচাতে গিয়ে উল্টো লজ্জায় পড়েছিলেন সাকলাইন

মাঠে এক সময়ে দুরন্ত `শত্রুতা` ছিল দুজনের। ছবি : টুইটার
মাঠে এক সময়ে দুরন্ত `শত্রুতা` ছিল দুজনের। ছবি : টুইটার

ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের মনঃসংযোগে চিড় ধরানোর জন্য বোলাররা কত কিছুই না করেন।

অন্যতম জনপ্রিয় এক উপায় হচ্ছে 'স্লেজ' করা। অর্থাৎ উল্টোপাল্টা কথা বলে ব্যাটসম্যানের মনোযোগে ব্যাঘাত করা। যুগ যুগ ধরে এই কাজটা করছেন বোলাররা। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হওয়ার সুবাদে শচীন টেন্ডুলকারকেও এই 'ঝামেলা' কম পোহাতে হয়নি। শেন ওয়ার্ন থেকে ব্রেট লি, গ্রেন ম্যাকগ্রা থেকে অ্যান্ডি ক্যাডিক, আব্দুল কাদির কিংবা মঈন খান, ক্রেগ ম্যাকডারমট – সুযোগ পেয়ে শচীনকে দুটো কথা শোনাতে পিছপা হননি কেউই।

তার ফলও পেয়েছেন সুদে-আসলে। গোটা ক্যারিয়ারজুড়ে তাঁদের পিটিয়ে ছাতু বানিয়েছেন শচীন। ফলে 'স্লেজ' করা বোলাররা আফসোসে পুড়েছেন। যেমনটা পুড়েছেন সাবেক পাকিস্তানি অফ স্পিনার সাকলাইন মুশতাক।

গোটা ক্যারিয়ারে শচীনকে সাকলাইন বেশ কয়েকবার আউট করেছেন, শচীন নিজেও সাকলাইনকে কম পেটাননি। শচীনের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সাকলাইন নিজেই এমন এক ঘটনার কথা স্মরণ করেছেন গতকাল।

ঘটনাটা সেই ১৯৯৭ সালের। কানাডায় হচ্ছিল সাহারা কাপ। দলে নতুন আসা সাকলাইনের মনে হল, 'স্লেজ' করে শচীনের ইস্পাত-কঠিন মনঃসংযোগে চিড় ধরানো সম্ভব। তাই আক্রমণে এসেই শচীনকে কথা শোনানো শুরু করেন সাকলাইন, 'আমি নতুন নতুন ছিলাম। প্রথমবারের মতো শচীনকে স্লেজ করা শুরু করেছিলাম। স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে থাকে, এটা ছিল সাহারা কাপের ১৯৯৭ সালের আসর। আমার স্লেজিং শুনে শচীন এগিয়ে এল। আমাকে বলল, ''আমি তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছি না। তুমি কেন আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছ? আমি তোমাকে মানুষ ও খেলোয়াড় হিসেবে অনেক বড় মাপের মনে করি।'' আমি পরে এত লজ্জা পেয়েছি ওকে আর স্লেজ করার সাহস হয়ে ওঠেনি আমার। ওকে কী জবাব দেব, আমার মাথায় আসেনি।'

পরে শচীন ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেললেও মুখের লড়াইয়ে আর লড়তে যাননি সাকলাইন, 'পরে ও আমাকে অনেক ভালোভাবে খেলছিল। তা সত্ত্বেও আমি ওকে আর একটা কথাও বলিনি। উল্টো ম্যাচ শেষে আমি ওর কাছে ক্ষমা চাই।'

শুধু তাই নয়। সাকলাইনের বিখ্যাত 'দুসরা' ভালোভাবে খেলতে পারার জন্যেও শচীনকে সম্মান জানিয়েছেন এই পাকিস্তানি কিংবদন্তি। স্পিনারদের অস্ত্রভাণ্ডারে 'দুসরা' নিয়ে আসার জন্য অনেকে সাকলাইন মুশতাককে কৃতিত্ব দেয়। এই দুসরা দিয়ে কত ব্যাটসম্যানকে যে নাকানি-চুবাই খাইয়েছেন, তাঁর কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু শচীন সেই তালিকায় ছিলেন না, 'শচীনের দৃষ্টিশক্তি ঈশ্বর প্রদত্ত। সব ব্যাটসম্যানের দেখার ক্ষমতা আলাদা। কেউ কেউ তাড়াতাড়ি দেখতে পায়, কেউ পায় না। কিন্তু শচীনের দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা অসাধারণ। আমি যা-ই বল করতাম না কেন, সেটা সাধারণ অফস্পিন হোক বা দুসরা হোক কিংবা টপস্পিন, ওর পায়ের অবস্থান একদম নিখুঁত হতো। আরও দুজন ছিল এমন। রাহুল দ্রাবিড় আর মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন।'