লাগেজ আর কলসি দিয়ে ফিটনেসের কাজ করি

করোনাকাল কেমন কাটছে জানালেন রুমানা আহমেদ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
করোনাকাল কেমন কাটছে জানালেন রুমানা আহমেদ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>...আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো।

সময়টা খুব কঠিন, অস্বস্তিকরও। কাজকর্ম নেই। এত লম্বা সময় ধরে ঘরেও থাকা হয়নি কখনো। বিশেষ করে খেলায় নিয়মিত হওয়ার পর বাইরে বাইরেই কেটেছে বেশি। হুট করে এমন অবস্থা, মানিয়ে নেওয়া অনেক কঠিন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে অন্য কিছু করারও নেই। পুরো বিশ্বের দিকে দেখুন। সব জায়গায় একই পরিস্থিতি। কী অদ্ভুত, এখন তো নিরাপদ থাকতে হলে বন্দি থাকতে হবে!

আমার চিন্তা বেশি ফিটনেস নিয়ে। অনেকদিন চোটে আক্রান্ত ছিলাম। চোট থেকে ফিরে বিশ্বকাপ খেলেছি। ফিটনেস অর্জন করা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই কঠিন। সেটি হারিয়ে যেতেও বেশি সময় লাগে না। এই সময়ে তাই যতটা সম্ভব ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করছি। ফিটনেস মোটামুটি ঠিক থাকলে বাকিটা খেলা শুরু হলে দ্রুতই ঠিক করে নিতে পারব। তবে এটাও ঠিক, ঘরে বসে তো জিমের মতো ফিটনেসের সব কাজ করা যায় না। শুনতে হাস্যকর লাগলেও আমি লাগেজ, পানির কলসি, এসব ব্যবহার করছি ফিটনেসের কাজে।

ছোট থেকেই আমার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস। ঠিক ৫টায় উঠে যাই। কোনো দিন সকালেই ইয়োগার মতো ব্যায়ামগুলো সেরে নেই। আবার কোনোদিন পরেও করি। দিনের বাকি সময়টা একদমই স্বাভাবিক কাটে না। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেও বেশিক্ষণ স্বাভাবিক থাকা যায় না। কিছুক্ষণ পর পর খবর দেখা হয়। আর একটা জিনিস খুব করছি, ফেসবুকিং। জীবনে মনে হয় না এতো ফেসবুকিং করেছি! ফেসবুকে অনেক খোঁজ-খবর পাওয়া যায়। কে কোথায় কী অবস্থায় আছে, কি করছে।

সব খারাপ খবরের মধ্যেও একাটাই আশা- দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠুক। সমস্যা হলো এই ইতিবাচক মানসিকতাটার বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারি না। সময়টা কোনভাবেই পুরোপুরি ভালোভাবে কাটানো যাচ্ছে না। আমরা নিজেদের সান্তনা দিয়ে যাচ্ছি এই বলে যে, আমি তো ঘরে থাকছি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রতিদিনই তো কিছু মানুষ মারা যাচ্ছে!

ঘরে থাকায় একটা ভালো কাজ অবশ্য হয়েছে। আমি কখনো রান্নাঘরের ধারেকাছে ঘেঁষতাম না। এখন আমি আম্মাকে বলেছি, 'তুমি বিশ্রাম করো। এবার আমি কিছুদিন তোমাকে রান্না করে খাওয়াই। দেখ কেমন লাগে।' এর মধ্যে বেশ কিছু রেসিপিও শিখে গিয়েছি। মাছ-তরকারি রান্না তো আমার খুবই পছন্দের।

কিছুদিন ধরে ঘর-দোরও পরিস্কার করছি। ঘরোয়া অন্যান্য কাজ তো করছিই। এখন ঘরে থাকা মানেই তিনটি কাজ করা। ঘরের কাজ, রান্না করা আর মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকা। আগে পরিবারের সবাই মিলে এক সঙ্গে বসে খুব বেশি কথা বলা হতো না। আমি থাকতাম ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত। আমার ভাই দেশের বাইরে থাকে। সবাই যার যার মতো থাকাটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। করোনাভাইরাস জীবনের সে অংশটাও বদলে দিয়েছে। মোবাইল হাতে থাকলেও এখন আর আমি একা থাকি না। গ্রুপ চ্যাটে সবার সঙ্গেই নিয়মিত কথা হচ্ছে।

হাতে একেবারেই কিছু করার না থাকলে আগের খেলাগুলো মনে পড়ে। কিছুদিন আগে খেলে আসা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা মাথায় আসে। বিশ্বকাপ ভালো যায়নি আমাদের। বিষয়টা আমাকে খুব নাড়া দেয়। আমরা টুর্নামেন্টটা আরও ভালো খেলতে পারতাম। আমি বিশেষ কী করলে দলের আরও উপকার হতো, সেসব ভাবি। নিজের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি।

সময় এভাবেই কেটে যাচ্ছে। কবে আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কে জানে! যতটা পারি ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখতে চাই। কখনো পারি, কখনো পারি না। কিন্তু এরচেয়ে বেশি কিছু তো করারও নেই!