আজহারের চির আক্ষেপ '৯৯' ও '১৯৯'

এমন আক্ষেপ বয়ে বেড়াচ্ছেন আজহারউদ্দিন! ছবি: এএফপি
এমন আক্ষেপ বয়ে বেড়াচ্ছেন আজহারউদ্দিন! ছবি: এএফপি
>ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারি তো আছেই, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের ক্যারিয়ার বড় দুটি আফসোসে মোড়া। তাঁর ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ৯৯ টেস্টে। তাঁর সর্বোচ্চ টেস্ট সংগ্রহ ১৯৯!

 মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের নাম উচ্চারিত হলেই ক্রিকেটপ্রেমীরা একটু হলেও বিমর্ষ হয়ে পড়েন। ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারটা শেষ হয়েছিল কত বাজেভাবে! এ শতকের শুরুতে ক্রিকেট দুনিয়ায় ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারি যে ঝড় তুলেছিল, সে ঝড়েই নিজের ক্যারিয়ারের শেষ দেখেছিলেন ব্যাটিংয়ের এই নিপুণ শিল্পী। দুর্নীতির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ায় আজীবন নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন তিনি। গোটা নব্বইয়ের দশকের বেশিরভাগ জুড়ে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করা আজহার শেষ বিচারে একজন খলনায়কই প্রমাণিত হয়েছিলেন।  ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়ে পড়া আজহারের জীবনের বড় দুঃখ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে ক্রিকেটার আজহার তাঁর পরিসংখ্যানের দিকে তাঁকালে নিশ্চিত করেই হতাশার আগুনে পুড়বেন। ক্রিকেট ইতিহাসে আর কোন ক্রিকেটারের জীবনে '৯৯' ও '১৯৯' সংখ্যা দুটি এত নির্মম হয়ে উঠেছে?

 আজহারউদ্দিনের ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য। টেস্টে ১৯৮৪ সালে অভিষিক্ত হয়েই পরপর তিনটি সেঞ্চুরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। খুব তাড়াতাড়িই তিনি হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ। শচীন টেন্ডুলকারের আবির্ভাবের আগে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের বিজ্ঞাপনই ছিলেন এই আজহার। তবে ২০০০ সালে ৯৯টি টেস্ট খেলার  পর নিজের শততম টেস্টটি আর খেলতে পারেননি। ততদিনে ম্যাচ পেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে তাঁর নাম। এরপর নিষেধ্জ্ঞার কবলে পড়ে যাওয়ায় ৯৯টি টেস্ট খেলেই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে হয় তাঁর।

 ৯৯ টেস্টে ক্যারিয়ার আটকে যাওয়া আজহারউদ্দিনের সর্বোচ্চ টেস্ট স্কোর ১৯৯। ভাবা যায়! রবি রত্নায়েকে নামের এক শ্রীলঙ্কান পেসারের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে আজহারের কখনো দেখা হয়েছিল কিনা জানা নেই। তবে দেখা হলে আজহার নিশ্চয়ই তাঁকে নিজের দুঃখের কথা বলতেন।

১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কানপুর টেস্টে ১৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন আজহারউদ্দিন। তাঁকে এলবিডব্লু করে সেদিন কানপুরের দর্শকদের স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন দীর্ঘদেহী লঙ্কান পেসার রবি রত্নায়েকে।  ৫০৫ বল খেলে দ্বি শতকের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে সেদিন আজহারের জীবনে সে চরণটিই মূর্ত হয়ে উঠেছিল—এত কাছে তবু কত দূরে!

এর সাড়ে তিন বছর পর আজহার আবারও টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিশতকের প্রান্তে পৌঁছেছিলেন। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে অকল্যান্ডে তিনি আবারও ১৯২ রানে আউট হন। ১৯৯৩ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮২ রানের ইনিংসটিও আরেক আফসোস।

 আজহারউদ্দিন নামটাই যেন ক্রিকেটে এক বড় আফসোস, আর হাহাকার!