করোনার ভয়ে কোলের শিশুকে ছেড়ে মা...

কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার আগে স্বামী জ্যাসন ম্যাথট ও সন্তান প্যারিসের সঙ্গে কারিনা লেব্লাঙ্ক। ছবি: লেব্লাঙ্কের টুইটার অ্যাকাউন্ট
কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার আগে স্বামী জ্যাসন ম্যাথট ও সন্তান প্যারিসের সঙ্গে কারিনা লেব্লাঙ্ক। ছবি: লেব্লাঙ্কের টুইটার অ্যাকাউন্ট

সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা মায়ের কোল। কিন্তু করোনাভাইরাস কী নির্মম! করোনার কারণে খালি হচ্ছে কত মায়ের ‍বুক। সন্তান হারাচ্ছে মায়ের কোল। নবজাতকের মায়ের করোনা উপসর্গ থাকলে মা ও সন্তানকে অদৃশ্য নাড়ির টান উপেক্ষা করে থাকতে হচ্ছে আলাদা।

কানাডার সাবেক গোলরক্ষক কারিনা লেব্লাঙ্ককে এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। গত ২৪ মার্চ তাঁর কোল আলো করে জন্ম নেয় কন্যাসন্তান প্যারিস। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন ৪০ বছর বয়সী সাবেক এ গোলরক্ষক। হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভোগায় শ্বাসকষ্টের সঙ্গে লড়তে হচ্ছিল দেশের হয়ে ১১০ ম্যাচ খেলা লেব্লাঙ্ককে।

লেব্লাঙ্ক তাই সপ্তাহখানেক পরই ফিরে যান হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান, চিকিৎসাসেবা নেওয়ার সময় কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে তাঁর শরীরে। এ কারণে 'কোয়ারেন্টিন'-এ (সঙ্গনিরোধ) থাকতে হবে। তখন লেব্লাঙ্কের অবস্থাটা একবার বোঝার চেষ্টা করুন। বাসায় সদ্যজাত সন্তান, তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দূরে থাকতে হবে সবচেয়ে আপনজনকে। মা!
সেই কঠিন সময় নিয়ে বিবিসিকে লেব্লাঙ্ক বলেন, 'তাকে দেখতে পাব না, ধরতে পারব না দুই সপ্তাহের জন্য। এটা ছিল আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন। সবে ওকে জন্ম দিয়েছি, একটু কোলে নিতে মনটা ছটফট করত।'

কোয়ারেন্টিন থেকে ফেরার পর প্যারিসের সঙ্গে লেব্লাঙ্ক। ছবি: লেব্লাঙ্কের টুইটার অ্যাকাউন্ট
কোয়ারেন্টিন থেকে ফেরার পর প্যারিসের সঙ্গে লেব্লাঙ্ক। ছবি: লেব্লাঙ্কের টুইটার অ্যাকাউন্ট

২০১৫ সালে অবসর নেওয়া লেব্লাঙ্ক পেশাদার ফুটবল খেলেছেন ১৮ বছর। পাঁচ বিশ্বকাপে খেলার পাশাপাশি ব্রৌঞ্জ পদক জিতেছিলেন লন্ডন অলিম্পিকে। উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসে পানির উপস্থিতির কারণে এমনিতেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতালে যাওয়ার সে সময়টুকু স্মরণ করলেন লেব্লাঙ্ক, 'বাচ্চারা যেভাবে আঙুল ধরে থাকে, প্যারিস সেভাবেই আমার আঙুল ধরে ছিল। হাসপাতালে যাওয়াটা ছিল ভীষণ কঠিন। মনের মধ্যে তখন ভালো-মন্দ চিন্তার ঝড়। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, এটাই কী শেষ!'

হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে থাকতে 'কাঁচের দরজার ওপাশ থেকে' সন্তানকে দেখেছেন লেব্লাঙ্ক। 'দিনে প্রায় ৪০বার' সরাসরি সন্তানের মুখ দেখতে পেয়েছেন তিনি।কোয়ারেন্টিনের এ সময় লেব্লাঙ্ককে স্বাভাবিক রাখতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভিডিওবার্তায় তিনি কথা বলেছেন সাবেক সতীর্থদের সঙ্গেও। এ সময় সন্তান থেকে দূরে থাকা নিয়ে কোনো কথা তোলেনি তাঁর সতীর্থরা। লেব্লাঙ্ক বর্তমানে ধারাভাষ্যকার।

কোয়ারেন্টিনে থাকার সময়কে খেলার মতো করেই ব্যাখ্যা করলেন তিনি, 'বাজে খেলাটা অ্যাথলেটদের জন্য সবচেয়ে কষ্টের। গোলরক্ষক হলে গোল হজম করা। তবে একটা ব্যাপার বুঝতে পারলাম, এটা ছিল জীবন-মরণের খেলা। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর আপনি কিছু বোঝার আগেই তাকে ভালোবেসে ফেলবেন।(ফিরে এসে) তাকে কোলে নেওয়ার অনুভূতিটা বিশ্বকাপ কিংবা অলিম্পিক ম্যাচে খেলার চেয়েও ভালো।'

কোয়ারেন্টিন থেকে ফেরার পর প্যারিসের সঙ্গে একটি ভিডিও টুইটারে ছেড়েছেন লেব্লাঙ্ক। সেখানে তিনি লিখেছেন, 'ওর জন্যই আমার মুখে হাসি। আমার গানও সে পছন্দ করে, সম্ভবত ‍পৃথিবীতে একমাত্র মানুষ। নিজের এ হাসিখুশি মুহূর্তটুকু সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইলাম। আজ হাসিখুশি থাকার একটি কারণ বের করুন।'