জীবন বলতে রুম আর এক বেলা ঘাম ঝরানো

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-
ইসমাইল হোসেন। ফাইল ছবি
ইসমাইল হোসেন। ফাইল ছবি

টানা অনুশীলন, খেলা আর বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চাকুরির সুবাদে সারা বছরই ব্যস্ত থাকি। মাঝে মাঝে মনে হতো একটু হয়তো ছুটিরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু এখন এমন ছুটি পেয়েছি, যা আমি কেন, কেউই কখনো চেয়েছে বলে মনে হয় না।

আগের মতো ব্যস্ততা নেই ঠিকই, কিন্তু এ এমন এক ছুটি, যাতে ইচ্ছে মতো বা প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু করার সুযোগ নেই। শাহিনবাগের বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাটি থেকে শেষ বের হয়েছিলাম গত মাসের ১৮ তারিখে। এর পরে জীবন বলতে রুম আর এক বেলা মাঠে গিয়ে ঘাম ঝরানো। ডায়েরি লেখার যদি অভ্যাস থাকতোও, এছাড়া আর তেমন কিছু লেখার পেতাম না হয়তো।

খেলার কথা যদি লিখি, প্রায় দুই মাস হতে চলল ট্রাকে পা রাখি না। স্পাইক পায়ে দেই না। ঘাটির মধ্যেই ছোট জায়গায় কেডস পড়ে এক বেলা অনুশীলন করছি। অনুশীলন বলতে ওয়ার্মআপ, স্ট্রেচিং আর জিমে কিছু 'হাফ স্কোয়াড।' ইচ্ছে থাকলেও এর বেশি কিছু করার সুযোগ নেই । বাকি সময়ে খাওয়া, ঘুম আর নামাজ পড়া। হ্যাঁ, এখন এখন অনেক ঘুমুচ্ছি।

চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে জীবনে প্রথমবার ঘাসের মাঠে দৌড়ালেও দ্রুততম মানবের খেতাব ধরে রেখেছি। এবার নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার জাতীয় অ্যাথলেটিকসে সোনা জিতলেও আগের বারের চেয়ে (২০১৯ সালে ১০.২০ সেকেন্ড, ২০২০ এ ১০.৪০) সময় বেশি লেগেছে।

আমি বাংলাদেশের দ্রুততম মানব, এটা সব সময় আমার মধ্যে কাজ করে। নিজের ওপর চাপ সৃষ্টি করা আর কি! খেলা নেই, ঠিক মতো অনুশীলনও করতে পারছি না। করোনাভাইরাসের এই সংকট কেটে গিয়ে খেলা শুরু হলে এই অর্জন ধরে রাখতে পারব কিনা ভাবি। কবে অনুশীলন শুরু করতে পারব, তারও ঠিক নেই। প্রথম দুই মাস তো একেবারেই পুরোপুরি কন্ডিশনিং ট্রেনিংয়ের মধ্যে থাকতে হবে। যে দীর্ঘ সময় বিরতি পড়েছে, তাতে কমপক্ষে ছয় মাস অনুশীলন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। নয়তো চোটে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। এমনিতেই সাফ গেমসের পর আমি কিছু দিন চোটে ছিলাম।

খেলা নিয়ে এখন আর কিছু লিখতে চাই না। আসলে করোনা অনেক বড় শিক্ষা দিচ্ছে আমাদের। আমরা যে কত অসহায়, সেটিই যেন জানিয়ে দিল এই অনুজীব। ভাইরাসটি বুঝিয়ে দিল আমাদের আসলে কোনো ক্ষমতা নেই। ধনী, গরীব আমরা সবাই সমান।

এই সময়ে আমাদের কার কাজ কি, তা নিয়েও মনে হয় আমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি। সারাক্ষনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা-ওটা নিয়ে সমালোচনা। মার্কেট বন্ধ হবে কেন এই নিয়েও সমালোচনা, মার্কেট খুলবে কেন এই নিয়েও সমালোচনা। অথচ নিজের কাজটা কি আমরা ঠিকভাবে করছি? আমরা কি ঘরে থাকছি? স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলছি!

আমি নিজে সতর্ক আছি। বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনদেরও বলি সর্তক থাকতে। যেসব নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, সেসব মেনে চলতে। কুমিল্লায় মা-বাবা, ভাই-বোন আছেন। এখন তাদের সঙ্গে আগের তুলনায় অনেক বেশি কথা হয়। বয়স্ক মা-বাবাকে সব সময় বাড়িতেই থাকতে বলি। কারও সঙ্গে মেলামেশা না করার কথা প্রতিদিন মনে করিয়ে দিচ্ছি। সবাই সুস্থ থাকলেই তো আমার ভালো থাকা!