মাঠে গিয়ে দেখলেন তাঁর অপেক্ষায় রোনালদো

রোনালদোর সঙ্গে গনকালভেস। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে  ছবিটি পোস্ট করেন তিনি। ছবি: গনকালভেসের টুইটার অ্যাকাউন্ট
রোনালদোর সঙ্গে গনকালভেস। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ছবিটি পোস্ট করেন তিনি। ছবি: গনকালভেসের টুইটার অ্যাকাউন্ট

করোনাভাইরাস মহামারিতে চলছে লকডাউন। এর মধ্যে ‍ফুটবল অনুশীলন ‍দূর অস্ত, ঘর থেকে বাইরে বেরোতেও ভয় পাচ্ছেন অনেকে। ফিলিপে গনকালভেস একটু আলাদা ধাঁচের মানুষ। অনুশীলন তাঁকে করতেই হবে। আর এই অনুশীলন করতে গিয়েই সারা জীবন মনে রাখার মতো একটি ঘটনার সাক্ষী হলেন গনকালভেস।

সব জায়গায় অনুশীলন যে একেবারে থেমে আছে, তা নয়। কিছু ক্লাব শুরু করেছে, চলছে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও। নিজ তাগিদ থেকেই এর মধ্যে থেমে থেমে ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন। পর্তুগিজ দল ন্যাসিওনালের ১৮ বছর বয়সী গোলরক্ষকের ফোন বেজে ওঠে একদিন সকালে। ওপাশ থেকে কেউ একজন বলেন, তাঁকে মাদেইরা স্টেডিয়োমে গিয়ে অনুশীলন করতে।
সারা বিশ্বে করোনার মহামারি চলছে, এর মধ্যে অচেনা কেউ ফোন করে মাঠে যেতে বলায় ভীষণ অবাক হয়েছিলেন গনকালভেস। ১৮ বছর বয়সী এ কিশোর তাঁর দেশের সংবাদমাধ্যম এ বোয়াকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম হয়তো মূল দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে হবে।’
সতীর্থ ‍হুগো মোস্কাকে নিয়ে গঞ্জালেস ন্যাসিওনালের মাঠে ‍ঢুকতেই ‍দুজনের চোখ ছানাবড়া। এ কী! মাঠে যে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো! করোনা মহামারির মাদেইরায় ফিরেছিলেন পর্তুগিজ তারকা। শৈশবের ক্লাব ন্যাসিওনালকে অনুরোধ করেছিলেন অনুশীলনের সুযোগ করে দিতে।
বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে দেখে গনকালভেসের অনুভূতি, ‘আমাদের বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল যেন স্বপ্ন দেখছি। কারও মুখে ভাষা ছিল না। বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কী করা উচিত।’
রোনালদো অনুশীলন সতীর্থ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এই দুই তরুণকে। মোট ১০টি অনুশীলন সেশন করেন তিনি। এর মধ্যে তিন সেশন ছিল মোস্কার সঙ্গে। তিনি চলে যাওয়ার পর বাকি সাত সেশন রোনালদোর সঙ্গে ছিলেন গনকালভেস।
রোনালদোর সঙ্গে অনুশীলন করার শিহরণ লুকিয়ে রাখা খুব কঠিনই। গনকালভেস অবশ্য মুখ বন্ধই রেখেছিলেন। তাঁকে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে বলা হয়েছিল। এমনকি নিজের পরিবারকেও বলার অনুমতি ছিল না গনকালভসের, ‘কাউকে কিছু বলতে পারিনি। পুরোপুরি নিষেধ ছিল। বাবা-মা ভেবেছিল ন্যাসিওনাল অনুশীলনে ফিরেছে।’ কিন্তু পর্তুগিজ সংবাদমাধ্যম এ বোয়া রোনালদোকে ন্যাসিওনালের মাঠে আবিষ্কারের পর এই গোপনীয়তা আর ধরে রাখা যায়নি।
রোনালদোর ছেলের ক্রিস্টিয়ানো জুনিয়রের সঙ্গেও অনুশীলন করেন গনকালভস। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক ফরোয়ার্ডের অনুশীলন নিয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘অনুশীলন ঠিকমতো করাই ছিল আমাদের কাজ। রোনালদো দৌড়েছেন, শক্তি নিয়ে কাজ করেছেন। কখনো থামেননি।’
অনুশীলনে রোনালদোর সঙ্গে বাজিও হয়েছে গনকালভেসের, ‘অনুশীলন শেষে আমরা ক্রসবারে পাঁচ থেকে দশটি বল মারি। রোনালদোই বলেছিলেন, যে হারবে সে বাকি দুজনকে টাকা দেবে। প্রথমবার আমি হেরে যাই। কিন্তু টাকা সঙ্গে নিয়ে যাইনি। পরদিন দিয়েছি। এক ইউরো সেধে বলেছি “কথা রাখতে দেরি হলো”। তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, “খুব ভালো আচরণ ছিল”।’
গনকালভেস জানান, ‘অনুশীলনে রোনালদো প্রচুর টাকা নিয়ে আসতেন। ধন্যবাদ হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে ১০০ ইউরো করে দিয়েছেন। টাকাটা কোনো বিষয় না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো তাঁর সঙ্গে অনুশীলন করা।’
তা, রোনালদোর শট ঠেকাতে কেমন লেগেছে? এ প্রশ্নেরও জবাব দেন গনকালভেস, ‘কিছু ঠেকাতে পেরেছি। তবে কেউ ভাবতেও পারবে না তাঁর শটে কত জোর থাকে। যেন প্রকৃতির শক্তি। তিনি ফ্রি–কিক ও পেনাল্টি অনুশীলন করেছন। গোলরক্ষকদের তিনি কীভাবে খেয়াল করেন, তা বলেছেন আমাকে। এটা সব সময়ই অনিশ্চিত। তবে এরপরও ঠেকানো কঠিন।’

রোনালদোর সঙ্গে নিজের একটি ছবিও টুইটারে পোস্ট করেছেন গনকালভস। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বস/বন্ধুর সঙ্গে। আসল “জিওএটি” (গ্রেটেস্ট অব অলটাইম)।’