প্রচুর সবজি খাচ্ছি

>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো
দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। ছবি: প্রথম আলো
দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। ছবি: প্রথম আলো

লকডাউনের সময় খেলোয়াড়দের মধ্যে আমিই বোধ হয় সবচেয়ে ভাগ্যবান, যে ইচ্ছে করলে আগের মতোই অনুশীলন করতে পারছি। কারণ আমি এখনও বিকেএসপিতেই আছি। ইচ্ছে করলেই ট্র্যাকে নেমে দৌড়াই, জিম করছি। অন্যান্য অ্যাথলেটদের এই সময়ে ট্রাক ও জিম ব্যাবহার করতে পারার কথা নয়। এ জন্যই নিজেকে কিছুটা হলেও ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।

ইচ্ছে করলেই কোনোভাবে সাতক্ষীরায় বাড়িতে চলে যেতে পারতাম। কত মানুষ কত ভাবেই তো ঢাকা ছেড়েছে, এখনো যাচ্ছে। কিন্তু আমি এই দুটি কারণেই যাইনি। আর এই সময়ে বাসে অনেক মানুষের সঙ্গে যাতায়াত করাটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমার জন্য পরিবারের বাকি সদস্যরা বিপদে পড়ুক, সেটিও চাই না। তাই মা-বাবা বাড়ি চলে যেতে বললেও কানে তুলিনি। তাঁদের বুঝিয়ে বিকেএসপিতে থেকে গেছি।

আর একবার অনুশীলনের বাইরে চলে গেলে ফিরে এসে ফিটনেস ফিরে পাওয়ার জন্য কষ্ট তো আমাকেই করতে হবে! ফিটনেস একবার নষ্ট হলে সেটা ফিরে পাওয়া কঠিন। অনেক দিন কন্ডিশনিং ট্রেনিং করার পরেই আগের অবস্থা ফিরে পাওয়া যায়। টানা সাত বছর ধরে দ্রæততম মানবী আমি। এই জায়গাটা যতদিন সম্ভব ধরে রাখতে চাই। এর জন্য পরিশ্রম আর ত্যাগের কোনো বিকল্প নেই।

বিকেএসপিতে অনেক ভালো আছি, নিরাপদে আছি। আব্দুল্লাহ কাফি স্যারের দেওয়া সূচি অনুযায়ী প্রতিদিন এক বেলা অনুশীলন করছি। সপ্তাহে তিন দিন এন্ডুরেন্স ট্রেনিং ও তিনদিন জিম। সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুই ঘণ্টা অনুশীলন করি। রোজা রেখে এর চেয়ে বেশি পরিশ্রম করা সম্ভব হয় না। বাকি সময়ে ঘুম, রান্না ও নামাজ পড়া ।

২০১৪ সালে বিকেএসপির পড়াশোনা শেষ করেছি। কিন্তু এর পরও দেশের দ্রততম মানবী হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় এই প্রতিষ্ঠানে থেকে অনুশীলন করতে পারছি। সাধারণত ক্যাফেটেরিয়াতেই খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু বিকেএসপি বন্ধ থাকায় নিজের রান্না-বান্না নিজেকেই করতে হচ্ছে।

বিকেল থেকে শুরু হয় রান্নার কার্যক্রম। ইফতারি বানানো থেকে শুরু করে সেহরি ও রাতের খাবার, সব আমিই তৈরি করি। আগেও রান্না করতাম, তবে এখন বাধ্যতামূলকভাবেই করতে হচ্ছে। অবশ্য বাজার করার ঝামেলা কম। বিকেএসপির মধ্যেই সামাজিক দূরত্ব মেনে বাজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি বেলায় প্রচুর সবজি খাচ্ছি। এর সঙ্গে একদিন মাছ ও একদিন মাংস। সবকিছু মিলিয়ে ভালোই কাটছে এখানে।

তবে এটা ঠিক, করোনার জন্য বিকেএসপিতে সেই প্রাণ চাঞ্চল্যটা নেই। আমার ১৩ বছরের বিকেএসপি জীবনে এমন নীরবতা কখনো দেখিনি। খেলার সুবাদে সব সময় কম বেশি ছাত্র-ছাত্রী এখানে থাকেই। আমার দেখা এই প্রথম বিকেএসপিতে কোনো শিক্ষার্থী নেই। সুনসান নীরবতা। ছাত্র-ছাত্রী না থাকলে বিকেএসপির আসল সৌন্দর্যটাই চোখে পড়ে না। তবে শুধু বিকেএসপি কেন, এমন পরিস্থিতি তো পৃথিবীই আগে দেখেনি। তবে সব কিছুই ভালোর জন্য। করোনার পরে হয়তো আমাদের জন্য খুব ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে।