আত্মজীবনী লেখা শেষ করেছি

>

আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস–আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। এক অণুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো-

সাবেক টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জোবেরা রহমান লিনু। ছবি: প্রথম আলো
সাবেক টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জোবেরা রহমান লিনু। ছবি: প্রথম আলো

১৬বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ‘গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’ নাম লিখিয়েছি। দীর্ঘ খেলোয়াড়ি জীবন নিয়ে আত্মজীবনী লেখার ইচ্ছে মনের মধ্যে পুষে রাখছিলাম অনেক দিন ধরেই। শুরুও করেছিলাম বেশ আগে। কিন্তু কিছুতেই শেষ করতে পারছিলাম না। প্রাত্যহিক জীবনের নানা ব্যস্ততায় হয়ে উঠছিল না। করোনার এই সময়ে এসে সেটা মোটামুটি শেষ করতে পেরেছি।

বাকি আছে শুধু আমার সম্পর্কে কিছু বলবেন, এমন ১০ জনের কথা। ছবি, লেখাসহ বইটি ২০০ পাতার মতো হয়ে যাবে। এখন লেখাগুলো আবার দেখছি। ভুল থাকলে সংশোধন করছি। ভালো লাগছে এই ভেবে, একটা বড় কাজ হলো। সব ঠিক থাকলে আগামী বইমেলায় এটি প্রকাশের ইচ্ছা আছে।

ভ্রমণের প্রতি ঝোঁক আমার ছোটবেলা থেকেই। অনেক দেশে গিয়েছি। কত জায়গায় ভ্রমণের কত স্মৃতি! ভাবছিলাম এগুলো নিয়ে একটা বই করব। সেটিও এই সময়ে অনেকটা এগিয়েছে। বেছে বেছে কয়েকটি স্থানে ভ্রমণের কাহিনি লিখছি। এর মধ্যে আছে চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রাগ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট, সুইজারল্যান্ডের ইন্টার লেকেন ও লুসান ভ্রমণের কথা। এ ছাড়া ইস্তাম্বুলসহ তুরস্কের দুই-তিনটি স্থান, ইতালির ভেনিস, জাপানের ফুজি নিয়েও লেখা শেষ করেছি। এখন লিখছি মিসরের পিরামিড দর্শনসহ আরও কিছু স্থান নিয়ে। ১০–১২টা জায়গার ভ্রমণকাহিনি হলেই আমার আরেকটি বই হয়ে যায়।

এ বছর আমার লক্ষ্য তিনটি কাজ শেষ করা, যার মধ্যে দুটি হলো আত্মজীবনী ও ভ্রমণকাহিনি লেখা। অন্যটি হচ্ছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা আর ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়া আমার কয়েক শ সাক্ষাৎকারের একটি সংকলন প্রকাশ করা। প্রথম দুটি লক্ষ্য পূরণ করতে পারব মনে হচ্ছে। কিন্তু সাক্ষাৎকারের সংকলনটা মনে হয় না এ বছর করতে পারব। এটি বেশ বড় কাজ। মনে হচ্ছে সময় লাগবে।

টুকটাক কবিতা লেখারও অভ্যাস আছে আমার। কদিন আগে একটা কবিতা লিখলাম। আর আছে গান গাওয়ার শখ। আমার ঘনিষ্ঠজনেরা এটা জানেন। কবিতা, গান আসলে নিজের জন্য। গান গেয়ে হয়তো দেখা গেল সেটা রেকর্ড করে কোনো বন্ধুকে পাঠাচ্ছি। এ নিয়ে কথা বলছি। অনলাইনে গল্প, আড্ডা...কত কী! তা ছাড়া ঘরের কাজও করতে হয় এখন। মা আর আমি আছি উত্তরার বাড়িতে। এমনিতে আমি রান্না-বান্নায় অভ্যস্ত নই। কিন্তু এখন হেঁসেলেও যেতে হয়।

সব মিলিয়ে কাজের চাপ একটু বেশিই এখন। এই চাপের মধ্যেই নিজের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করছি। ধর্মীয় কাজেও কিছু সময় ব্যয় হয়। খেলোয়াড়ি জীবনে ফিটনেস ট্রেনিং ছিল আমার রুটিন কাজ। খেলা ছেড়েও ফিটনেসের ব্যাপারে সচেতন ছিলাম। সুইমিং, ইয়োগা সবই করতাম নিয়মিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব করতে পরছি না। তাই শরীরটা আগের জায়গায় নেই। এটা ভাবনার বিষয়। এ দিকটায় মনোযোগ দিতে হবে।

যা–ই করি না কেন, একটা দুশ্চিন্তা মাথায় থাকছেই। করোনা নিয়ে সতর্কতা। এমন একটা সংকটময় সময়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি যে, বাজার থেকে একটা খাবার এনেও সেটার পেছনে অনেকটা সময় চলে যায়। ঠিকভাবে সেটা ধোয়া হলো কি না, কোনো সমস্যা হলো কি না এসব নিয়ে চিন্তা থাকেই। আসলে এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আমরা তৈরি ছিলাম না। কিন্তু কিছু করার নেই। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সচেতনতাই একমাত্র উপায়। সবাই ভালো থাকবেন।