বিনোদন দিতেই 'উপস্থাপক' তামিম

ফেসবুকে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ফাফ ডু প্লেসির সঙ্গে লাইভ আড্ডায় তামিম ইকবাল।  ছবি: সংগৃহীত
ফেসবুকে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ফাফ ডু প্লেসির সঙ্গে লাইভ আড্ডায় তামিম ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত

তামিম ইকবালের ব্যাটিং দেখার চেয়ে বড় বিনোদন আর কী আছে! সেই যে ২০০৭ বিশ্বকাপে জহির খান, মুনাফ প্যাটেলদের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মেরে শুরু করলেন, এই বাঁহাতির ব্যাট এর পর থেকে শুধু বিনোদনের রেণুই তো ছড়িয়ে যাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের কণ্টকাকীর্ণ সময় সেই তামিমের হাত-পাও বেঁধে ফেলল। তিনি এখন না পারছেন খেলতে, না পারছেন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটে ছক্কা মারার মহড়া দিতে। ঘরবন্দী জীবন বলতে স্ত্রী-সন্তানদের সময় দেওয়া আর ট্রেডমিলে ঘণ্টাখানেক দৌড়ানো। বাকি সময়ে বসার ঘরের কালো সোফায় গা এলিয়ে ভাবেন, পৃথিবীটা আটকে গেল নাকি! মানুষের জীবন এভাবেই থেমে থাকবে! হাসি-আনন্দ থাকবে না! নাহ্, এ অবস্থা তো বদলাতে হয়।

তামিম ক্রিকেটারদের বলেন ‘এন্টারটেইনার’, যাঁরা খেলায় খেলায় মানুষকে আনন্দ দেন। করোনাকালে সে আনন্দটা ব্যাট হাতে দেওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি হাঁটলেন অন্য পথে। আর সে পথে একটু এগিয়েই তামিম হয়ে গেলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘সেলিব্রেটি’ উপস্থাপক। হ্যাঁ, তামিম ইকবাল এমনিতেই ‘সেলিব্রেটি’! কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিচরণ এত দিন এতটাই সীমিত ছিল যে সেখানে ‘সেলিব্রেটি’ হয়ে মাথা তোলার উপায় ছিল না। মানুষকে আনন্দ দিতে তামিম এবার ছক্কা মারা শুরু করলেন সেই ২২ গজে ঢুকেও।

ওপেনার তামিম তাঁর নতুন বিনোদনের জগতে আজ রাতে জুটি বাঁধবেন ভারতীয় ক্রিকেটার রোহিত শর্মার সঙ্গে। ফেসবুক লাইভে তামিমের আড্ডার সঙ্গী হবেন তিনি। এর আগে তামিম শুরুটা করেন মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে। কীভাবে এল সেই চিন্তা, শুনুন তাঁর মুখেই, ‘টানা ঘরে থাকতে আমারও বিরক্ত লাগছিল। মনে হলো, আরও অনেকে নিশ্চয়ই মানসিকভাবে খারাপ অবস্থায় আছে। ভাবলাম, এ রকম যদি কিছু করা যায়, যেটার জন্য সবাই সারা দিন ধরে অপেক্ষা করবে, আনন্দ পাবে। ভাবলাম মুশফিকের সঙ্গে এ রকম একটা কিছু করে দেখি মানুষ পছন্দ করে কি না।’

২ মে মুশফিককে নিয়ে ইনস্টাগ্রামে হয় তামিমের প্রথম ‘লাইভ শো’। বিষয় খেলা নিয়ে আড্ডা, খেলার বাইরের আড্ডা। দর্শক-সমর্থকেরা জানেন না, কথায় কথায় এমন অনেক কিছুই চলে আসে তাতে। ভক্তরা দারুণ মজা পেয়ে গেল। কমেন্ট, লাইক, ভালোবাসার ছড়াছড়ি। উৎসাহ পেলেন তামিমও, ‘কঠিন সময়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করব, শুধু এই চিন্তা থেকেই এটা করা। মানুষের আগ্রহ আর কিছু মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে আমি যা করতে চেয়েছি, তা করতে পারছি। করোনায় আক্রান্ত একজন চিকিৎসকও আমার অনুষ্ঠান দেখে বার্তা পাঠিয়েছেন। এখানেই তো আমার সার্থকতা!’

দ্বিতীয় পর্বের অতিথি জাতীয় দলের আরেক ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ। পরের পর্বে আড্ডা ইনস্টাগ্রাম থেকে চলে এল ফেসবুক লাইভে। এবার সঙ্গী তামিমের পূর্বসূরি ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তামিম-মাশরাফি দুজনই চরম আড্ডাবাজ। পর্বটা তাই জমলও দারুণ। লাইভেই প্রায় ১ লাখ দর্শক! পরে তা গেছে ৬০ লাখের কাছাকাছি।

তামিমের সাবলীল উপস্থাপনা এদিন একটু বেশিই মুগ্ধ করল সবাইকে। অনুষ্ঠান শেষে প্রশংসাসূচক প্রচুর ফোন, খুদে বার্তা পেলেন, ‘আমার স্কুলের বন্ধুরাই বেশি অবাক। আমি এ কাজ কীভাবে করছি! স্কুলজীবনে কখনো ক্লাসে দাঁড়িয়ে রিডিংও পড়িনি। এত লাজুক ছিলাম! খালি মনে হতো রিডিং পড়তে গিয়ে যদি কিছু ভুল বলে ফেলি, সবাই তো হাসবে।’

অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা দেখে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে পৃষ্ঠপোষক হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে। তামিম রাজি হননি, ‘আমি কেমন উপস্থাপনা করছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা আমার পেশাও নয়। অনুষ্ঠানটিকে বাণিজ্যিকভাবে করার জন্য অনেক প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য এ থেকে অর্থ উপার্জন নয়। মানুষকে ঘরবন্দী সময়ে আনন্দ দেওয়া ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য নেই আমার।’

মাঝে জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদকে নিয়েও একটা পর্ব করেছেন। কিন্তু তামিম নিজে সবচেয়ে উপভোগ করেছেন জাতীয় দলের তিন সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান, খালেদ মাহমুদ ও হাবিবুল বাশারের সঙ্গে পর্বটিতে, ‘মুশফিক, মাশরাফি ভাই, রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাই ওনারা কোন প্রশ্নের কী উত্তর দিতে পারেন, আমি কমবেশি জানতাম। কিন্তু সাবেক যে তিনজন এসেছেন, তাঁদের ব্যাপারে অনেক কিছু আমিও জানতাম না। এই পর্বটাই বেশি উপভোগ করেছি। দর্শকদের অনেকেও বলেছেন, এটাই নাকি সবচেয়ে ভালো অনুষ্ঠান হয়েছে।’

গত পরশু সর্বশেষ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ফাফ ডু প্লেসি যোগ দিয়েছেন তামিমের আড্ডায়। আজ আসবেন রোহিত শর্মা। লাইভ অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের রাজি হয়ে যাওয়া মুগ্ধ করেছে তামিমকে, ‘আমি ওদের বললাম, তোমাদের দেখে বা তোমাদের কথা শুনে আমার দেশের মানুষের মুখে হয়তো কিছু সময়ের জন্য হলেও হাসি ফুটবে। আমার এই এক কথায়ই ওরা রাজি হয়ে গেছে।’

তামিম তাঁর অনুষ্ঠানের ইতি টানবেন আগামী ২৩ মে, শনিবার। তার আগে আরও অন্তত পাঁচটি পর্ব হবে, যার একটিতে একসঙ্গে তাঁর সঙ্গী হতে পারেন জাতীয় দলের সব সিনিয়র ক্রিকেটার। এ ছাড়া বিদেশি ক্রিকেটারদের চমকও থাকবে। তবে সেটিকে ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’ হিসেবেই রাখতে চান তিনি, ‘দুই-একদিন অপেক্ষা করুন। সবই দেখতে পাবেন।’

বিনোদনে তো ‘সারপ্রাইজ’ থাকতেই হয়!