কেন মিথ্যা বলছেন ডেল স্টেইন?

স্টেইনের কথার সঙ্গে বাস্তব ঘটনার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এএফপি ফাইল ছবি
স্টেইনের কথার সঙ্গে বাস্তব ঘটনার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এএফপি ফাইল ছবি

অভিযোগটা গুরুতর, শচীন টেন্ডুলকারের জন্য অপমানজনক তো বটেই। ছেলেদের ক্রিকেটে ওয়ানডের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা টেন্ডুলকারের। ১০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর ডেল স্টেইন দাবি করছেন, সেদিন টেন্ডুলকার ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন আম্পায়ারের সহায়তায়। আউট জেনেও টেন্ডুলকারকে আউট দেননি আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড।

স্কাই স্পোর্টসের পডকাস্টে জেমস অ্যান্ডারসনের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার। সেখানেই এই ভয়ংকর অভিযোগ তুলেছেন স্টেইন, 'ওয়ানডেতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন টেন্ডুলকার, সেটা আমদের বিপক্ষেই গোয়ালিয়রে। আমার এখনো মনে আছে-যখন ১৯০ এর ঘরে ছিল তখন আমি তাঁকে এলবিডব্লু করেছিলাম। ইয়ান গোল্ড আম্পায়ারের দায়িত্বে ছিলেন এবং সে তাঁকে আউট দেননি।'

এরপরই আম্পায়ার গোল্ডের মর্যাদা ধুলায় মিশিয়ে দিলেন স্টেইন, ;আমি বলছিলাম, “কেন তাকে আউট দিলে না!? এটা পরিস্কার আউট। গোল্ড এমন এক ভাব করল, “আরে চারপাশ দেখ-আমি যদি ওকে আউট দেই, আমাকে আর হোটেলে ফিরতে হবে না।”
২০১০ সালের ২৪ এপ্রিল গোয়ালিইয়রের দর্শক অনেক উত্তেজিত ছিলেন এটা সত্যি। ৩৭তম ওভারে সীমানায় দাঁড়ানো আলবি মরকেলের গায়ে ঢিল ছোড়ায় বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধও ছিল। ফলে উন্মাতাল দর্শককে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিল আম্পায়ার গোল্ডের। কিন্তু তাই বলে জেনেশুনে একজন ব্যাটসম্যানকে আউট দেবেন না আম্পায়ার, এমন দাবি করা বাড়াবাড়ি।


আসলেই কি স্টেইন সেদিন টেন্ডুলকারকে ১৯০-এর ঘরে আউট করেছিলেন?

সে ম্যাচের কমেন্ট্রি কিন্তু এমন কিছু বলছে না। ১৯০ রানের পর টেন্ডুলকারকে মাত্র ৩ বল করেছিলেন স্টেইন। সেটা ৪৭তম ওভারে। ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়েছেন টেন্ডুলকার। তৃতীয় বলে আবার স্ট্রাইক পান কিন্তু সে বলে রান পাননি। বল ব্যাটে লেগে ক্যাচের মতো উঠেছিল কিন্তু বোলার পর্যন্ত পৌছায়নি। পরের বলেই মিড উইকেটে বল ঠেলে দিয়ে আরেকটি সিঙ্গেল বের করে নিয়েছেন স্টেইন। ব্যস, এ তিনটি বলই টেন্ডুলকারকে করেছেন স্টেইন। তিনটি বলই ব্যাতে লাগাউ এলবিডব্লুর কোনো সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না।

তবে এমন হতে পারে, স্টেইন টেন্ডুলকারকে আরও আগে আউট করেছিলেন কিন্তু স্মৃতিতে সেটা ১৯০-এর ঘর মনে হচ্ছে? পরীক্ষা করে দেখা যাক। ৪৭তম ওভারের আগে স্টেইন ৩৭তম ওভারে সর্বশেষ বল করেছিলেন টেন্ডুলকারকে। সে ওভারেও তিনটি বল পেয়েছিলেন টেন্ডুলকার। চতুর্থ ও ষষ্ঠ বলে দুটি চার মেরেছেন। পঞ্চম বলে আপার কাট মারতে চেয়েছিলেন, ব্যাটে বল লাগেনি। আর শটটা যেহেতু আপার কাট, তাই বলটাও যে এলবিডব্লু হওয়ার উচ্চতায় ছিল না সেটা বোঝাই যাচ্ছে। এই ওভারের শুরুতে টেন্ডুলকারের রান ছিল ১৩৯।

এর আগে ৩৫তম ওভারেও বল করেছেন স্টেইন। ছয়টি বলই খেলেছেন টেন্ডুলকার। প্রথম বল পয়েন্টে ঠেলে দিয়েও রান পাননি। দ্বিতীয় বলে চার। তৃতীয় বলে জায়গা করে মারতে চেয়েছিলেন, ওয়াইডের কাছাকাছি বল করেছিলেন স্টেইন, তাই ব্যাটে-বলে হয়নি। পরের বলেও অনেকটা বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিস করেছেন টেন্ডুলকার। পরের বলেও সেই কাজ করতে চেয়েছিলেন স্টেইন কিন্তু এবার ব্যাটসম্যান প্রস্তুত ছিলেন বলে মিড উইকেট দিয়ে চার। ওভারের শেষ বলেও সিঙ্গেল নিয়েছেন টেন্ডুলকার। অর্থাৎ স্টেইনের এই ওভারেও আউট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না।

এর আগে স্টেইন সর্বশেষ যখন শচীনকে বল করেছিলনে, সেটা ১১তম ওভারে। তখনো পঞ্চাশ পেরোননি টেন্ডুলকার। কিন্তু সে ওভার বা তার আগের ওভারটিতে স্টেইনের সব বলেই রান পেয়েছেন টেন্ডুলকার। পুরো ম্যাচে টেন্ডুলকারের প্যাডে স্টেইনের একটি বলই লেগেছিল, সেটি সপ্তম ওভারে। লিটল মাস্টার তখন ২৬ রানে ছিলেন। সে বলটিও ছিল লেগ স্টাম্পে। এবং সে বলে কোনো আপিলও হয়নি!

ফলে দক্ষিণ আফ্রকান ফাস্ট বোলারের এমন সাড়া ফেলে দেওয়ার দাবির কোনো প্রমান মিলছে না। অবশ্য এমনও হতে পারে, দশ বছর আগের ঘটনা বলে সঠিক তথ্য ভুলে গেছেন, অথবা অন্য কোনো ম্যাচের স্মৃতির সঙ্গে এ ম্যাচকে মিলিয়ে ফেলছেন স্টেইন। হাজার হলেও তিনিও মানুষ!

আরও পড়ুন...