নারী ফুটবলারদের কেউ রান্না শিখছেন, কেউ খেলছেন লুডু

আজ আড্ডায় অনেক কথাই শুনিয়েছেন নারী ফুটবলাররা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
আজ আড্ডায় অনেক কথাই শুনিয়েছেন নারী ফুটবলাররা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

এখনো আক্ষেপে পোড়েন সাবিনা । সেই কবে ভারতে গিয়েছিলেন, আর পেয়েছিলেন তৃপ্তি করে পানি পুড়ি খাওয়ার সুযোগ। কিন্তু কড়া 'মাস্টারে'র শাসন তাঁকে সে সুযোগ দিলে তো! ওদিকে কৃষ্ণার আক্ষেপ অন্য কিছু নিয়ে। বাংলাদেশের ফুটবলের অন্যতম সেরা মুহূর্তটি হাত ফসকে যাওয়ার দুঃখটা এখনো পোড়ায় কৃষ্ণাকে।

তিন বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেখা লাল কার্ডের ঘটনার কথা বলছিলেন কৃষ্ণা রানী সরকার। বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের এই ফরোয়ার্ড তখন খেলতেন অনূর্ধ্ব-১৬ দলে। থাইল্যান্ডে মেয়েদের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দাপটের সঙ্গেই সেদিন খেলছিল বাংলাদেশ। এমনকি ম্যাচের ৭৮ মিনিট পর্যন্ত বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ২-১ গোলে। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই লাল কার্ড দেখতে হয় দলের অন্যতম বড় ভরসা কৃষ্ণাকে। দশ জনের বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে হেরেছিল। এতদিন পর সেই কষ্টের স্মৃতি জানালেন টাঙ্গাইলের এই ফুটবলার।

ফুটবল ফেডারেশনের আয়োজনে আজ বিকেলে ফেসবুকের লাইভ আড্ডায় মেতে ওঠেন বাংলাদেশের জাতীয় নারী দলের ফুটবলাররা। আড্ডায় ছিলেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন, মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দা, মিশরাত জাহান মৌসুমী, স্ট্রাইকার তহুরা খাতুন ও কৃষ্ণা রানী সরকার। আড্ডার এক ফাঁকে ওই ম্যাচের লাল কার্ডের প্রসঙ্গ তোলেন বাফুফের কর্মকর্তা এবং অনুষ্ঠানের সঞ্চালক খালিদ মাহমুদ। কৃষ্ণা বলছিলেন, 'অস্ট্রেলিয়ান মেয়েরা এমনিতেই শারীরিক গড়নে, উচ্চতায় আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ওরা অনেক বাজে ট্যাকল করছিল ম্যাচে। আমিও ট্যাকল করি। কিন্তু লালকার্ড দেখতে হবে সেটা ভাবিনি। আমি বুঝতেই পারিনি যে রেফারি আমাকে লাল কার্ড দেবেন। মাঠের বাইরে আসার পর খুব খারাপ লাগছিল। দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞায় ছিলাম। গ্যালারিতে একা বসে থাকার কী যে যন্ত্রণা সেটা ওই সময় হাড়ে হাড়ে বুঝেছি।'

করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ মাস থেকেই মেয়েদের আবাসিক ক্যাম্প বন্ধ। বন্ধ হয়ে গেছে মেয়েদের প্রিমিয়ার লিগ। সবাই যার যার বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন। আড্ডার এক ফাঁকে জাতীয় নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী যোগ দেন অনুষ্ঠানে। তিনি মেয়েদের ফিটনেস ধরে রাখার পরামর্শ দেন। অখন্ড অবসরে মেয়েদের কেউ রান্না শেখার চেষ্টা করছে, কেউ বা সময় কাটাচ্ছেন সিনেমা দেখে, লুডু খেলে। এভাবে সময় কাটাতে যে মোটেও ভালো লাগছে না সেটাই বললেন স্ট্রাইকার সাবিনা, 'ফুটবল ছাড়া একদমই এক ঘেয়ে সময় কাটছে আমাদের। আমরা মাঠের মানুষ মাঠে থাকতেই পছন্দ করি। এভাবে অলস সময়ে ফিটনেস ধরে রাখা খুব কঠিন। তাছাড়া আমরা সবাই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। অতটা স্বচ্ছল নই যে নিজেদের জিমনেশিয়ামে অনুশীলন করব। তাই ফিটনেস ধরে রাখাটাই বেশি সমস্যা হচ্ছে আমাদের।'

ডিফেন্ডার হয়েও আন্তর্জাতিক ম্যাচে অহরহ গোল করেন আঁখি খাতুন। আড্ডায় এসে গোল করার রহস্য জানালেন সিরাজগঞ্জের কিশোরী, 'অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পাওয়ার পর সাবিনা আপু বলেছিলেন, তোর পায়ে ভালো শট আছে, তুই মাঝমাঠ থেকে চেষ্টা করিস। তাহলে হয়তো গোল পেতেও পারিস। এরপর থেকেই চেষ্টা করেছি এবং গোলও পেয়েছি।'

আড্ডায় সবচেয়ে মজার ঘটনা বলেন সাবিনা। ভারতে ২০১৬ এসএ গেমসে খেলতে গিয়ে তৃপ্তি সহকারে পানিপুরি খেতে পারেনি মেয়েরা। সেই ঘটনাটাই হাসতে হাসতে বলছিলেন সাবিনা, 'শিলংয়ে আমরা যে হোটেলে থাকতাম ওখানে পানিপুরি পাওয়া যেত প্রচুর। কিন্তু স্যার (কোচ গোলাম রব্বানী) কখনোই খেতে অনুমতি দিতেন না। আমরা অনেক কষ্টে স্যারকে রাজি করাই। কিন্তু দোকানে গিয়ে প্রত্যেকের হাতে দেওয়া হয় মাত্র দুটো করে পানিপুরি! পেটপুরে খেতে পারিনি বলে সে কী কষ্ট আমাদের!'