বন্ধুর ল্যাপটপে এশিয়ান মঞ্চে কিস্তিমাত

দাবার বোর্ডে মগ্ন নোশিন আঞ্জুম। ফাইল ছবি
দাবার বোর্ডে মগ্ন নোশিন আঞ্জুম। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় সব খেলারই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বন্ধ। তবে ঘরে বসে অনলাইনে যেহেতু খেলা যায়, দাবা খেলাটা বন্ধ হয়নি পুরোপুরি। প্রথমবারের মতো অনলাইনে চলছে র‌্যাপিড জুনিয়র এশিয়ান দাবা। দক্ষিণ এশিয়ান অঞ্চল থেকে প্রথম রাউন্ড শেষে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের তিন প্রতিযোগী আন্তর্জাতিক মাস্টার ফাহাদ রহমান ও তাহসিন তাজওয়ার জিয়া এবং মেয়েদের বিভাগে ফিদে মাস্টার নোশিন আঞ্জুম। এদের মধ্যে নোশিনের নামটি উল্লেখ করতে হচ্ছে আলাদাভাবেই।

অনলাইনে আন্তর্জাতিক দাবা মানেই প্রযুক্তির ব্যবহার। খেলার জন্য ইন্টারনেট সংযোগের সঙ্গে প্রয়োজন কম্পিউটার বা ল্যাপটপসহ আনুষঙ্গিক প্রযুক্তিগত সুবিধা। কিন্তু নোশিনের নেই ব্যক্তিগত ল্যাপটপ। তাতে কী! বন্ধুর বাড়ি গিয়ে বন্ধুর ল্যাপটপে খেলেই প্রথম রাউন্ডে রানারআপ হয়ে বাজিমাত করেছে দশম শ্রেণির এই ছাত্রী। আজ চূড়ান্ত পর্বের লড়াইয়ে নামবে সে। তার আগে অনুশীলনটাও সারতে হয়েছে মোবাইল ফোনে।


অনলাইনে প্রথম দাবা খেলার রোমাঞ্চ ভালোই উপভোগ করছে নোশিন। তবে তাকে খেলতে হয়েছে খিলগাঁও থেকে মালিবাগে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে, 'অনলাইনে প্রথম খেলতে ভালো লেগেছে। তবে আমার ল্যাপটপ নেই বলে গত ২৭ মে খিলগাঁওয়ের বন্ধুর বাসায় গিয়ে ওর ল্যাপটপে খেলতে হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে কারও বাসায় গিয়ে খেলা খুবই বিব্রতকর।' এর আগে দুই–একবার শখের বশে কম্পিউটারে খেললেও নোশিন অনলাইনে প্রথম আন্তর্জাতিক দাবায় অংশ নিল এই প্রথম। চূড়ান্ত পর্বে ভালো কিছু করার আশা দেখছে সে। আজ দুপুর ১২টায় শুরু হয়েছে মেয়েদের বিভাগের চূড়ান্ত পর্বের খেলা। ছেলেদের বিভাগের খেলা হবে আগামীকাল। প্রতিটি বিভাগে অংশ নিচ্ছে ২১ জন প্রতিযোগী।


চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়েছে দশম শ্রেণির ছাত্র ফাহাদ। অনলাইনে প্রচুর খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এটাই প্রথম, 'শুরুতে একটু চাপে ছিলাম। পরে তো চ্যাম্পিয়নই হয়েছি। প্রতিপক্ষ সামনে বসে না থাকায় অনলাইনে মানসিকভাবে কিছুটা চাপমুক্ত হয়ে খেলা যায়। এ বিষয়টি আমি উপভোগ করেছি।' তবে অনলাইনের চেয়ে সামনাসামনি বসে খেলাটাই অনেক বেশি উপভোগ্য মনে হয় ফাহাদের কাছে।


অনলাইনে দাবা খেলার পোকা বলা যায় রানারআপ হয়ে চূড়ান্ত পর্বে পা রাখা বাংলাদেশের অন্য প্রতিযোগী তাহসিনকে। ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্র বলছিল, 'অনলাইনে শুধু প্রতিপক্ষ সামনে থাকে না, এ ছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই। প্রতিপক্ষ সামনে না থাকলেও এখানে অন্যায় কিছু করার সুযোগ নেই। তবে ইন্টারনেট বা বিদ্যুৎ চলে গেলে সব শেষ।'


অনলাইন দাবা টুর্নামেন্টে খেলতে হলে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, ইন্টারনেট এবং ওয়েব ক্যামেরা থাকতেই হবে। বৈদ্যুতিক গোলযোগ বা ইন্টারনেট বিভ্রাটে একবার খেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আর ফিরে আসার সুযোগ নেই।