ম্যারাডোনাকে পেছনে ফেলে সেরা হওয়া সেই শিলাচ্চি এখন...

১৯৯০ বিশ্বকাপের পরিচিত দৃশ্য। গোল করে ছুটছেন শিলাচ্চি। ছবি: টুইটার
১৯৯০ বিশ্বকাপের পরিচিত দৃশ্য। গোল করে ছুটছেন শিলাচ্চি। ছবি: টুইটার

১৯৯০ বিশ্বকাপে তিনি ২৬ বছরের তরতাজা যুবক। কিন্তু দেখে মনে হতো চল্লিশে চালসে সদৃশ এক মধ্যবয়সী। মাথার সামনের অংশে চুল নেই বললেই যে চলে

এখন তিনি ৫৫ বছরে পা রেখে সত্যি সত্যি বয়স্ক। কিন্তু দেখে বোঝা কঠিন। '৯০ বিশ্বকাপের স্মৃতি খুব তরতাজা না হলে তাঁকে চেনা প্রায় অসম্ভব! ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে মাথার সামনে গজানো নতুন চুলগুলো হতে পারে সেই ভুলের কারণ। তবে নামটা শুনলে সব মিলে যায়, সালভাতর 'তোতো' শিলাচ্চি!


ডিয়েগো ম্যারাডোনা ও লোথার ম্যাথিউস, ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান, ফ্রাঙ্কো বারেসিদের মতো তারকারা ছিলেন ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপে। স্বাগতিকেরা সেবার তৃতীয় হলেও ম্যারাডোনা-ম্যাথিউসদের পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছিলেন এই শিলাচ্চি। সেরা ফুটবলার ও সর্বোচ্চ গোলদাতা (৬)!


বিশ্বকাপের ওই পারফরম্যান্স শিলাচ্চিকে এনে দিয়েছিল প্রায় ধুলো থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সিংহাসনের দাবিদার হওয়ার মতো সম্মান। বিশ্বকাপের এক বছর আগেও তিনি খেলতেন সিরি বি-র দল মেসিনায়। ইতালির বিশ্বকাপ দলে ডাক পান পঞ্চম স্ট্রাইকার হিসেবে। এখান থেকে শিলাচ্চির জীবনটাই পাল্টে দেয় বিশ্বকাপ।


কিন্তু বিশ্বকাপের পরই দপ করে নিভে যান। ইতালির জার্সিতে শিলাচ্চির ১৬ ম্যাচের (৭ গোল) ক্যারিয়ার অনেকটাই ধূমকেতুর মতো। ফুটবল ছাড়ার পর তো সংবাদমাধ্যমে তাঁকে প্রায় দেখাই যায় না! সাক্ষাৎকারও প্রায় দেন না বললেই চলে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম 'মেইল অনলাইন' এই বিরল কাজটি সম্পন্ন করেছে। সেই সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের কথা বলেছেন সাবেক জুভেন্টাস ও ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার।

সালভাতর শিলাচ্চি। বয়সের সঙ্গে আরও তরুণ হচ্ছেন! ছবি: মেইল অনলাইন টুইটার
সালভাতর শিলাচ্চি। বয়সের সঙ্গে আরও তরুণ হচ্ছেন! ছবি: মেইল অনলাইন টুইটার

করোনাভাইরাসে লকডাউনের সময়ে নিজের বাগানে সময় দিয়েছেন শিলাচ্চি। '৯০ বিশ্বকাপ তাঁর কাছে আনন্দে-বেদনার কাব্য। নিজে সফলতা পেলেও দল সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নেয়। সে ম্যাচেও গোল করা শিলাচ্চি পেয়েছিলেন ভুবনজোড়া খ্যাতি, '৩০ বছর পরেও বিশ্বকাপ এখনো আমার কাছে তরতাজা স্মৃতি। এখনো আমার জনপ্রিয়তা কমেনি। বিশ্বের নানা প্রান্তে গেলে কম বয়সীরাও (ইন্টারনেটে দেখেছে) আমার সঙ্গে ছবি তুলতে চায়, কথা বলতে চায়।'

১৯৯৭ সালে পেশাদার ফুটবল ছাড়েন শিলাচ্চি। তারকাখ্যাতি পেলেও তিনি সেটি বজায় রেখে চলার লোক নন, 'আমি সব সময় সাধারণ মানুষদের সঙ্গে মিশি। যেন তাদেরই একজন। মেকি কিছু নেই। লোকে জানে শিলাচ্চি বাইরে যেমন ভেতরেই তাই।'


ফুটবল ছাড়ার পর ২০০১ সালে পার্লেমোর স্থানীয় কাউন্সিলর হন শিলাচ্চি। টিভি সিরিজে অভিনয় করেছেন মাফিয়া বসের চরিত্রে। অংশ নিয়েছেন ইতালির বেশ জনপ্রিয় রিয়ালিটি শো-তেও।


ক্লাব ক্যারিয়ারে ১৫৪ গোল করা শিলাচ্চির বিশ্বাস এখন খেললে তাঁর গোলসংখ্যা আরও বাড়ত, 'এখন খেললে আরও গোল করতে পারতাম। আমাদের সময়ে ডিফেন্ডাররা লাথি মারার সঙ্গে ৯০ মিনিট মার্ক করে রাখত। এখন বিষয়টি সহজ। দলগুলোর রক্ষণভাগ বেশ এগিয়ে খেলায় গতি ব্যবহার করে গোল করতে পারতাম।'


'৯০ বিশ্বকাপের স্মৃতি নিয়ে শিলাচ্চি বলেন, 'জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার এক বছর আগেও মেসিনায় ছিলাম। কেউ চিনত না। হঠাৎ করে সবাই চিনে ফেলল। এমন কিছু ঘটবে কখনোই প্রত্যাশা করিনি। বিশ্বকাপের আগে কেউ এমন কথা বললে হেসে দিতাম। অনেক সময় ভেবেছি, যা ঘটছে সব সত্যি না স্বপ্ন!'


বিশ্বকাপের পর চোট ও ফর্মহীনতা মিলিয়ে জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েন শিলাচ্চি। জাতীয় দলে মাত্র এক বছরের ক্যারিয়ারে '৯০ বিশ্বকাপ শেষে মাত্র এক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন শিলাচ্চি। গোল পেয়েছিলেন সে ম্যাচেও।