মুশফিক-তাসকিনদের অন্যরকম ফেরা

ভোরে বাসার সামনে নীরব রাস্তায় রানিং করছেন মুশফিকুর রহিম  আর বসিলায় নির্জনে রানিংয়ের কাজ সারছেন তাসকিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
ভোরে বাসার সামনে নীরব রাস্তায় রানিং করছেন মুশফিকুর রহিম আর বসিলায় নির্জনে রানিংয়ের কাজ সারছেন তাসকিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

মুশফিকুর রহিম কাল ফেসবুকে একটি দৌড়ের ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, 'দিন শুরু করার সেরা উপায়।' একেকজনের দিন শুরু হয় একেকভাবে। মুশফিক হয়তো তাঁর দিনটা শুরু করতে চান রানিং দিয়ে। কিন্তু এ করোনাদিনে স্বস্তিতে তা করার উপায় আছে!

দিনের পর দিন ঘরবন্দী থেকে ক্লান্ত মুশফিকসহ আরও কয়েক ক্রিকেটার বিসিবির কাছে জানতে চেয়েছিলেন মাঠে অনুশীলন শুরু করা যায় কিনা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিসিবি তাদের নিরুৎসাহিত করেছে মাঠে আসতে। তাই বলে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেননি মুশফিক। মুক্ত পরিবেশে রানিংয়ের কাজটা সারতে বিকল্প উপায় বের করেছেন। বনানী এলাকায় ভোরে বাসার সামনে সুনসান রাস্তায় দৌড়ানোর ভিডিও দেখেই সেটি বোঝা যাচ্ছে। ঘরবন্দী থেকে আর কত দিন—এ ভাবনায় মুশফিকের মতো আরও অনেক ক্রিকেটারই মুক্ত পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু করছেন ফিটনেস কিংবা স্কিল ট্রেনিং। মাঠে না ফিরতে পারলেও ফিটনেসট ট্রেনিংটাকে অন্তত তারা নিয়ে আসতে চাচ্ছেন চার দেওয়ালের বাইরে।

তাসকিন আহমেদ মোহাম্মদপুরে বাসার গ্যারেজ কিংবা পাশের জিমে নিয়মিত ফিটনেস নিয়ে কাজ করছেন। তবুও মনে অতৃপ্তি থেকে যাচ্ছিল। পেসার হিসেবে যে ধরনের অনুশীলন দরকার, সেটি করতে হলে উন্মুক্ত পরিবেশ চাই। তাসকিন তাই বেছে নিয়েছেন রাজধানীর বসিলায় একটি গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠানের খালি জায়গা। সপ্তাহে দুদিন খুব ভোরে চলে যাচ্ছেন সেখানে। করোনাভীতি কাটিয়ে খোলা পরিবেশে অনুশীলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাসকিন বলছিলেন, ‘বাইরে বের হতে কেমন যেন লাগে। এ কারণে ফজরের নামাজের সময় চলে যাই। দেড়-দুই ঘণ্টা রানিং করে আসি। হঠাৎ যদি খেলা শুরু হয় তখন যেন প্রস্তুত থাকতে পারি। এমনি একটু পিছিয়ে আছি। করোনা হলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। দল থেকে বাদ পড়লেও তো আমার জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকার মতোই! ওটা থাকতে চাই না।’

ফেনিতে ব্যাটিং অনুশীলন শুরু করেছেন সাইফউদ্দিন। ছবি: ফেসবুক
ফেনিতে ব্যাটিং অনুশীলন শুরু করেছেন সাইফউদ্দিন। ছবি: ফেসবুক

বাংলাদেশ দলের পেসবোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন শুধু ফিটনেস ট্রেনিংয়েই সীমাবদ্ধ নেই। ঈদের পর তিনি ফেনী সরকারি কলেজ মাঠে স্কিল অনুশীলনও শুরু করেছেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকৃতি। বৃষ্টিবাধায় নিয়মিত অনুশীলন করতে পারছেন না। তারপরও যখনই সুযোগ পাচ্ছেন কিছু না কিছু করছেন, 'ফেনির সব মাঠেরই বাজে অবস্থা। বৃষ্টি হলে অনুশীলন করার মতো অবস্থা থাকে না। বিরতি দিয়ে ব্যাটিং-বোলিং করেছি। ঘরে ফিটনেস নিয়েও মনমতো কাজ করতে পারি না। ঘরে যেটা করি, সেটা একজন পেসারের জন্য যথেষ্টও নয়। সব মিলিয়ে অনেক কঠিন পরিস্থিতি, তবুও করছি।'

ক্রিকেটারদের অনুশীলনের জন্য মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম এখনো উন্মুক্ত করেনি বিসিবি। তবে বিসিবির মাঠে না করা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রিকেটারদের অনুশীলনে বাধা নেই বলে জানালেন ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মাঠে এসে অনুশীলন করতে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। তবে কোথাও অনুশীলন করা যাবে না, সেটা বলছি না। এই সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কী করতে হবে, সেটি নিয়ে খেলোয়াড়েরা সচেতন। তারা কাজ করছে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই। অনেক খেলোয়াড়ের বাসায় সব ব্যবস্থা আছে। কারও আবার নেই। তাদের বিকল্প বের করতে হচ্ছে।’

'বিকল্প' উপায়ের খোঁজ না করে কবে যে পুরোপুরি ক্রিকেটে ফেরা যাবে, সে আশায়ই এখন দিন গুনছেন ক্রিকেটাররা।