কে বা কারা হচ্ছেন নেইমারদের সঙ্গী?

এভাবেই পথ আলাদা হয়ে যাচ্ছে নেইমার ও ম্যাক্সিম চুপো মোতিংয়ের। ছবি: টুইটার
এভাবেই পথ আলাদা হয়ে যাচ্ছে নেইমার ও ম্যাক্সিম চুপো মোতিংয়ের। ছবি: টুইটার
>মৌসুম শেষে একাধিক খেলোয়াড় পিএসজি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কারণ আর কিছুই নয়, চুক্তি নবায়নে ফরাসি চ্যাম্পিয়নদের অনাগ্রহ

থিয়াগো সিলভা, এডিনসন কাভানি। পিএসজির স্বর্ণযুগের এই দুই খেলোয়াড়ের হাত ধরে এসেছে কত কত শিরোপা। ইউরোপীয় ফুটবলে পিএসজি নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছে এসব খেলোয়াড়ের কারণেই। আজ সেই খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিতে বিন্দুমাত্র সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হচ্ছে না তাদের।


কারণ আর কিছুই নয় – বয়স। কাভানির বয়স তেত্রিশ, সিলভার আরও বেশি। পঁয়ত্রিশ। স্বাভাবিকভাবেই ক্যারিয়ারের শেষদিকে চলে এসেছেন দুজন। আগে যেভাবে খেলতেন, এখন সেভাবে পারবেন না। ফলে আস্তে আস্তে পিএসজিতে অপরিহার্যতা কমেছে তাঁদের। কমতে কমতে মৌসুম শেষে একদম নাই হয়ে যাচ্ছে। পিএসজির স্পোর্টিং ডিরেক্টর লিওনার্দো জানিয়েছেন, এই দুই খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করছেন না তাঁরা। মৌসুমশেষে চলে যেতে হবে তাঁদের। শেষ হবে রঙিন একটি অধ্যায়ের।

শুধু সিলভা বা কাভানিই নন। পিএসজি আরও বেশ কিছু খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন বেলজিয়ান রাইটব্যাক টমাস মুনিয়ের, ফরাসি লেফটব্যাক লেভিন কুরজাওয়া, তরুণ সেন্টারব্যাক ট্যাঙ্গয় কুয়াসি, মিডফিল্ডার আদিল আওচিচে ও ক্যামেরুনের স্ট্রাইকার এরিক-ম্যাক্সিম চুপো মোতিং।

তবে সিলভার সঙ্গে পিএসজি দুই মাসের চুক্তি নবায়ন করেছে। যাতে অন্তত মৌসুমটা শেষ করে যেতে পারেন ব্রাজিলের সাবেক এই অধিনায়ক। চুপো-মোতিংয়ের সে সৌভাগ্যও হয়নি। এখনই ক্লাব খোঁজা শুরু করতে হয়েছে ১৭ ম্যাচে ৫ গোল করা এ তারকাকে।

স্বাভাবিকভাবেই, পিএসজির স্কোয়াডে বেশ কিছু শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে। থিয়াগো সিলভা-ট্যাঙ্গয় কুয়াসি যাওয়ার পর সঙ্গত কারণেই তাঁর জায়গায় নতুন একজন বা দুজন সেন্টারব্যাক আনতে চাইবে পিএসজি। রাইটব্যাকের অবস্থা আরও খারাপ। মূল দলে খেলার মতো তেমন কেউই নেই। লাগবে একজন লেফটব্যাকও যে কিনা স্প্যানিশ লেফটব্যাক হুয়ান বার্নাতকে দলে জায়গা পাওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। আক্রমণাত্মক একজন মিডফিল্ডারের দিকেও নজর দিতে পারে পিএসজি। সঙ্গে কাভানি-মোতিংয়ের জায়গায় নতুন এক-দুজন স্ট্রাইকার তো বটেই।


প্রশ্ন উঠেছে, কে আসবেন নেইমারদের সঙ্গ দিতে? কাদের দলে আনার চেষ্টা করছে পিএসজি?

প্রথমেই আসা যাক গোলরক্ষকের ব্যাপারে। দলের মূল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে বিকল্প গোলরক্ষক কে হবেন, তা নিয়ে। চলতি মৌসুমে ফুলহাম থেকে ধারে স্প্যানিশ গোলরক্ষক সার্জিও রিকো কে আনা হলেও তাঁর মান নিয়ে পিএসজি কোচ টমাস টুখেল সন্দিহান। ফলে এই মৌসুমের পরেই হয়তো ফুলহামে ফিরে যাবেন রিকো।

ওদিকে রিয়াল মাদ্রিদে ধারে থাকা ফরাসি গোলরক্ষক আলফঁস আরেওলাকে আনতেও তেমন কোন আগ্রহ নেই পিএসজির। নাভাস ছাড়া পিএসজিতে আছেন তরুণ প্রতিভা মার্সিন বুলকা, তবে তাঁকে সরাসরি নাভাসের বিকল্প বানানোর ইচ্ছে নেই ফরাসি ক্লাবটির। ফরাসি সংবাদমাধ্যম লেকিপ জানিয়েছে, দলের বিকল্প গোলরক্ষকের জায়গায় এসি মিলানের স্প্যানিশ গোলরক্ষক পেপে রেইনাকে চাইছে পিএসজি। এক মৌসুমের ধারে আনা হবে তাঁকে।

টমাস মুনিয়ের চলে গেলে এক কলিন ডাগবা ছাড়া পিএসজির রাইটব্যাক হিসেবে আর কেউ থাকবে না। ডাগবাও মূল দলে খেলার মতো ঠিক উপযুক্ত নন। ফলে বেশ কয়েকজন রাইটব্যাকের দিকে নজর দিয়েছে পিএসজি। তবে এদের কেউই তেমন নামকরা কোনো তারকা নন। জার্মান ক্লাব মেইঞ্জের বাইশ বছর বয়সী রিডলে বাকু ও রেনেঁর মালিয়ান রাইটব্যাক হামারি ট্রায়োরে আপাতত আছেন পিএসজির দৃষ্টিসীমায়।

ত কোনো ধরনের সন্দেহ ছাড়াই রক্ষণভাগের বামদিকে তারকা খেলোয়াড় আনতে চলেছে পিএসজি। দুই ভাই থিও হার্নান্দেজ (এসি মিলান) ও লুকাস হার্নান্দেজ (বায়ার্ন মিউনিখ) কে পছন্দ তাদের। পছন্দ পোর্তোর ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাক অ্যালেক্স তেয়েসকেও। এর মধ্যে তেয়েসের আসার সম্ভাবনাই বেশি। জানা গেছে, তেয়েসের পেছনে আড়াই কোটি ইউরো খরচ করতে রাজি পিএসজি। ফলে থিও হার্নান্দেজ হয়তোবা না-ও আসতে পারেন। কিন্তু সেন্টারব্যাক হিসেবে থিওর ভাই লুকাস, নাপোলির কালিদু কুলিবালি, এসি মিলানের আলেসসিও রোমানিওলি – প্রত্যেকেই আছেন পিএসজির নজরে। লেফটব্যাক হিসেবে পিএসজি দলে ভেড়াতে পারে লাৎসিওর অ্যাডাম মারুসিচকেও।

আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডে জার্মান মিডফিল্ডার জুলিয়ান ড্রাক্সলারের প্রতি কোচ টমাস টুখেলের আস্থাহীনতার কারণে পিএসজি দলে আনতে পারে লিওঁর হুসাম ওয়ারকে। তবে শুধু পিএসজিই নয়, ওয়ারের পেছনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে ম্যানচেস্টার সিটি। জুভেন্টাস, লিভারপুলের মতো বেশ কিছু ক্লাব। জুভেন্টাসের মিডফিল্ডার মিরালেম পিয়ানিচও পিএসজির বেশ পছন্দের।

আক্রমণভাগে এডিনসন কাভানির বিকল্প হিসেবে এর মধ্যেই ইন্টার মিলান থেকে আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দিকে কিনেছে দলটি, ৭ কোটি ইউরোর বিনিময়ে।

তবে নেইমার-এমবাপ্পেদের সঙ্গী আসলেই কে বা কারা হচ্ছেন, সেটা জানার জন্য আরও মাসখানেক অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই, যখন দলবদলের সময়সীমা শেষ যাবে