আইসিসির প্রধান নির্বাহীকে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ আসছে

১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি ফাইনালের দিন এমন একটা ব্যানার চোখে পড়েছিল কুয়ালালালামপুরের কিলাত ক্লাব মাঠে। ছবি: সংগৃহীত
১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি ফাইনালের দিন এমন একটা ব্যানার চোখে পড়েছিল কুয়ালালালামপুরের কিলাত ক্লাব মাঠে। ছবি: সংগৃহীত

২০ বছর আগে বিরাট এক স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল বাংলাদেশের। দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা, নানা পরিকল্পনা–প্রস্তুতির ফল বাংলাদেশ পেয়েছিল ২০০০ সালের এই দিনে। লর্ডসে আইসিসির বার্ষিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে যখন বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পেল, পুরো দেশ আরেকবার নেচে উঠেছিল বিশাল এক প্রাপ্তির আনন্দে।

আজ সেটির ২০ বছর পূর্তি।

টেস্ট মর্যাদা পেতে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল বিসিবির কর্মকর্তাদের 'ক্রিকেট কূটনীতি'। তাঁরা এগিয়েছিলেন ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে। বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জিতেছিল ক্রিকেটাররা দুর্দান্ত খেলেছিলেন বলে। ওই সময়ের বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী মনে করিয়ে দিলেন, মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে এখানেও ক্রিকেট কূটনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
২৩ বছর আগের স্মৃতি রোমন্থন করে প্রথম আলোকে তিনি বললেন, 'আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল আইসিসি ট্রফি জেতা। তখন কিন্তু আরব আমিরাত, হল্যান্ডের মতো দেশ এগিয়ে আসছিল। কারণ তারা বিদেশিদের সুযোগ দিত। আরব আমিরাত দলে প্রচুর উপমহাদেশের খেলোয়াড়েরা খেলত। হল্যান্ড অনেক এশীয়কে সুযোগ দিত। হংকংও শক্তিশালী দল ছিল। ইংল্যান্ডের অনেকে হংকংয়ে গিয়ে খেলত। আমরা চেয়েছি, আইসিসি ট্রফির বাছাইয়ের নিয়মে পরিবর্তন আনতে। এটা খুবই জরুরি ছিল। আমাদের দাবির প্রেক্ষাপটে ১৯৯৬ সালের নভেম্বর–ডিসেম্বরে নিয়মটা বদলানো হলো। অবশ্য সহযোগী দেশগুলো আপত্তি তুলেছিল। অনেকের হয়তো মনে নেই, আইসিসি ট্রফি জেতার পেছনে এই নিয়ম পরিবর্তনটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। '

দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জেতে। তার আগে নিশ্চিত হয় বিশ্বকাপ খেলাও। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে কিলাত ক্লাব মাঠে ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে যখন বাংলাদেশ তখন উল্লাসে মেতেছে, সেখানে উপস্থিত ছিলেন তখনকার আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসও। উৎসবের মধ্যেই রিচার্ডসকে কী বলেছিলেন, ২৩ বছর পর সেটি মনে পড়ল সাবেরের, 'জেতার পর আমরা ভীষণ রোমাঞ্চিত, মাঠে ল্যাপ অব অনার দিচ্ছি। ওই উৎসবের মধ্যে আমি তাকে বলেছিলাম, আমরা কিন্তু আসছি। বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছি। এবার টেস্ট মর্যাদার জন্য আবেদন করব। তিনি আমার কথা শুনে হেসেছিলেন।'

লর্ডসে টেস্ট মর্যাদা পাবার দিন সে সময়কার অধিনায়ক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে সে সময়ের বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। আমিনুল বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে খেলেছিলন ১৪৫ রানের ঐতিহাসিক এক ইনিংস। ছবি: শামসুল হক
লর্ডসে টেস্ট মর্যাদা পাবার দিন সে সময়কার অধিনায়ক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে সে সময়ের বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। আমিনুল বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে খেলেছিলন ১৪৫ রানের ঐতিহাসিক এক ইনিংস। ছবি: শামসুল হক

বাংলাদেশ যখন আরোধ্য আইসিসি ট্রফি জয়ের আনন্দে মেতেছে, তখন গ্যালারিতে এক দল বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ব্যানার উঁচিয়ে ধরেছিলেন; যেখানে লেখা ছিল, 'নেক্সট টেস্ট প্লেয়িং নেশন? বাংলাদেশ।'

তাঁদের অনুমান সত্যি হয়েছে তিন বছরেই। ২০০০ সালের ২৬ জুন দীর্ঘ প্রস্তুতি, চেষ্টা আর পরিকল্পনার ফল পাওয়ার দিন হলেও ক্রিকেটের অভিজাত আঙিনা বাংলাদেশের পা রাখার ভিতটা বুনে দিয়েছিল আইসিসি ট্রফির ফাইনালটাই।