'মেসি আর রোনালদোকে যোগ করলে পেলে হয়'

মেসি ও রোনালদোর মান মিলিয়ে পেলের মানের সমান হবে, বলছেন টোস্টাও। ছবি: সংগৃহীত।
মেসি ও রোনালদোর মান মিলিয়ে পেলের মানের সমান হবে, বলছেন টোস্টাও। ছবি: সংগৃহীত।

সময়ের তো বটেই, গত ১২-১৫ বছরে লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন নিজেদের, সর্বকালের সেরাদের সঙ্গেই উচ্চারিত হয় তাঁদের নাম। সর্বকালের সেরা বিতর্কটা নিয়ে যদিও প্রশ্ন থাকে সব সময়ই, এক যুগের সঙ্গে অন্য যুগের ফুটবল গতি-কৌশলে-শারীরিক শক্তিতে মেলে না। দিন শেষে সর্বকালের সেরার উত্তরটা তাই ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ওপরই নির্ভর করে।

তাতে কারও চোখে লিওনেল মেসি সেরা, কারও চোখে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, কেউবা সর্বকালের সেরার বিতর্কে পেলে বা ম্যারাডোনার সামনে এ দুজনকে তুলনায়ই আনতে চান না। ব্রাজিল কিংবদন্তি টোস্টাও সম্ভবত এ শ্রেণিতেই পড়েন। সত্তর বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি ব্রাজিল দলের এই ফরোয়ার্ডের চোখে, মেসি আর রোনালদোকে যোগ করলে একজন পেলে হয়!

সত্তর বিশ্বকাপের ব্রাজিল দল এমনিতেই ইতিহাসে অনন্য। বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা দলের নাম বললেও ১৯৭০ বিশ্বকাপে মেক্সিকোতে আলো ছড়ানো সেই ব্রাজিল দলেরই নাম আসবে। বিশ্বকাপের আগে চোখের অস্ত্রোপচারের কারণে সেবার বিশ্বকাপ খেলাই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল টোস্টাওয়ের। তাঁর চোখের অস্ত্রোপচার করা ডাক্তার আলিস আর. ম্যাকফারসন পরে মজার একটা ঘটনা বলেছিলেন। সেটি এরকম, ‘জীবনে অনেক চোখের অস্ত্রোপচার করেছি। সব ক্ষেত্রেই প্রথম প্রশ্নটা হয়, ‘’আমি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাব?’’ আর এই ভদ্রলোকের (টোস্টাও) প্রশ্ন ছিল, ‘’আমি কি বিশ্বকাপ খেলতে পারব?’’

শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কিংবদন্তি বনে যাওয়া সেই ব্রাজিল দলে জায়গা হয় টোস্টাওয়ের। মূলত প্লেমেকার হলেও পরে প্রীতি ম্যাচে তাক লাগিয়ে পেলে-জেয়ারজিনহোদের দলে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন। বাকিটুকু তো ইতিহাসই! ১৯৬৬ বিশ্বকাপের দলেও ছিলেন টোস্টাও, সেবার গিয়েছিলেন পেলের ‘বিকল্প’ হয়ে। ’৭০ বিশ্বকাপে পেলের বিকল্প হিসেবে দলে প্রথমে সুযোগ পেলেও পরে তো পেলের পাশেই খেললেন।

তা তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সেরা ফুটবলারকে এত কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা থেকে পেলেকেই সবার চেয়ে এগিয়ে রাখেন টোস্টাও। ফিফার ওয়েবসাইটে এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এত বছরে তো ডিয়েগো ম্যারাডোনা, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির সঙ্গে পেলের তুলনা হয়েছে, টোস্টাওয়ের কাছে পেলেকেই সর্বকালের সেরা মনে হয় কি না? তাতে টোস্টাওয়ের উত্তর, ‘আমার চোখে পেলে এঁদের সবার চেয়ে ভালো। আমার কাছে এখানে কোনো তুলনার প্রশ্নই আসে না। পেলে অনেক অনেক বেশি পূর্ণাঙ্গ ফুটবলার ছিলেন। একজন ফরোয়ার্ডের যত গুন থাকা সম্ভব, তার সবই তাঁর ছিল। কোনো খুঁত ছিল না তাঁর।’

ম্যারাডোনা, মেসি ও রোনালদোর সঙ্গে পেলের পার্থক্যটাও তুলে ধরেছেন টোস্টাও, ‘ম্যারাডোনার খেলা দেখার জন্য দারুণ ছিল, কিন্তু শারীরিকভাবে সে পেলের পর্যায়ে ছিল না। পেলের মতো অত গোলও করতে পারেনি। মেসির খেলা দেখাও দারুণ, কিন্তু সে পেলের মতো এত দারুণ হেড করতে পারে না, দুই পায়ে এত ভালো শট নিতে পারে না, পেলে যেরকম দুর্দান্ত অনেক কারিকুরি দেখাত সেগুলো করে না। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দারুণ একজন খেলোয়াড় কিন্তু ওর পেলের মতো সামর্থ নেই। পেলে যেমন দারুণ সব পাস দিতে পারতেন, ও সেরকম পারে না।’

এরপরই হেসে টোস্টাও বলে দিলেন তাঁর চোখে পেলের মতো ফুটবলার পাওয়ার সমীকরণ, ‘আপনি যদি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও মেসির সব গুণ নেন, সেগুলো একসঙ্গে যোগ করেন, তখন পেলের সঙ্গে তুলনা করার মতো একজন খেলোয়াড় পাবেন।’