রিয়ালের পাওয়া পেনাল্টি ঠিক ছিল?

মার্সেলোর পা মাড়িয়ে দেন দানি গার্সিয়া। এখান থেকে পেনাল্টি পায় রিয়াল মাদ্রিদ। ছবি: টুইটার
মার্সেলোর পা মাড়িয়ে দেন দানি গার্সিয়া। এখান থেকে পেনাল্টি পায় রিয়াল মাদ্রিদ। ছবি: টুইটার

ব্যাপারটা অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যিনি যেদিকের সমর্থক, তিনি সেভাবে ঘটনার বিশ্লেষণ করবেন। রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থক হলে মনে হবে পেনাল্টিটা ঠিক ছিল, বার্সেলোনার সমর্থকদের অনেকেই আবার পেনাল্টিটা রেফারির পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মাতিয়ে রেখেছেন।

শুধু কী সমর্থক, রিয়ালের পক্ষে রেফারি সিদ্ধান্ত দেন – এমন ইঙ্গিত ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব বার্সেলোনার মিডফিল্ডার আর্তুরো ভিদাল আজও রিয়াল পেনাল্টি পাওয়ার পর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে শুধু একটা ইমোজি দিয়েছেন। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, এমন ইমোজি! টুইটারজুড়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক।

কিন্তু নিরপেক্ষ দৃষ্টি আসলে কী বলে, যে পেনাল্টিটা আজ অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মাঠে বিলবাও-রিয়াল ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে, সেটি ঠিক ছিল?

ম্যাচের তখন ৭২ মিনিট। বিলবাও বক্সে রিয়াল লেফটব্যাক মার্সেলোর পা মাড়িয়ে দেন বিলবাওয়ের দানি গার্সিয়া। রেফারি হোসে লুইস গনসালেস প্রথমে পেনাল্টি দেননি। ভিডিও সহায়ক রেফারির (ভিএআর) পরামর্শ শুনে মাঠে থাকা ভিএআর মনিটর দেখেন। তা দেখে তাঁর সিদ্ধান্ত – পেনাল্টি!

এর আগ পর্যন্ত গোল না পেয়ে ড্রয়ের শঙ্কাই পেয়ে বসেছিল রিয়ালকে। কিন্তু পেনাল্টিতে অধিনায়ক সার্জিও রামোসের গোলটি শেষ পর্যন্ত স্বস্তি এনে দিয়েছে জিনেদিন জিদানের দলকে। এনে দিয়েছে জয়ও। যে জয় শিরোপার আরেকটু কাছে নিয়ে গেছে রিয়ালকে। ৩৪ ম্যাচে ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রিয়াল। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় ভিয়ারিয়ালের মাঠে খেলতে নামা বার্সেলোনা ৩৩ ম্যাচে ৭০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুইয়ে। এ ম্যাচের পর দুই দলের ম্যাচ বাকি থাকবে আর চারটি, ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকা বার্সা আজ পয়েন্ট হারালেই হয়তো রিয়ালের শিরোপাজয় নিয়ে সংশয় বলতে গেলে আর থাকবেই না!

সাদা চোখের বিশ্লেষণ বলে, বক্সে মার্সেলোর পা মাড়িয়েছেন গার্সিয়া, পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। ধারাভাষ্যকারও তখন বলছিলেন, এটা পেনাল্টি। আর মার্কার রেফারিং বিশেষজ্ঞ আন্দুহার অলিভার রেডিও মার্কাতে বলেছেন, ‘প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম যে দানি গার্সিয়া মার্সেলোর পা মাড়িয়েছেন। এ ক্ষেত্রে পেনাল্টি দিতেই হতো।’

রাউল গার্সিয়ার পা মাড়িয়ে দেন সার্জিও রামোস। এ নিয়ে উঠেছে বিতর্ক। ছবি: টুইটার
রাউল গার্সিয়ার পা মাড়িয়ে দেন সার্জিও রামোস। এ নিয়ে উঠেছে বিতর্ক। ছবি: টুইটার

কিন্তু ওই যে, স্পেনের সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রেও তো এমন দলপ্রীতির অভিযোগ আছে! মাদ্রিদভিত্তিক পত্রিকা মার্কা যেখানে পেনাল্টিটি সঠিক বলে রায় দিয়েছে, বার্সেলোনাভিত্তিক পত্রিকা স্পোর্ত ম্যাচের প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছে, ‘ভিএআর আরেকবার লস ব্লাঙ্কোদের (রিয়ালের) জয়ে ভূমিকা রেখেছে।‘ প্রতিবেদনে ম্যাচের আরেকটি ঘটনার উল্লেখ আছে। রিয়ালের ওই পেনাল্টির কিছুক্ষণ পরই রিয়াল বক্সে বিলবাওয়ের রাউল গার্সিয়ার পা মাড়িয়ে দেন রামোসই। কিন্তু রেফারি সেটি দেখেননি, ভিএআরও নয়। সেটি নিয়ে স্পোর্ত লিখেছে, ‘...কিন্তু এ বেলায় রেফারি সিদ্ধান্তটা রিভিউই করেননি, যেটি বিলবাও খেলোয়াড়দের বিরক্তি বাড়িয়েছে।’

বিলবাওয়ের ইকার মুনিয়াইনকে উদ্ধৃত করে একটা খবরও ছেপেছে স্পোর্ত। যেখানে বিলবাও ফরোয়ার্ড বলেছেন, ‘রাউল গার্সিয়ার পা মাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাঁরা এটা রিভিউই করেননি, পার্থক্য এটাই। (করোনা বিরতির পর) খেলা আবার শুরুর পর থেকেই গত কয়েক সপ্তাহে আমরা দেখেছি কিছু কিছু দলের ক্ষেত্রে কিছু সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এ থেকেই সবাই নিজের মতো করে উপসংহার টানতে পারে।’ যদিও ওই ফাউলের সময় বল বক্সেই ছিল না। কিন্তু স্পোর্ত এটিকে ‘ভিএআরের দ্বৈতনীতি’ বলে শিরোনাম করেছে আরেক খবরে।

রামোস নিজে ম্যাচের পর এ নিয়ে কথা বলেছেন, ‘রাউল গার্সিয়ার ওই ব্যাপার নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে? আমার পা ওর জুতোর ওপর পড়েছে, এরপর আমি সেখান থেকে সরে গেছি। ইচ্ছাকৃত ছিল না সেটা।’

তবে মার্সেলোকে যিনি ফাউল করেছেন, সেই দানি গার্সিয়া ম্যাচের পর মার্সেলোর পা মাড়ানোর সময়ের ছবি দিয়ে টুইটে টেনে এনেছেন রামোসের রিয়াল বক্সে রাউল গার্সিয়ার পা মাড়ানোর ঘটনার কথাও, ‘আপনি বলতে পারেন না যে এটা ইচ্ছাকৃত ছিল, আর অন্যটা ইচ্ছাকৃত ছিল না। কারণ আমি দেখতে পাচ্ছি, ওর বল কেড়ে নিয়েছি, এরপর দুর্ভাগ্যবশত ওর (মার্সেলো) পায়ের ওপর আমার পা পড়েছে। কিন্তু এটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না যে ও আমার গিয়ে বল নিতে পারবে। যদি এটার জন্য রেফারি বাঁশি বাজান, তাহলে অন্যটার জন্যও (রাউল গার্সিয়ার ওপর রামোসের ফাউল) বাঁশি বাজাতে হতো। ভিএআরই ফুটবলকে নিয়ন্ত্রণ করছে।’

তাঁর দলের সঙ্গে জড়িয়ে রেফারিং নিয়ে এত বিতর্কে আগে থেকেই বিরক্ত জিদান আরেকবার ম্যাচ শেষে বিরক্তি জানিয়ে বলেছেন, ‘মানুষের মুখে আমরা রেফারিংয়ের কারণে জিতছি শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত। কিন্তু এসব কথা সম্ভবত আর শেষ হবে না! এই খেলোয়াড়দের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া উচিত।’

বিতর্ক একপাশে রাখলে করোনা বিরতির পর দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হওয়ারই কথা জিদানের। ৭ ম্যাচে ৭ জয় রিয়ালের, গোল করেছে ১৩টি, খেয়েছে মাত্র দুটি, এর মধ্যে আজকের ম্যাচ নিয়ে টানা চার ম্যাচে জাল অক্ষত রেখেছে রিয়াল। তবে ‘৭ ম্যাচে ৭ জয়কে দারুণ’ জানিয়েও জিদান লিগের শিরোপাদৌড়ে এতটুকু গা এলিয়ে দিতে রাজি নন, ‘গাণিতিকভাবে আমাদের শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা গা ছেড়ে দেব না। আমি বলব না লিগের শিরোপাদৌড়ের নিষ্পত্তি হয়েছে, খেলোয়াড় হিসেবেও এমন পরিস্থিতি দেখেছি আমি।’

ফরাসি কিংবদন্তি অভিজ্ঞতাই হয়তো রিয়ালের এমন দুরন্ত ছুটে চলার বড় কারণ।