'টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়'

বাফুফের ‘টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর’ পল স্মলি। ফাইল ছবি
বাফুফের ‘টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর’ পল স্মলি। ফাইল ছবি
>

বাংলাদেশের ফুটবলে বিতর্কিত ব্রিটিশ-অস্ট্রেলিয়ান কোচ পল স্মলিকে আবার দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে বাফুফে।

বাফুফের ‘টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর’ হিসেবে তিন বছর কাজ করে গত অক্টোবরে বিদায় নিয়েছিলেন। আট মাস না পেরোতেই বাংলাদেশের ফুটবলে বিতর্কিত এই ব্রিটিশ-অস্ট্রেলিয়ান পল স্মলিকে আবার দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিয়েছে বাফুফে। নতুন নিয়োগ পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রথম আলোর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

প্রশ্ন: আবারও বাফুফের ‘টেকনিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক্যাল ডিরেক্টর’ হওয়ায় অভিনন্দন। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই ব্রুনেইয়ের চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরার কারণ কী?
পল স্মলি: ব্রুনেইয়ে আমার ভূমিকা ছিল জাতীয় দলের প্রধান কোচ ও ডেভেলপমেন্ট প্রধানের। করোনাভাইরাসের কারণে দেশটির ফুটবল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আমিও আমার পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। তবে বাংলাদেশের প্রতি সব সময় আমার ভালোবাসা ছিল।
প্রশ্ন: এর আগে এই পদে তিন বছর কাজ করেছেন। সেটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
স্মলি: প্রথম পর্যায়ে যা অর্জন করেছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট। তবে অনেক কিছুই করার আছে। শেষ পর্যন্ত সভাপতি, টেকনিক্যাল কমিটি ও কার্যনির্বাহী সদস্যরাই আমার কাজের মূল্যায়ন করবেন। টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। কিছু ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের কাজ খুব কঠিনও। নানান ভূমিকায় আপনাকে কাজ করতে হবে। তবে এসব নিয়ে আমার কোনো অনুযোগ নেই। আমি কাজটা দারুণ উপভোগ করি।
প্রশ্ন: আপনি যেসব কাজ করতেন, বিচ্ছিন্নভাবে সে রকম কাজ আপনি আসার আগেও হয়েছে। তাহলে আপনার সাফল্য কোথায়? তৃণমূলের ফুটবল নিয়ে কাজ করলেন না কেন?
স্মলি: আমি আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। সবাইকে নিয়ে কাজ করেছি, সেটা তো চোখে পড়ার মতো। যে কৌশলগত কাজগুলো করলে দেশের ফুটবলের উন্নতি হতে পারে, সেসব জায়গায় কাজ করেছি। আরও একটা ব্যাপার মনে রাখা জরুরি—প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমরা কম বাজেট পেয়েছি। এরপরও তৃণমূল পর্যায়ে দারুণ কিছু কাজ হয়েছে। যদিও এই কাজে যথেষ্ট ধারাবাহিকতা ছিল না। ফুটবলে ভালো করতে হলে তৃণমূলে উন্নতি করতে হবেই। সামনের দিনগুলোতে এ জায়গায় আমাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে।
প্রশ্ন: আগেরবার মেয়েদের ফুটবলের সঙ্গেই বেশি সম্পৃক্ত ছিলেন। এবারও কি সেই ভূমিকায়ই আপনাকে বেশি দেখা যাবে?
স্মলি: গুরুত্বপূর্ণ সবদিকেই সমান মনোযোগ দেওয়ার ইচ্ছা আমার সব সময়ই ছিল। মেয়েদের ফুটবলও এর বাইরে নয়। এখানে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে। এ কারণেই মেয়েদের ফুটবলে আমাকে সময় বেশি দিতে হয়েছে এবং বলার মতো সফলতাও পেয়েছি আমরা।
প্রশ্ন: নতুন করে দায়িত্ব পাওয়ার পর আপনার পরিকল্পনা কী?
স্মলি: আমরা এত দিন যা শিখেছি, সেগুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। এরপর সামনের দিনগুলোর জন্য এএফসি ও ফিফার সঙ্গে মিলে চার বছরের জন্য ফুটবল উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজাতে হবে। এগুলো নিয়মমাফিক কাজ, তবে এটুকুই সব নয়। আরও অনেক কিছুই করার আছে।
প্রশ্ন: এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের পর ফর্টিজ একাডেমির কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। একাডেমির বিদেশি কোচদের ছেড়ে দিয়েছে বাফুফে, যাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। সব মিলিয়ে একাডেমির ভবিষ্যৎ নেই বলেই মনে করেন অনেকে। আপনি কী বলেন?
স্মলি: যুব ফুটবলে উন্নয়ন এত দ্রুত সম্ভব নয়। এর জন্য সময় লাগে, অর্থেরও প্রয়োজন। তরুণদের উন্নতির জন্য লম্বা সময় লেগে থাকতে হয়। আমি মনে করি, যে কাজ আমরা শুরু করেছিলাম, তার জন্য আমাদের প্রশংসাই পাওয়া উচিত। আর যেসব বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা ছিল দারুণ।
প্রশ্ন: এএফসির ‘একাডেমি অ্যাক্রেডিটেশন স্কিমের’ আওতায় সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা একাডেমিগুলোকে এক ছাতার নিচে আনতে যাচ্ছে বাফুফে। বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?
স্মলি: একাডেমিগুলোর সঙ্গে ফেডারেশনের বোঝাপড়া হতে হবে অর্থবহ। অ্যাক্রেডিটেশন স্কিমের আওতায় ফেডারেশন একাডেমিগুলোকে স্বীকৃতি দেবে, পুরস্কৃত করবে। এর ফলে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও কোচদের মান বাড়বে। বাফুফের চাহিদা মেটাতে পারলে তার ভিত্তিতে এক, দুই, তিন তারকা দিয়ে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।