বিশ্বকাপে ভারতকে কেন হারাতে পারে না পাকিস্তান

বিশ্বকাপ ইতিহাসে আগের ছয় ম্যাচের মতো ২০১৯ বিশ্বকাপে ম্যানচেস্টারে এই ম্যাচেও ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। ছবি: এএফপি
বিশ্বকাপ ইতিহাসে আগের ছয় ম্যাচের মতো ২০১৯ বিশ্বকাপে ম্যানচেস্টারে এই ম্যাচেও ভারতকে হারাতে পারেনি পাকিস্তান। ছবি: এএফপি

সেই ১৯৯২ সাল থেকে শুরু। ২০১৯ পর্যন্ত বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে মোট ৭টি ম্যাচ খেলে একটিতেও জিততে পারেনি পাকিস্তান। সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি 'ওদের এত বেশি হারাতাম যে হারের পর ভারতের খেলোয়াড়েরা এসে বলত ''ভাই, মাফ করে দাও'' বলে যে মন্তব্যটি করেছেন, তাতে রয়েছে তাঁর দেশের ক্রিকেটারদের শৌর্যবীর্যের ইঙ্গিত। কিন্তু আফ্রিদি একটি বারের জন্যও বিশ্বকাপে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচের ফলাফলের কথা উল্লেখ করেননি।

বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের 'সেভেন আপ' পারফরম্যান্স নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক হাসিঠাট্টাও করেন ভারতীয়রা। ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপে টেলিভিশন সম্প্রচারকদের তৈরি করা বিজ্ঞাপনেও নানাভাবে এসেছে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের ৭–০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার ব্যাপারটি। কিন্তু এমনটা কেন হয়! বিশ্বকাপ এলেই ভারতের বিপক্ষে কেন পাকিস্তান নখদন্তহীন বাঘে পরিণত হয়? এর নেপথ্যের কারণ খুঁজেছেন সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক ও বোলিং কিংবদন্তি ওয়াকার ইউনিস।

ওয়াকার নিজেও দুবার বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন। ১৯৯৬ সালে বেঙ্গালুরুতে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানের হারে তো অনেকেই তাঁকে দায়ী করেন। সে ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করা ভারতকে মোটামুটি নাগালের মধ্যেই রেখেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ওয়াকারের শেষ দুই ওভারই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

পাকিস্তানের ফাস্ট বোলিং কিংবদন্তির শেষ দুই ওভারে ৪০ রানের মতো নিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান অজয় জাদেজা। ভারত জিতেছিল ৪৩ রানে। ২০০৩ সালে সেঞ্চুরিয়নে শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড় আর যুবরাজ সিংয়ের কাছেই হেরেছিল পাকিস্তান। ওয়াকার ছিলেন পাকিস্তানের সেই দলের অধিনায়ক।

ওয়াকার ব্যাপারটি নিয়ে সব সময়ই ভাবেন, 'আমার বেঙ্গালুরুর কথা মনে আছে, মনে আছে সেঞ্চুরিয়নের কথাও। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের সবকটি ম্যাচই আমার মনে আছে। এর মধ্যে দুটিতে আমি খেলেছি।'

নির্দিষ্ট দিনে ভারত সব সময়ই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে ছিল বলে মনে করেন ওয়াকার, 'ভারত সব সময়ই ভালো দল। নির্দিষ্ট দিনে তারা অনেক বেশি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। ইতিবাচক মানসিকতায়, বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেট খেলেই তারা আমাদের হারিয়েছে।'

ভারত বুদ্ধিদীপ্ত ক্রিকেটের উল্টো দিকে পাকিস্তান বেশ কয়েকটি ম্যাচেই নিজেদের বোকামিতেই খেলা ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে বলে অভিমত ওয়াকারের, '১৯৯৬ বিশ্বকাপ কিংবা ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ভালো অবস্থানে ছিল পাকিস্তান। কিন্তু আমরা খেলা স্রেফ ভারতের হাতে তুলে দিয়ে এসেছি।'

নির্দিষ্ট করে বিশ্বকাপেই ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তান কেন জিততে পারে না, এ প্রশ্নের সঠিক উত্তরটা খুঁজেছেন ওয়াকার, 'নির্দিষ্ট করে কোনো কারণ বলাটা খুবই কঠিন। কেন যেন আমরা পারি না। আমরা তো দল হিসেবে কখনোই খারাপ ছিলাম না। হয়তো চাপের মুখে পাকিস্তান টিকে থাকতে পারেনি। ভারত হয়তো চাপটা ভালোমতোই নিয়ন্ত্রণ করেছে। পুরো ব্যাপারটাই হয়তো মানসিক। নির্দিষ্ট করে কিছু বলাটা সত্যিই কঠিন।'

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে সিডনিতে ইমরান খানের পাকিস্তানকে প্রথম হারিয়েছিল মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের ভারত। এরপর ১৯৯৬তে বেঙ্গালুরুতে, ১৯৯৯ সালে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ২০০৩ সালে প্রিটোরিয়ার সেঞ্চুরিয়নে, ২০১১ সালে মোহালিতে, ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে আর ২০১৯ বিশ্বকাপে আবারও ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ভারতের কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। এই ম্যাচগুলোর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল আর ২০১১ সালেরটি সেমিফাইনাল।