রিভিউতে মাঠের আম্পায়ারকে পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই, বলছেন টেন্ডুলকার

ডিআরএসের ব্যবহারের বর্তমানে নিয়মে আপত্তি আছে টেন্ডুলকারের। ছবি: এএফপি
ডিআরএসের ব্যবহারের বর্তমানে নিয়মে আপত্তি আছে টেন্ডুলকারের। ছবি: এএফপি
ডিআরএসের বর্তমান নিয়মে এলবিডব্লুর রিভিউর ক্ষেত্রে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

যত ঝামেলা এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই। অনেক সময় রিভিউতে দেখা যাচ্ছে, বলের অল্প একটু অংশ স্টাম্পে আঘাত হানছে, কিন্তু মাঠের আম্পায়ার 'নট আউট' দেওয়ায় সিদ্ধান্ত আর বদলাচ্ছে না। অথচ ওই একই বলের অতটুকু অংশ সরাসরি স্টাম্পে লাগলে আর বেল পড়লে তো বোল্ডই হতো! তাহলে স্টাম্পের সামনে পা রাখায় ব্যাটসম্যান বেঁচে যাবেন কেন?

এ জায়গাটাতেই আপত্তি শচীন টেন্ডুলকারের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারার সঙ্গে আলোচনায় তাঁর কথা, একবার ডিআরএসে গেলে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নয়, গুরুত্ব পাওয়া উচিত প্রযুক্তির সিদ্ধান্তই। এখন যেমন, বলের ৫০ শতাংশ স্টাম্পে আঘাত না হানলে আউট দেওয়া হয় না, সে নিয়মটা পাল্টানো উচিত বলে মনে হচ্ছে ভারতীয় ব্যাটিং কিংবদন্তির। টেনিসের মতো মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে পাত্তা না দিয়ে ডিআরএসে সবকিছু প্রযুক্তির হাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছেন টেন্ডুলকার।
প্রসঙ্গটা এসেছে করোনাভাইরাসের কারণে ক্রিকেটের নিয়মের বদলের প্রসঙ্গ ধরে। সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দিয়ে করোনা-বিরতি কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরেছে ক্রিকেট। তাতে অনেক বদলও এসেছে। তার মধ্যে দুটি – এক, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার কারণে এত বছরের রীতিতে ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্বাগতিক দেশের আম্পায়ার দিয়েই টেস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। দুই, আম্পায়াররা স্বাগতিক দেশের হওয়ায় ইনিংসে রিভিউর সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আগে যেখানে একটা দল ইনিংসপ্রতি দুটি রিভিউ পেত, এখন পাবে তিনটি।
সেটি নিয়েই '১০০এমবি' অ্যাপে লারার সঙ্গে কথা হচ্ছিল টেন্ডুলকারের। আলোচনার ভিডিওটি টুইটও করেছেন টেন্ডুলকার। তিনটি রেফারেলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন টেন্ডুলকার। নিরপেক্ষ আম্পায়ারের অনুপস্থিতিতে সেটা দুই দলের জন্যই 'ন্যায্য' বলে রায় তাঁর। পাশাপাশি সুযোগটা তো দুই দলই পাচ্ছে – এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
তবে এখানে আইসিসির সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেও টেন্ডুলকারের আপত্তি ডিআরএসের ক্ষেত্রে আইসিসির নিয়ম নিয়ে, 'তবে আইসিসির যে সিদ্ধান্তটার সঙ্গে আমি একমত নই, সেটি হচ্ছে অনেকদিন ধরে ডিআরএস যেভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এলবিডব্লুর ক্ষেত্রে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলাতে হলে বলের ৫০ শতাংশের বেশি স্টাম্পে আঘাত হানতে হবে। যদি আম্পায়ার নটআউট দেন, কিন্তু বলের ৫০ শতাংশ বা তার বেশি স্টাম্পে আঘাত হানে, শুধু তখনই (তৃতীয় আম্পায়ার) সিদ্ধান্তটা বদলাতে পারেন। অন্যথায় নয়। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত কেউ একজন – সেটা বোলারই হোক বা ব্যাটসম্যান – অখুশি বলেই তো রেফারেল নিচ্ছে!'
আর একবার তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে গেলে সে ক্ষেত্রে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের চেয়ে প্রযুক্তিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান টেন্ডুলকারের, 'একবার তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে গেলে প্রযুক্তির হাতেই সব ছেড়ে দিন না! টেনিসে যেমন, বল হয় 'ইন' নতুবা 'আউট' – মাঝামাঝি কিছু নেই। মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত এ ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলে না। এখানেও (ক্রিকেটে) তেমনটাই হওয়া উচিত। জানি অনেকে বলবেন, প্রযুক্তি শতভাগ সঠিক নয়, কিন্তু সেটা তো আমরা মানুষও নই। তাই একবার যখন প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেটার ওপরই নির্ভর করুন না!'
ভিডিওতে এ জায়গায় লারাও একমত পোষণ করেন টেন্ডুলকারের সঙ্গে, 'তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি। কারণ এখনকার পদ্ধতিতে (এলবিডব্লুতে) বল স্টাম্পের একটা জায়গায় আঘাত হানার ক্ষেত্রে (মাঠের আম্পায়ার নট আউট দেওয়ায়) হয়তো নটআউট দেওয়া হচ্ছে, আবার অন্য জায়গায় (মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত আউট হওয়ায়) আউট দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ একই ধরণের ডেলিভারিতে দুই ভিন্ন ধরণের ফল আসছে!'
ভিডিওটি টুইট করে সেখানেও টেন্ডুলকারের নিজের যুক্তির আরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, 'বলের কত শতাংশ স্টাম্পে আঘাত হানছে, তাতে কিছু যায়-আসে না। যদি ডিআরএস দেখায় যে বল স্টাম্পে আঘাত হানছে, তাহলে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন, এখানে আউটই দেওয়া উচিত। ক্রিকেটে প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্দেশ্য তো এটিই।'
সাবেক ভারতীয় অফস্পিনার হরভজন সিংও একমত টেন্ডুলকারের সঙ্গে। তাঁর টুইট, 'আপনার সঙ্গে শতভাগ একমত, ভাই। বল যদি স্টাম্পে আঘাত করে, বা একটু করে ছুঁয়েও যায় – সে ক্ষেত্রেও আউট দেওয়া উচিত। বলের কত অংশ স্টাম্পে আঘাত হানল সেটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ক্রিকেটের ভালোর জন্যই কিছু নিয়ম বদলানো উচিত, এটি তার একটি।'