সাকিব-তামিম-মুশফিকরাও যখন ইউটিউবার

সাকিব-তামিম-মুশফিকেরা ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব। ফাইল ছবি
সাকিব-তামিম-মুশফিকেরা ইদানীং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব। ফাইল ছবি
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের পর ক্রিকেটাররা এখন ঝুঁকছেন ইউটিউবে।

১৫-২০ মিনিট দৌড়ানো শেষ। একটু বিশ্রাম নিয়ে মোবাইল ফোনটা বিসিবির ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদারের হাতে তুলে দিলেন মুশফিকুর রহিম। এরপর আবার দৌড়। মোবাইল হাতে তুষার মুশফিকের দৌড় ভিডিও করতে লাগলেন।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে মুশফিকের ব্যক্তিগত অনুশীলনের প্রথম দিনের ঘটনা এটি। গতকাল আবার একই দৃশ্য দেখা গেল। এবার তো যেন স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে মুশফিকের শুটিংই চলছিল! বিসিবির মেডিকেল বিভাগের এক কর্মকর্তা মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে মুশফিকের ভিডিও করছেন।

অনুশীলনের ভিডিও, ছবি মুশফিক আরও আগে থেকেই তাঁর ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দিয়ে আসছেন। করোনাভাইরাসের সময় সেটি আরও বেড়েছে। ইদানীং মুশফিকের ভিডিও যাচ্ছে আরও একটা জায়গায়—তাঁর নিজের ইউটিউব চ্যানেলে। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। ক্রিকেটার মুশফিক এখন একজন ইউটিউবারও! শুধু মুশফিক কেন, করোনাকালে ঘরবন্দী সময়ে ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালও।

‘মুশফিকুর রহিম’ নামে মুশফিকের ইউটিউব চ্যানেল আত্মপ্রকাশ করে ১৫ জুলাই। সেখানে দেখা যাচ্ছে তাঁর প্রতিদিনের অনুশীলনের ভিডিও। এক সপ্তাহে মাত্র ৫টি ভিডিও আপলোড করেই মুশফিকের চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার প্রায় ১৪ হাজারে পৌঁছে গেছে।

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে ইউটিউব চ্যানেল জনপ্রিয় করেন ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তামিমকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমবিমুখ হিসেবেই জানত সবাই। কিন্তু করোনার গৃহবন্দী সময়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে লাইভ অনুষ্ঠান করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দেন তিনি। এর মধ্যেই খুলে ফেলেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘তামিম ইকবাল’। খোলার পর গত কয়েক মাসেই সাবস্ক্রাইবার এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। করোনাকালে ক্রিকেটারদের সঙ্গে অনুষ্ঠান ও নিজের ছেলের সঙ্গে খুনসুটির বেশ কিছু ভিডিও দিয়েছেন তামিম তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে।

তামিম-মুশফিকের মতো ইউটিউব চ্যানেলের মালিক সাকিব আল হাসানও। ছোট কন্যা জান্নাতকে নিয়ে নিজের চ্যানেলের প্রথম ভিডিও তৈরি করেন সাকিব। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির হাইলাইটসও এখন পাওয়া যায় সাকিবের চ্যানেলে। ‘সাকিব আল হাসান’ নামে চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার।

অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীসও আছেন ইউটিউবারদের দলে। দুই সপ্তাহ আগে নিজের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে বেশ ঘটা করেই নিজের চ্যানেলের যাত্রা শুরু করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। নিজের স্মরণীয় ইনিংস, অনুশীলন ও ক্রিকেট ক্যারিয়ারের স্মরণীয় গল্প ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করছেন ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে। দুই সপ্তাহে প্রায় এক হাজার সাবস্ক্রাইবার ‘শাহরিয়ার নাফীস’ নামের চ্যানেলটির।

এখন মোস্তাফিজও ফেসবুকে নিজের অনুশীলনের ছবি দিচ্ছেন। ছবি: ফেসবুক
এখন মোস্তাফিজও ফেসবুকে নিজের অনুশীলনের ছবি দিচ্ছেন। ছবি: ফেসবুক

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বাংলাদেশের প্রায় সব ক্রিকেটারই সরব। ক্যামেরা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করা বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও গতকাল প্রথমবারের মতো ঘরের ভেতর নিজের অনুশীলনের ছবি শেয়ার করেছেন।

আবার ব্যতিক্রমও আছেন। মোহাম্মদ মিঠুন যেমন কোনো ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই নেই। টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করলেও তাঁকে অনুশীলনের ছবি বা ভিডিও পোস্ট করতে দেখা যায় না।

ভারত, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন সাবেক ক্রিকেটার ইউটিউবার হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার শোয়েব আখতার, রমিজ রাজা, ভারতের আকাশ চোপড়া তো রীতিমতো ইউটিউব তারকা! অস্ট্রেলিয়ার সাবেক চায়নাম্যান ব্র্যাড হগও এই মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়।

খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন ইউটিউবে বেশ সরব। করোনার লকডাউনে নিজের নামে চ্যানেল খুলে অভিনেতা, ক্রিকেটার ও অন্য খেলার তারকাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে মাতিয়ে রাখছেন নিজের চ্যানেল। অশ্বিন, মুশফিক, তামিমদের মতো পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমিরেরও আছে ইউটিউব চ্যানেল।

করোনাভাইরাস মানুষের জীবনকে কতভাবেই না বদলে দিয়েছে! তামিম-মুশফিকদের ইউটিউবার হয়ে ওঠাও সে বদলেরই অংশ।