আশরাফুলের রেকর্ডটা হতে পারত টেন্ডুলকারের

২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবচেয়ে কমবয়সে টেস্টে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবচেয়ে কমবয়সে টেস্টে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

দুই বছরের কিছু বেশি সময় আর ১৩ টেস্ট—শচীন টেন্ডুলকারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষা এতটুকুই ছিল। কিন্তু একটু এদিক-ওদিক হলে, একটু বুঝেশুনে খেললে, তারুণ্যের চপলতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা ক্যারিয়ারের তৃতীয় মাসে ষষ্ঠ টেস্টেই পেয়ে যেতে পারতেন ভারতীয় ব্যাটিং কিংবদন্তি, এমনই মনে হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের সাবেক পেসার ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার ড্যানি মরিসনের।

সেঞ্চুরিটা পেলে টেস্ট ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানও হয়ে যেতে পারতেন টেন্ডুলকার, যে রেকর্ডে এখনো জ্বলজ্বলে বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম। ২০০১ সালে কলম্বোতে অভিষেক টেস্টে মুরালি-ভাসদের সামলেই মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সী আশরাফুলের ১১৪ রানের ইনিংসটি ঠাঁই করে নিয়েছে ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে।

সে জায়গায় টেন্ডুলকারের নাম ওঠেনি মাত্র ১২ রানের জন্য। ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলা টেন্ডুলকার পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে তখন নিউজিল্যান্ড সফরে, তাঁর বয়স তখনো ১৭ হয়নি। এর আগে ফয়সালাবাদে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ফিফটি পাওয়া টেন্ডুলকারের নামের পাশে পাকিস্তান সফর শেষে চার টেস্টে দুটি ফিফটি ছিল।

নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চে প্রথম টেস্টে বলার মতো কিছু করতে পারেননি। কিন্তু নেপিয়ারে দ্বিতীয় টেস্টে টেন্ডুলকারের ব্যাটে ঝলক। প্রথম ইনিংসে ২৬৬ বলে ৮৮ রানের ইনিংস, চার ৫টি। মনে হচ্ছিল, ১৯৬১ সালে ভারতের বিপক্ষে মুশতাক মুহাম্মদের সে সময়ের রেকর্ড ভেঙে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যাবেন টেন্ডুলকার। মুহাম্মদ রেকর্ড গড়েছিলেন ১৭ বছর ১০৭ দিন বয়সে, আর নেপিয়ারে টেস্ট শুরু হওয়ার দিনে টেন্ডুলকারের বয়স ছিল ১৬ বছর ২৮৬ দিন।

সেদিন যাঁর বলে আউট হয়েছিলেন টেন্ডুলকার, সেই ড্যানি মরিসনেরই মনে হচ্ছে, টেন্ডুলকারকে সেদিন তারুণ্যের চপলতা পেয়ে না বসলে সেঞ্চুরিটা পেয়েই যেতেন। যদিও ওই ইনিংসের আগেই টেন্ডুলকারের প্রতিভার কথা জেনে গিয়েছিলেন তাঁরা। ‘ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে প্রেসিডেন্ট একাদশের অধিনায়ক ছিল কেন রাদারফোর্ড, সে ম্যাচে টেন্ডুলকার খেলেছিল। মনে আছে, দলের সভায় রাদারফোর্ড বলছিল, ‘‘এই ছেলেটা বল খেলার আগে অনেক সময় বের করে নিতে জানে। অনেক বিশেষ প্রতিভা মনে হচ্ছে ওকে।’’ একদিক থেকে ভাবলে ব্যাপারটা বিস্ময়করই ছিল, কারণ ওকে (টেন্ডুলকার) দেখে মনে হতো ও তো স্কুলের প্রথম বছরে পড়ার মতো! মাত্র ১৭ চলছিল তখন ওর’—দ্য এজেস এন্ড স্লেজড পডকাস্টে (অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠান) বলেছেন মরিসন।

নেপিয়ারের ওই ইনিংসেও টেন্ডুলকারের ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে মরিসনকে, ‘এখানে ও এই বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছিল। কী দারুণভাবে বলের লাইনে যাচ্ছিল, মাঝে মাঝে এত দারুণভাবে রিচার্ড হ্যাডলির বল ছেড়ে দিচ্ছিল। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে সবারই তো একটু-আধটু ভয় থাকে মনে! আমার মনে হয় ও এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটা টেস্ট (আসলে চারটি) খেলেছিল শুধু। ওটাই ছিল ওর প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিরিজ, ও খেলছিল হ্যাডলির বিপক্ষে! হতে পারে হ্যাডলি তখন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছিলেন, কিন্তু তখনো তো কী দারুণ বোলার ছিলেন!’

সেই হ্যাডলি-মরিসনদের সামলে সেঞ্চুরিদের দিকে এগোতে থাকা টেন্ডুলকার হঠাৎ মরিসনকে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন জন রাইটের হাতে, যে রাইট পরে ভারতের কোচ হয়েছিলেন। মরিসনের মনে হচ্ছে, তারুণ্যের তাড়না থেকেই ওই শটটা খেলেছিলেন টেন্ডুলকার, ‘নেপিয়ারে ওর ৮৮ রানের ইনিংসটার কথা মনে আছে। (সেঞ্চুরিতে যেতে) এত তাড়াহুড়ো করছিল ও! সম্ভবত আমাকে এক ওভারেই তিনটি চার মেরেছিল, ওর মধ্যে তারুণ্যের সেই চপলতাটা তখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। ও এভাবেই চালিয়ে খেলতে চেয়েছিল, কিন্তু আমার বলে জন রাইটের হাতে (মিড অফে) ক্যাচ তুলে দিল।’

ওই ক্যাচই তাঁকে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান হতে দেয়নি, সে আক্ষেপ টেন্ডুলকারকেও পোড়াচ্ছিল। মরিসনের কথায়ই তেমন আভাস, ‘ও তাড়াহুড়ো করছিল এ কারণেই বলছি যে, সেঞ্চুরিটা হলে ও সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান হতো। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সেটা, এত ধীর পায়ে মাঠ ছাড়ছিল! ভারতের দর্শকেরা সেঞ্চুরিটা দেখতে পারলে খুব খুশি হতেন। ৮৮ রানেই আউট হয়ে গেল ও! তবে খেলাটা এমনই। যে শট খেলে আউট হয়েছে, এমন শট খেলে হয়তো দ্বিতীয় বলেই আউট হতে পারত। কিন্তু কী দারুণ ইনিংসই না খেলল! সত্যিকারের প্রতিভা ছিল ও, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই।’