ইম্মোবিলে, সোনার বুট ও বিতর্কিত ইতিহাস

চিরো ইম্মোবিলের হাতেই উঠছে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু। ফাইল ছবি
চিরো ইম্মোবিলের হাতেই উঠছে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু। ফাইল ছবি

নিশ্চিত হয়ে গেল ১৩ বছর পর কোনো ইতালিয়ান পাচ্ছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু বা সোনার জুতো। সিরি ‘আ’র ৩৭ তম রাউন্ডে ৩৫ তম গোল করে বায়ার্ন মিউনিখের রবার্ট লেভানডফস্কিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন লাৎসিওর চিরো ইম্মোবিলে। ইতালিয়ান স্ট্রাইকারকে টপকানোর গাণিতিক সম্ভাবনা ছিল শুধু জুভেন্টাসের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। কিন্তু চার গোলে পিছিয়ে থাকা পর্তুগিজ মহাতারকাকে আজ রোমার বিপক্ষে লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে না খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই ম্যাচ হাতে রেখে লিগ জেতা জুভ। কোচ মরিসিও সারি ২৪ জনের দলেই রাখেননি সিআর সেভেনকে।

ইম্মোবিলের আগে সর্বশেষ ইতালিয়ান হিসেবে গোল্ডেন শু জিতেছিলেন ফ্রান্সেসকো টট্টি। ২০০৬-০৭ মৌসুমে ২৬ গোল করেছিলেন রোমার ‘সম্রাট’। ঠিক আগের মৌসুমেও ইতালিয়ানদের হাতে ওঠে গোল্ডেন শু। ফিওরেন্তিনার লুকা টনি ৩১ গোল করে পান তা। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে চালু হওয়া গোল্ডেন শু জেতা ইতালিয়ান এই তিনজনই। টট্টি জেতার পরে সর্বশেষ ১৩ মৌসুমে লিওনেল মেসি (৬) ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা (৪) মিলেই জিতেছেন ১০ বার।

এখন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু দেওয়া হয় লিগের মান ভিত্তিতে দেওয়া পয়েন্টের হিসেবে। ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোতে প্রতিটি গোলের জন্য ২ পয়েন্ট, অন্য লিগগুলোতে কোনোটির গোলপ্রতি পয়েন্ট ১.৫, কোনোটির ১।

এক সময় অবশ্য পয়েন্টের কোনো হিসাবনিকাশ ছিল না। পুরো ইউরোপে সবচেয়ে বেশি গোল করার হাতেই উঠত গোল্ডেন শু। বেশ কিছু বিতর্কের পর পরিবর্তন আসে নিয়মে, আসে পয়েন্ট পদ্ধতি। এই পরিবর্তনে বড় দায় রোমানিয়া ও সাইপ্রাসের।

লিগ জেতার জন্য কিংবা অবনমন বাঁচাতে বিশ্বের নানা প্রান্তে অনেক দলই পাতানো ম্যাচের আশ্রয় নেয়। কিন্তু সর্বোচ্চ গোলদাতা হতেও যে পাতানো ম্যাচের আয়োজন করা যায় সেটির প্রমাণ দিয়েছিল ইউরোপিয়ান দেশ রোমানিয়া। ১৯৮৭ সালে নিজেদের লিগের এক খেলোয়াড়কে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পাইয়ে দিতে রীতিমতো ঘটা করে পাতানো ম্যাচের আয়োজন করেছিল রোমানিয়ান ফুটবল কর্তারা।

চার বছর পর আরেক কাণ্ড করে সাইপ্রাসের ফুটবল ফেডারেশন। তাঁরা দাবি করে তাঁদের এক খেলোয়াড় ৪০ গোল করেছে। তাই গোল্ডেন শুটা সেই খেলোয়াড়কেই দেওয়া উচিত। কিন্তু সাইপ্রাস লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের আনুষ্ঠানিক তালিকায় আবার দেখায় ওই মৌসুমে লিগে কোনো খেলোয়াড় ১৯ গোলের বেশি করেননি। এই ঝামেলা মেটাতে না পেরে স্থগিতই করে দেওয়া হয়েছিল সেই মৌসুমের গোল্ডেন শু। ১৫ বছর পর মেটে ওই ঝামেলা। অনেক গবেষণার পর রেড স্টার বেলগ্রেডের দারকো পানচেভকে দেওয়া হয় ১৯৯০-৯১ মৌসুমের ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতার স্বীকৃতি। ৩৪ গোল করেছিলেন সাবেক যুগোস্লাভিয়া ও মেসিডোনিয়ার হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা পানচেভ।

সাইপ্রিয়টদের ওই কাণ্ডের পর একরকম বাধ্য হয়েই টানা ছয় মৌসুম কাউকে গোল্ডেন শু দেয়নি আয়োজক ফরাসি পত্রিকা লে’কিপ। লে’কিপ এরপর সরেই দাঁড়ায় আয়োজন থেকে। নিয়মকানুন পরিবর্তন করে ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু দেওয়ার দায়িত্ব নেয় ইউরোপিয়ান স্পোর্টস মিডিয়া।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমের অস্ট্রিয়ান বুন্দেসলিগাটা যখন শেষ হলো ৩৮ গোল করে ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন অস্ট্রিয়া ভিয়েন ক্লাবের তারকা টনি পোলস্টার। পোলস্টার লিগে শেষ ম্যাচটা খেলার সময় রোমানিয়ান ক্লাব দিনামো বুখারেস্টের স্ট্রাইকার রোদিওন কামাতারুর গোল ছিল ২৬ টি, তবে হাতে ম্যাচ ছিল ৬ টি। কিন্তু সেই ৬ ম্যাচেই কামাতারু পোলস্টারকে ছাড়িয়ে যাবেন কে চিন্তা করেছিল! কিন্তু শেষ ৬ ম্যাচে সেই কামাতারু গোল করে বসেন ১৮ টি। ৩৩ ম্যাচের লিগে মোট ৪৪ গোল করে গোল্ডেন শুটা হাতে তোলেন কামাতারু।

পরে পাতানো ম্যাচের অভিযোগে বাতিল করা হয় কামাতারুর স্বীকৃতি। নতুন করে গোল্ডেন শু দেওয়া হয় পোলস্টারকে। তবে সোনার জুতোটা কখনোই ফেরত দিতে হয়নি দিনামো বুখারেস্ট স্ট্রাইকারকে। তাঁর কাছে ফেরতই চায়নি লে’কিপ।

কামাতারু অবশ্য সব সময়ই দাবি করে এসেছেন তাঁর গোল্ডেন শু পাওয়া নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রের কথা তাঁর জানা নেই, ‘আমি যা জানি তা হলো আমি ওই গোলগুলো করেছি। আর কেউ আমাকে বলটাকে জালে পাঠাতে আমাকে সাহায্য করার জন্য দাঁড়িয়েও ছিল না। আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ অভিযুক্তও করেনি কখনো, পুরস্কারটাও ফেরত চায়নি কেউ। পোলস্টার কীভাবে ৩৯ গোল করেছে সেই প্রশ্ন তো কেউ তোলেনি।’