প্রেমিকাকে ফোন করে কাঁদতেন ইশান্ত শর্মা
বেধরক মার খেয়েছিলেন ইশান্ত শর্মা। যেমন-তেমন মার নয়, এক ওভারে চার ছক্কাসহ ৩০ রান দিয়েছিলেন জেমস ফকনারকে। এমন এক ওভারে ভালো অবস্থানে থাকা ভারত হেরে বসেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। সে ম্যাচের ধাক্কা সমালাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ভারতীয় পেসারকে। এতটাই খারাপ অবস্থা হয়েছিল যে প্রেমিকাকে ফোন করে কান্নাকাটি করতেন ইশান্ত।
ভারতীয় পেস আক্রমণের চেহারা বদলে গেছে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে এখন প্রতিপক্ষের পরীক্ষা নিতে জানে এই আক্রমণ। টেস্টে সে আক্রমণের নেতৃত্ব ইশান্তই দেন। তিন শ উইকেটের মাইলফলকের চেয়ে মাত্র ৩ উইকেট দূরে থাকা এই পেসারের ধারণা, ফকনারের হাতে বেদম পিটুনি খাওয়াই তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছে।
‘২০১৩ সালেই আমার জীবন বদলে গেছে। মোহালিতে এক ওয়ানডেতে আমার এক ওভারে ৩০ রান নিয়েছিল ফকনার, অস্ট্রেলিয়া শেষ পর্যন্ত জিতেছিল সে ম্যাচ।’— ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর ক্রিকেটবাজির এক পর্বে এসে জানালেন ইশান্ত। ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে জয়ের পথে ছিল ভারত। শেষ ৩ ওভারে ৪৪ রান দরকার, এমন পরিস্থিতিতে ধোনি ইশান্তের হাতে বল তুলে দেন। ইশান্তকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে মুহূর্ত উপহার দিয়ে ম্যাচ বের করে নেন ফকনার। ২৯ বলে ৬৪ রান করে ম্যাচ সেরা হন ২০১৫ বিশ্বকাপ ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়। আর পরের ম্যাচে বাদ পড়েন ইশান্ত।
ওই ম্যাচের পর নাকি কয়েক সপ্তাহ একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন ইশান্ত, ‘তখন মনে হয়েছিল নিজের সঙ্গে, দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। দুই-তিন সপ্তাহ আমি কারও সঙ্গে কথা বলিনি। অনেক কেঁদেছি। আমি খুব শক্ত ধাঁচের লোক। আমার মা বলে এমন শক্ত কাউকে কখনো দেখেননি। কিন্তু সেই আমি প্রেমিকাকে ফোন করে বাচ্চার মতো কেঁদেছি। ওই তিন সপ্তাহ দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে। খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঘুমাতে বা কিছু করতে পারতাম না। টিভি খুললেই দেখতাম মানুষ আমার সমালোচনা করছে। এটা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিত।’
এ ঘটনার পর নিজের বোলিং নিয়ে আরও ভালোভাবে ভাবতে শুরু করেন ইশান্ত। আর নতুন করে নিজেকে গড়ে তোলার এ চেষ্টাই বদলে দিয়েছে তাঁকে। দিন দিন নতুন দক্ষতা ও কৌশল অর্জন করে ফিরে পেয়েছেন নিজের আত্মবিশ্বাস, ‘এখন ওসব নিয়ে ভাবলে হাসি আসে। আমার মনে হয় আমার জন্য ওটা শাপেবর ছিল। মাঝে মাঝে নিজের আবেগ টের পেতেও ধাক্কা লাগে একটা। ফকনারের ওই ঘটনার পর আমি জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন এনেছি। ২০১৩ সালের পর সবকিছু গুরুত্ব দিতে শিখেছি। আগে খারাপ করার পর মানুষ এসে বলত, “সমস্যা নেই, এ রকম হয়।” কিন্তু এর পর থেকে আমি এসব বিশ্বাস করতাম না। কোনো ভুল হওয়ার মানে হলো আমি ভুল করেছি। আমি নিজের ভুলের দায়িত্ব নিতে শুরু করলাম। যখন এটা করবেন, তখন প্রতিটি ম্যাচ আপনি দলের জয়ের জন্য খেলা শুরু করবেন।’