ওয়ার্নের 'শতাব্দীর সেরা'র চেয়েও ভালো টেন্ডুলকারকে ফেরানো ডেলিভারি?

টেস্টে চারবার পানেসারের বলে আউট হয়েছেন টেন্ডুলকার। ছবি: বিসিসিআই
টেস্টে চারবার পানেসারের বলে আউট হয়েছেন টেন্ডুলকার। ছবি: বিসিসিআই

মাইক গ্যাটিং বুঝতেই পারেননি। বলটা লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরে পড়েছিল। লেগ স্পিনে এত বাইরের বল স্টাম্পে তো আর আসবে না - ভেবে বলটা ছেড়ে দিয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। কিন্তু গ্যাটিংকে হতবুদ্ধি করে রেখে শেন ওয়ার্নের বল আঘাত হানল গ্যাটিংয়ের অফ স্টাম্পে।

১৯৯৩ অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের সেই ডেলিভারির এমনই মহিমা, সেটি স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছিল গত শতাব্দীর সেরা বলের। সেই বলের চেয়েও ভালো কোনো বল কেউ করলে অনেক আলোচনাই তো হওয়ার কথা, তাই না? অথচ তুলনায় অনেকটা আড়ালে থাকা নিজের এক ডেলিভারি নিয়ে এবার এমন দাবি করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার মন্টি পানেসার।

পানেসারের কোন ডেলিভারি? ২০১২ সালে মুম্বাই টেস্টে যে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে শচীন টেন্ডুলকারকে বোল্ড করেছিলেন পানেসার।
সে সফরে আহমেদাবাদে প্রথম টেস্টে ৯ উইকেটে হেরেছিল ইংল্যান্ড। মুম্বাইয়ে দ্বিতীয় টেস্টে পিচ ছিল স্পিন-স্বর্গ, তা দেখে দলে পানেসারকে নিয়ে আসে ইংল্যান্ড। ঢুকেই পানেসারের চমক! আগে ব্যাট করা ভারতের পাঁচ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে লেগে থাকার মতো ডেলিভারি টেন্ডুলকারকে আউট করা। যেকোনো বাঁহাতি স্পিনারের স্বপ্নের মতো ডেলিভারিই বটে!

অবশ্য ওয়ার্নের বলের মতো ঘূর্ণির ধারেকাছেও ছিল না পানেসারের বলটাতে। লেগ স্টাম্পের ইঞ্চি দু-এক হয়তো বাইরে পড়ে স্টাম্পের দিকে ঢুকেছে বলটা। টেন্ডুলকার সামনের পায়ে এসে আলতো করে মিড-অনে ঠেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বলটা ভারতীয় ব্যাটিং কিংবদন্তির ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে লাগল অফ স্টাম্পে। দ্বিতীয় ইনিংসেও টেন্ডুলকারকে ফেরান পানেসার। ২০০৫ সালে টেন্ডুলকারকে আউট করেই টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম উইকেটের স্বাদ পাওয়া পানেসার সব মিলিয়ে ১১ টেস্টে টেন্ডুলকারকে ফিরিয়েছেন ৪ বার।

তবে মুম্বাইয়ে আট বছর আগের ওই আউটটাই ইংলিশ স্পিনারের মনে গেঁথে আছে। ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে পানেসারের স্মৃতিচারণ, ‘যখন টেন্ডুলকারকে ওই বলটা করেছিলাম, অনুশীলনে কী কী করেছি সব মাথায় ঘুরছিল। ওই টেস্টে বল করার সময় আমার নিজেকে এত ফিট মনে হচ্ছিল! শক্তি পাচ্ছিলাম অনেক, বোলিংয়ের অ্যাকশনটাতে স্বস্তি পাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল আমি বলকে ইচ্ছেমতো ফ্লাইট দিতে পারব, ঘোরাতে পারব। মনে আছে, নিজেকে বলছিলাম, আমি অফ স্টাম্পের ওপরের ভাগে আঘাত করতে চাই। সেটাই করেছি।’

টেস্টের প্রথম দিনেই তৃতীয়-চতুর্থ দিনের স্পিন পাওয়া মুম্বাইয়ের পিচে সেদিন সবকিছু যে পানেসারের ইচ্ছেমতোই হচ্ছিল, তাঁর প্রমাণ এর আগে-পরে পানেসার একে একে বীরেন্দর শেবাগ, বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ফিরিয়েছেন।

কিন্তু টেন্ডুলকারের উইকেটের মাহাত্ম্য যে অনেক বেশি। একে সেটি টেন্ডুলকারের উইকেট বলে, তার ওপর সেটি যদি আসে এমন ডেলিভারিতে। ‘মাঝে মাঝে আগে থেকেই এমন কিছু কল্পনায় আসে, তাই না?’ - বলছিলেন পানেসার। ওই সময় তাঁর মনে কী চলছিল, তা-ও বলছিলেন, ‘আমি শুধু ভেবেছিলাম এই বলটা অফ স্টাম্পের ওপরের দিকে আঘাত হানুক। শচীন ভাই মিড অনে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বলটা পিচে পড়ে উঠে গেল, অফ স্টাম্পে গিয়ে লাগল।’

বলটা দারুণই ছিল, কিন্তু সেটিকে শেন ওয়ার্নের সেই ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’র সঙ্গে তুলনা সেভাবে কেউ কখনো সম্ভবত করেননি। কিন্তু পানেসারের ভাবনা ভিন্ন। তাঁর চোখে তাঁর ডেলিভারি শুধু ওয়ার্নের ডেলিভারির সঙ্গে তুলনায় আসার মতোই নয়, সেটিকে ছাপিয়ে যাওয়ারও দাবি রাখে!

কেন এমন মনে হচ্ছে পানেসারের? ইংলিশ স্পিনারের ব্যাখ্যা, ‘ডেলিভারিটা দেখুন। শটটা খেলার সময় তাঁর (টেন্ডুলকার) শরীরের ভারসাম্য একেবারে নিখুঁত ছিল, কিন্তু তিনি বলের লেংথ আর কতটুকু ঘুরতে পারে সেটি পড়ায় যত ভুল করে ফেলেছেন। আমি যে গতিতে বল করছিলাম, তাতে তিনি সত্যি সত্যিই ভেবেছিলেন বলটা লেগ স্টাম্পের দিকে স্কিড করবে। কিন্তু তা হয়নি। দারুণ একটা বল ছিল ওটা। আমি বলব এটা এমন একটা বল ছিল যেটা হয়তো শেন ওয়ার্নের বলের চেয়েও ভালো ছিল।’

এতটুকু নিশ্চিত, পানেসারের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক হবে অনেক।