হাসপাতালে বাবা, মাঠে লড়ছিলেন বাটলার

বাবাকে হাসপাতালে রেখেই এমন ইনিংস বাটলারের। ছবি: এএফপি
বাবাকে হাসপাতালে রেখেই এমন ইনিংস বাটলারের। ছবি: এএফপি

অধিনায়ক জো রুট ব্যাপারটা বলেই ফেললেন। এমন একটা কাহিনি তিনি কী না বলে থাকতে পারেন! জস বাটলারের লড়াইটা যে কেবল ব্যাট হাতে পাকিস্তানি বোলারদের বিপক্ষেই ছিল না, ছিল নিজের বিধ্বস্ত মানসিকতার বিরুদ্ধেও। বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। আর অনিশ্চয়তা মাথায় করেই খেলে যাচ্ছেন ছেলে। পেশা ও দেশের প্রতি কতটা আত্মনিবেদন থাকলে এমনটা কেউ করতে পারেন!

বাটলার ১০১ বলে ৭৫ রান করে ইংল্যান্ডকে জিতিয়েছেন। কিন্তু তাঁর মাথায় ঘুরছিল অনেক কিছুই। উইকেটরক্ষকের ভূমিকা খুব ভালো পালন করতে পারেননি। অনেক দিন ধরেই ব্যাটে বড় রান নেই, বাবা অসুস্থ। তীব্র মানসিক চাপ জয় করেই খেলা সেই ইনিংস। অধিনায়ক জো রুট যখন এসব বলছিলেন, সতীর্থের জন্য গর্বে তাঁর চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছিল।

রুট এমনিতেই বাটলারের খুব ভালো বন্ধু। তিনি জানতেন বাটলারের বাবার অসুস্থতার খবরটি। কিন্তু বন্ধু নিজেই অনুরোধ করেছিলেন দল জেতা না পর্যন্ত ব্যাপারটি যেন গোপন রাখা হয়। কিন্তু এমন একটা জয়ের পর রুট কীভাবে তথ্য গোপন করে রাখেন, ‘একজন মানুষের পক্ষে একসঙ্গে এত চাপ মাথায় নিয়ে খেলাটা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। কেবল সেই জানে কীভাবে সেটি সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যেও সে যেভাবে খেলেছে, সেটা দুর্দান্ত।’

পাকিস্তানের বেঁধে দেওয়া ২৭৭ রানের লক্ষ্যে ইংল্যান্ড যখন ব্যাটিং করছে, তখনই বাটলারের বোন জোয়ানা ভিকারস টুইট করে জানান, তাঁদের বাবা আগের সন্ধ্যাটা হাসপাতালে কাটিয়েছেন। বাটলার অবশ্য ব্যাপারটা গোপন রাখার অনুরোধ রুটকে আগেই করেছিলেন। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট ম্যাচটাই বাটলার শুরু করেছিলেন অজানা এক উৎকণ্ঠা নিয়ে। বাড়িতে তাঁর বাবা যে আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু খেলা চলার সময়ই যে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, সেটা কী তিনি তখন জানতেন!

রুটের দারুণ লেগেছে বাটলারের কঠিন মানসিক দিকটিই, ‘সে মানসিকভাবে কতটা শক্ত, সেটিই প্রমাণিত হয়েছে। সে যে কারও চাইতে মানসিকভাবে শক্তিশালী, একই সঙ্গে প্রতিভাবান। প্রচণ্ড চাপের মুখেই বাটলার সব সময় খুব ভালো করে। সে বড় চাপের মুহূর্তগুলো খুব ভালো সামলাতে পারে।’

বাটলারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এত চাপ তিনি কীভাবে সামলালেন। তাঁর উত্তর খুবই পরিষ্কার, ‘অবশ্যই আমি চাপে ছিলাম। মাথায় অনেক কিছুই ঘুরছিল। উইকেটরক্ষক হিসেবে এই ম্যাচে আমার পারফরম্যান্সও খুব বাজে হয়েছে। আমি যদি রান করতে না পারি, তাহলে হয়তো এটাই হতে পারে আমার শেষ টেস্ট। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই মাঠের বাইরের চিন্তাগুলোকে বন্দী করে ফেলে কাজে মনোযোগ দিতে হবে, পরিস্থিতিতে জয় করতে হবে। আমি খুশি যে আমি সেটা পেরেছি।’

বাটলার ম্যাচ শেষে অবশ্য তাঁর বাবাকে নিয়ে সুসংবাদই পেয়েছেন ম্যাচ শেষে। ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যাটা হাসপাতালে কাটালেও বাটলারের বাবা আপাতত সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরেছেন।