কে হবেন মেসিদের নতুন কোচ?

ছাঁটাইয়ের দ্বারপ্রান্তে সেতিয়েন। ছবি : এএফপি
ছাঁটাইয়ের দ্বারপ্রান্তে সেতিয়েন। ছবি : এএফপি

ম্যাচের অষ্টম গোলটা হওয়ার পর ক্যামেরা তাক করা হলো বার্সা কোচ কিকে সেতিয়েনের ওপর।

বিবশ, শূন্য, হতোদ্যম চেহারা। আশাহীন সেই নাবিকের মতো, যিনি জানেন শত চেষ্টা করেও তাঁর ডুবন্ত জাহাজকে উদ্ধার করতে পারবেন না। হাতটাও কি একটু কাঁপছিল ? বয়স হয়ে গেছে প্রায় ৬২, এই বয়সে বার্সার মতো এক ক্লাবের কোচ হয়ে নতমুখে ৮ গোল খেয়ে বিদায় নিচ্ছেন, তাও এমন টুর্নামেন্ট থেকে যেখানে জেতার জন্য কাতালান ক্লাবটি প্রয়োজনে সম্ভাব্য সবকিছু করতে পারে।

গত কয়েক বছর ধরেই বার্সা চেয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে পাঁচ বছরে চারবার জিততে দেখে ইচ্ছেটা আরও বেশি মাথাচাড়া দিয়েছে। এ বছরেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। আগে থেকেই জানা ছিল, লিগ হারার পরও বার্সা সেতিয়েনের ওপর আস্থা রেখেছিল শুধু এই চ্যাম্পিয়নস লিগের ফল দেখতে। ফলটা দেখা হয়ে গেছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের ইতিহাসের জঘন্যতম ফল দেখে বিদায় নিয়েছে বার্সেলোনা। সেতিয়েনকে রেখে আর কী লাভ?

অন্তত সেটাই মনে হচ্ছে এখন। ম্যাচ হারের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশে জোরেশোরে গুঞ্জন শুরু করে গেছে, ছাঁটাই হতে পারেন কিকে সেতিয়েন। আর সেই গুঞ্জনের পালে সবচেয়ে বেশি হাওয়া দিয়েছেন প্রখ্যাত ইতালিয়ান সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানো। যেকোনো ক্লাবের খেলোয়াড় কেনাবেচা ও কোচ আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সবার আগে অধিকাংশ সময়ে সঠিক তথ্য দেন। বলেছেন, এমন পারফরম্যান্সের পর আগামী মৌসুমে সেতিয়েন আর কোনোভাবেই বার্সার কোচ পদে থাকবেন না।

ভদ্রলোক বার্সার দায়িত্ব পাওয়ার খবরটা পেয়েছিলেন নিজের গরুর খামারে সময় কাটানোর সময়। আবারও প্রিয় সেই খামারে ফেরার সময় চলে এল বোধ হয়!
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সেতিয়েনের পর কে হবেন মেসিদের কোচ? বার্সা কোচের পদ নামক প্রেশার কুকারে কে নিজেকে সঁপে দিতে রাজি হবেন? সবার আগে যার নাম আসছে, তিনিও মেসির মতো এক আর্জেন্টাইন। মরিসিও পচেত্তিনো। গত বছরের শেষদিকে ছাঁটাই হওয়ার পর পচেত্তিনো এখনো কোনো ক্লাবের দায়িত্ব নেননি।

খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বার্সেলোনার নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব এসপানিওলে কিংবদন্তির মর্যাদা পাওয়া এই কোচ কিছুদিন আগেও বলতেন বার্সা-বিরাগের কথা। কিন্তু অবস্থা এখন যা দাঁড়িয়েছে, অতীতের কথা ভুলে বার্সা তাঁকে চাইলে আর্জেন্টাইন কোচ না-ও করতে পারবেন না। কয়েক দিন আগে পচেত্তিনো ইনিয়ে-বিনিয়ে জানিয়েও দিয়েছেন, বার্সা তাঁকে কোচ হিসেবে চাইলে অতীতের 'শত্রুতা' ভুলে তিনি দায়িত্ব নিতে আগ্রহী।

পচেত্তিনোকে যদি শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনা না নেয়, সে ক্ষেত্রে তাদের আরেকজন পছন্দ সাবেক খেলোয়াড় জাভি হার্নান্দেজ। বার্সেলোনার কোচ হওয়ার সুযোগ জাভি আগেই পেয়েছিলেন। কিকে সেতিয়েনকে নিয়ে আসার আগে কাতারের ক্লাব আল সাদের কোচ জাভির শরণাপন্ন হয়েছিল বার্সা বোর্ড। তখন জাভি বলেছিলেন, নিজেকে আরেকটু ভালোভাবে প্রস্তুত করে তুলতে চান। স্পেনের বিশ্বকাপজয়ী এ মিডফিল্ডার একদিন বার্সার কোচ হবেন বলেই বিশ্বাস অনেকের। যখন বার্সার কোচ হবেন তাঁর কোচিং দলের চেহারা কেমন হবে সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন জাভি, 'কোচিং অভিজ্ঞতা অর্জন করে যেতে পেরে আমি খুশি। তবে একদিন বার্সার কোচ হতে পারাটা আমার জন্য হবে দারুণ এক ব্যাপার।'

এরপরই আসল কথাটা বলেছেন জাভি। সম্প্রতি এল পাইসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'আমি (ডাগআউটে) একটা স্বপ্নের দল চাই। সেখানে জর্ডি ক্রুইফ থাকবে, থাকবে কার্লোস পুয়োল। এ ছাড়া বর্তমান খেলোয়াড়দের অনেকে। ক্লাবটিকে জানে গুরুত্বপূর্ণ এমন লোকেদের সমন্বয়ে আমি একটি দল গঠন করতে চাই। আমি আমার কোচিং দলে এমন লোক চাইব, যাদের ওপর আমি বিশ্বাস করতে পারি আর তারাও আমাকে মেনে চলবে।'

আগে সুযোগ না নেওয়া নিয়েও কথা বলেছেন জাভি। তাঁর কথা, 'জানুয়ারিতে আমি তাদের (বার্সা) বলেছিলাম যে এটা সঠিক সময় নয়। এরপর আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করেনি তারা।'

সম্ভাব্য কোচের তালিকায় আরও আছেন বার্সেলোনার আরেক সাবেক খেলোয়াড়, রোনাল্ড কোম্যান। বর্তমানে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের কোচ তিনি। কোম্যানের সঙ্গে বার্সেলোনার সম্পর্ক আজকের না। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ক্রুইফের সেই বিখ্যাত 'ড্রিম টিম' এর অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ক্রুইফ, নিসকেন্সদের পথ ধরে বার্সায় এসে সফল কয়েকটি মৌসুম কাটিয়েছেন। ১৯৯২ সালে তৎকালীন ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে (এখনকার চ্যাম্পিয়নস লিগ) তাঁর গোলেই সাম্পদোরিয়াকে হারিয়েছিল বার্সেলোনা। বার্সায় অর্ধযুগ থেকে ডজনখানেক শিরোপা জিতেছিলেন কোম্যান।

ফলে বার্সার জন্য তাঁর মনের গভীরে একটা টান থাকবেই। সেই টানটাই কিছুদিন আগে প্রকাশ পেয়েছিল নতুন করে। জানা গিয়েছিল, বার্সেলোনা ডাক দিলে নেদারল্যান্ডসের দায়িত্ব ছেড়ে চলে আসতে প্রস্তুত তিনি। ব্যাপারটা জানিয়েছেন খোদ নেদারল্যান্ডস ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের এক পরিচালক, নিকো-ইয়ান হুগমান।

দেখা যাক, শেষমেশ কার ভাগ্যের শিকে ছেঁড়ে!