ভিদাল মুখ খুললেই বিপদে পড়ে বার্সেলোনা

ম্যাচের আগে বড় বড় কথা বলা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ভিদালের।
ম্যাচের আগে বড় বড় কথা বলা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ভিদালের।

যুদ্ধ্বাংদেহী শরীরী ভাষা, মাঠেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়তে পারার ক্ষমতা রাখেন আর্তুলো ভিদাল। মাঝমাঠে এমন প্রাণচঞ্চল খেলোয়াড় থাকলে কোচের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমে। সমস্যা হলো, শুধু পা নয়, মুখও সমানে চলে চিলিয়ান মিডফিল্ডারের। আর সে মুখের কারণেই বারবার বিপদে পড়েন ভিদাল।

গতকাল চ্যাম্পিয়নসলিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সেলোনার ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বললে ভয়ংকরতম ভুল হবে। তবু ম্যাচে ছয়বার কার্ড বের করতে হয়েছিল রেফারি দামির স্কোমিনাকে। এর একটি ভিদালের। না, কাউকে ফাউল করে নয়, ম্যাচের এক মুহূর্তে নিজেকে সামলাতে না পেরে হলুদ কার্ড দেখেছিলেন বার্সা মিডফিল্ডার। ম্যাচের ভাগ্য বদলানোর কোনো সম্ভাবনা নেই, এমন পরিস্থিতিতেও অযথা রেফারির সঙ্গে ঝামেলা বাঁধিয়ে নামের পাশে হলুদ রঙ লাগিয়ে নিয়েছেন ভিদাল।

ভিদালের খেলার নিয়মিত দর্শকদের জন্য এটা নতুন কিছু নয়। মাঠে ওভাবে লড়তে জানেন বলেই সতীর্থরা তাঁকে অত পছন্দ করেন। কিন্তু মাঠের বাইরে যা বলেন, সেটা যে পরে তাঁকে রসিকতার পাত্র করে দেয়। এই যে কোয়ার্টার ফাইনালের আগে ভয়ংকর হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন ‘বিশ্বের সেরা দল’ বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়ার আগে ভয় পাওয়া উচিত বায়ার্নের, ‘বায়ার্ন আত্মবিশ্বাসী থাকবে। কিন্তু তাদের জেনে রাখা ভালো, তারা বুন্দেসলিগার কোনো দলের মুখোমুখি হচ্ছে না। তারা বার্সার মুখোমুখি হচ্ছে। আমরা বিশ্বের সেরা দল।’

বার্সেলোনা ৮-২ গোলে উড়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে ভিদাল এক অর্থে ভুল বলেননি, আসলেই বুন্দেসলিগার কোনো দলের সঙ্গে খেলেনি বায়ার্ন। এ মৌসুমে বুন্দেসলিগার কোন দলকেই যে আট গোল দিতে পারেনি জার্মান চ্যাম্পিয়নরা!

এ ম্যাচের আগে সেরা দুই তারকার লড়াইটা নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীটা অবশ্য কোনোভাবেই সত্য হলো না। রবার্ট লেবানডফস্কি ও লিওনেল মেসির তুলনায় বলেছিলেন, ‘লেভানডফস্কি অসাধারণ, খুবই বিপজ্জনক, গোলের পর গোল করে থাকে। তিন বছর ওর সঙ্গে থাকায় এটা জানি প্রস্তুতিটা কীভাবে নিয়ে থাকে। ওকে থামানো অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু মেসির সঙ্গে ওর তুলনাটা অসম্ভব। কারণ মেসি অন্য গ্রহের, যদিও লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে লেভানডফস্কিও সেরা স্ট্রাইকার।’ কাল কোনো গোল করেননি মেসি, কোনো গোলে সহায়তাও নেই। আর বায়ার্নের গোলবন্যার শুরুটা লেভানডফস্কির পাসেই হয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে এক গোল করে চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসির এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের (১৪) রেকর্ডটাও ছুঁয়ে ফেলেছেন লেভা।

তবু ভিদালের এবারের কথাবার্তা মাত্রা ছাড়ায়নি খুব একটা। অন্তত গত মৌসুমে যা বলেছিলেন, সে তুলনায় এবার রীতিমতো পানসে সব কথা বলেছেন। লিভারপুলকে গত মৌসুমের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ৩-০ গোলে হারিয়ে আকাশে উড়ছিলেন ভিদাল। দ্বিতীয় লেগে লিভারপুলের প্রত্যাবর্তনের কথা জিজ্ঞেস করতেই হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, ‘লিভারপুল যদি ওঠে (ফাইনালে) আমি আমার বাঁ অণ্ডকোষ ওদের দান করে দেব আর ডানটা দিয়ে দেব রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের যারা লিভারপুলকে সমর্থন করছিল।’

দ্বিতীয় লেগে ৪-০ গোলে উড়ে যাওয়ার পর অবশ্য নিজের পৌরুষ বিসর্জন দেওয়ার প্রতিজ্ঞা ভেঙেছেন ভিদাল। ম্যাচের আগে বড় মুখ করে কথা বললে সেটা মাঠে প্রমাণের দায়ও থাকে। কিন্তু বার্সার জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন দেখা ভিদাল টানা দুই মৌসুমেই সেটা করতে ব্যর্থ হলেন। উল্টো ক্লাবের ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় দুই দুঃস্বপ্ন দেখেছেন দুবারই। আগামী মৌসুমে তাই ভিদালের মুখ আটকাতে চাইতেও পারে বার্সেলোনা!