মিরপুরে ইমরুলই প্রথম

ইমরুলের দ্বিশতক উদ্যাপন৷ অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে আসা মিঠুন সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন আগের বলেই৷ কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে । প্রথম আলো
ইমরুলের দ্বিশতক উদ্যাপন৷ অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে আসা মিঠুন সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন আগের বলেই৷ কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে । প্রথম আলো

টপ অর্ডারে প্রতিদ্বন্দ্বী শামসুর রহমানকে ২৬৭ করতে দেখলেন। দেখলেন লোয়ার মিডল অর্ডারে নেমে ফরহাদ রেজাকে আড়াই শ করতে। এমনকি নয়-দশে নেমে সানজামুল-মুক্তারদের দেড় শ করতেও দেখলেন। নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসটিতে (১৩৮) তাই নিজেরই অস্বস্তি হচ্ছিল ইমরুল কায়েসের। সেই কবে (২০০৮ সালের এপ্রিলে) দক্ষিণ আফ্রিকা একাডেমি দলের বিপক্ষে যশোরে ১৫১ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন, সেটিও আবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছিল না। একটা ডাবল সেঞ্চুরি তাই খুব করে চাইছিলেন। চাওয়া পূরণ করলেন কাল উত্তরাঞ্চলের বোলারদের ছাতু বানিয়ে।
কাল প্রথম ওভারে শুভাশিসকে চার মেরে শুরু করেছিলেন। কুড়ি নম্বর চারটি মেরে শেষ বিকেলে সেই শুভাশিসকেই যখন উইকেট দিয়ে ফিরছেন, নামের পাশে ২৬৬ বলে ২০৪। ছক্কা পেটানো ব্যাটসম্যান হিসেবে খুব বেশি নামডাক নেই। সব পক্ষে যাওয়ার এক দিনে কাল ইমরুল ছক্কাও মেরেছেন ৯টি!
নিজের প্রত্যাশা পূরণের দিনে বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও একটা অপূর্ণতা ঘুচিয়েছেন ইমরুল। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, কালকের আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের কারও দ্বিশতক ছিল না! এই মাঠে প্রথম শ্রেিণর ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরিই ছিল মাত্র দুটি। দুটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে—শিবনারায়ণ চন্দরপল ও মাহেলা জয়াবর্ধনে, দুজনই অপরাজিত ২০৩। টেস্টের বাইরে প্রথম শ্রেণিতেও সর্বোচ্চ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের দলের হেইনো কুনের ১৯১ (২০১০ সালে)। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ছিল বিসিএলের প্রথম আসরের প্রথম ম্যাচে জিয়াউর রহমানের অপরাজিত ১৫২। ‘হোম অব ক্রিকেটে’ ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেিশ তাই ইমরুল।
রানপ্রসবা দিনে সেঞ্চুরিতে দিন শেষ করেছেন মোহাম্মদ মিঠুনও। ইমরুলের মতো এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানও খেলেছেন ওয়ানডে মেজাজে, ১৫৫ বলে ১১১ রানের ইনিংসে ১৩ চার ও ৫ ছক্কা। তৃতীয় উইকেটে দুজনের ২৫৪ রানের জুটি শেরেবাংলায় সর্বোচ্চ। পেছনে পড়ে গেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে শচীন টেন্ডুলকার ও রাহুল দ্রাবিড়ের ২২২ রানের জুটি। এক দিনেই দক্ষিণাঞ্চল রান তুলেছে ৪১০। তৃতীয় দিন শেষে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে লিড ৪৪৬ রানের। প্রথম ইনিংসের বোনাস পয়েন্টেও এগিয়ে তারা। কালই তাই ট্রফিতে এক হাত ছঁুয়ে রেখেছে দক্ষিণাঞ্চল।
ম্যাচের প্রথম দুই দিন ছিল বাজে ব্যাটিংয়ের। কাল ইমরুল-মিঠুন দেখিয়েছেন এই উইকেটে কেমন ব্যাটিং করা উচিত। দিন শেষে ইমরুল বললেন, ‘প্রথম ইনিংসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হওয়ায় এবার নিচে রেখে লম্বা খেলতে চেয়েছি।’ ব্যাটিংয়ে কিন্তু সেটার প্রতিফলন কমই ছিল। স্পিনারদের ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মেরেছেন অসংখ্যবার, দুই পেসার শুভাশিস-ফরহাদ শর্ট বল দিলেই চালিয়েছেন। চার মেরে ছঁুয়েছেন ফিফটি, লং অন দিয়ে মারা ছক্কায় সেঞ্চুরি, হুক করে ছক্কায় দেড় শ। ক্রমাগত চালিয়ে খেলেও পক্ষে পেয়েছেন ভাগ্যকে। ৫৮ রানে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেছেন, জীবন পেয়েছেন ১০৯ ও ১২২ রানেও। ক্যাচ হতে হতে হননি আরও কয়েকবার, ১৮৬ রানে সহজ ক্যাচ দিয়েছিলেন তাইজুলের বলে। লং অফ ফিল্ডার শুভাশিস বুঝতেই পারেননি ক্যাচ আসছে! শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন হুক করে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে।
মিঠুনের ইনিংসটি সেই তুলনায় বেশ নিখঁুত। প্রথম শ্রেণিতে ৮ সেঞ্চুরি হয়ে গেল ৪৯ ম্যাচেই! আজ নামবেন আরও বড় কিছুর আশায়। থিতু হয়েও আউট হয়ে এনামুল আর সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়ে রানআউট হওয়া সৌম্য আফসোসে পুড়তে পারেন বড় সুযোগ হাতছাড়া করায়। তাইজুল কাল নিজের মতোই লাইন-লেংথে বোলিং করেছেন, কিন্তু কাল আর পাননি রাশি রাশি উইকেট!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২৭১
উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২৩৫
দক্ষিণাঞ্চল ২য় ইনিংস: ৪১০/৩ (ইমরুল ২০৪, মিঠুন ১১১*, সৌম্য ৪১, এনামুল ২১, শুভাগত ১০*; রেজা ১/৩৪, তাইজুল ১/১০৯)৷