স্বপ্নের মঞ্চে রোমাঞ্চিত তামিম

তামিম ইকবাল
তামিম ইকবাল

রোমাঞ্চে হাবুডুব খাচ্ছেন সেই আমন্ত্রণ পাওয়ার দিনটি থেকেই৷ আবার ক্রিকেট-তীর্থে খেলবেন, ক্রিকেটাকাশের উজ্জ্বল সব তারার সঙ্গে কাটাবেন স্বপ্নের কয়েকটি দিন৷ পরশু চূড়ান্ত হয়েছে একাদশ৷ অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশে জায়গা পেয়েছেন তামিম ইকবাল৷ জানার পর থেকেই যেন ডানা মেলে লর্ডসে উড়ে যেতে চাইছে তাঁর মন!
এ বছরই ২০০ বছর পূর্ণ করছে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড৷ ক্রিকেটের প্রতীকে পরিণত হওয়া এই মাঠে দ্বিশতবার্ষিকী জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করছে এমসিসি৷ এরই অংশ হিসেবে আসছে ৫ জুলাই আয়োজন করা হচ্ছে ৫০ ওভারের একটি ম্যাচ৷ মুখোমুখি হবে এমসিসি একাদশ আর অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশ৷ এমসিসির নেতৃত্বে শচীন টেন্ডুলকার, সতীর্থ হিসেবে পাচ্ছেন ব্রায়ান লারা, রাহুল দ্রাবিড়কে৷ শেন ওয়ার্নের নেতৃত্বে অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশে তামিমের সঙ্গী শেবাগ-গিলক্রিস্ট-মুরালিরা৷
এমন এক ম্যাচের অংশ হতে পারাই দারুণ ব্যাপার৷ তামিমের রোমাঞ্চ আরও বেশি আশৈশব একটি স্বপ্নপূরণ হচ্ছে বলেও, ‘সব সময়ই বলতাম যে আমার স্বপ্ন বিশ্ব একাদশে খেলা৷ রেস্ট অব দ্য ওয়ার্ল্ড তো তেমন কিছুই! স্বপ্ন সত্যি হলো বলতে পারেন৷ এত ইতিহাস জড়িয়ে আছে যে মাঠে সেই মাঠের ২০০ বছর পূর্তির ম্যাচ খেলতে পারা বিশাল সম্মানের৷ দুই দলের অন্য ক্রিকেটারদের তালিকা থেকেই বোঝা যাচ্ছে উপলক্ষটা কত বড়৷ আমি মনে করি, বাংলাদেশের জন্যও এটা অনেক বড় সম্মান৷ এখন ব্যাট হাতে ভালো করতে পারলে আরও ভালো লাগবে৷’
ম্যাচের জন্য মনোনীত ক্রিকেটারদের নামগুলো জানার পর থেকে অনেক ছবিই এঁকেছেন মনে মনে৷ পরশু একাদশ ঘোষণা হওয়ার পর একটা ছবির ফ্রেম উল্টে গেছে৷ তাতে মন খারাপও ছিল খানিকটা৷ তবে শেষ পর্যন্ত ভালো লাগার স্রোতে সেটা ভেসে গেছে, ‘মনেপ্রাণে চাইছিলাম টেন্ডুলকারের সঙ্গে একই দলে খেলতে, একসঙ্গে ওপেন করতে...এমন সুযোগ হয়তো আর কখনো পাব না৷ তার পরও অবশ্য নিজ দলে যাঁদের পেয়েছি, তাঁদের সঙ্গে খেলা অনেক বড় পাওয়া৷ খুবই প্রিয় দুই ক্রিকেটার গিলক্রিস্ট বা শেবাগের সঙ্গে ওপেন করব আমি, এমন কিছুও তো আসলে কখনোই ভাবতে পারিনি!’
বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটারের জন্য এমন ম্যাচের অংশ হওয়া যেমন সম্মানের, তেমনি বড় সুযোগও৷ চারপাশে যখন টেন্ডুলকার-লারা-দ্রাবিড়-ওয়ার্নরা, শেখার জন্য এত ভালো সংক্ষিপ্ত পাঠশালা আর কী হতে পারে! তামিমও কদিনের জন্য হতে চান একান্ত মনোযোগী ছাত্র, ‘এত বড় বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে এক ড্রেসিংরুম শেয়ার করা অনেক বড় সুযোগ৷ ম্যাচ এক দিনই, কিন্তু আমরা হয়তো তিন-চার দিন একসঙ্গে থাকব৷ সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে চাই৷ এই গ্রেটরা কীভাবে কথা বলে, নিজেদের মধ্যে কী আলোচনা করে, মাঠে আচরণ কেমন থাকে...মাঠের বাইরেও প্রতিটি পদক্ষেপ খেয়াল করতে চাই৷ রান করতে পারলে ভালো, িকন্তু তার চেয়েও বেশি চেষ্টা থাকবে শেখার৷ সবার সঙ্গেই প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ পাব৷ নিজের ব্যাটিং নিয়ে কথা বলব, আমাদের দল নিয়ে বলব৷ শেখার বিশাল সুযোগ৷’
চার বছর আগে এই লর্ডসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন ঘোষণা দিয়ে৷ অনার্স বোর্ডে এখনো জ্বলজ্বল করছে তাঁর নাম৷ সেদিকে তাকিয়ে গর্বের পাশাপাশি বুকের কোণে একটা চিনচিনে ব্যথাও কি অনুভূত হবে না তামিমের? গ্রীষ্ম শুরুর ইংলিশ উইকেটে অ্যান্ডারসন-ফিন-ব্রেসনানদের বিপক্ষে দুর্দান্ত দুটি সেঞ্চুরি করে হয়েছিলেন উইজডেনের বর্ষসেরা৷ তখন যে ইঙ্গিত ছিল, তাতে আজ বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের কাতারেই থাকার কথা ছিল তামিমের নাম৷ কেন প্রত্যাশার পথ ধরে এগোয়নি ক্যারিয়ার, সেটা নিয়েও নানা সময়ে বিশ্লেষণ কম হয়নি৷ গত কয়েকটা মাস তো চোট আর বাজে ফর্ম মিলিয়ে কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো৷ তামিমের দাবি, গত কিছুদিনে অনেক খেটেছেন৷ কাজ করেছেন দুর্বলতা নিয়ে, ঝালাই করেছেন শক্তির জায়গা৷ এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা৷
বিশ্ব একাদশের রোমাঞ্চ নিয়ে ভারত সিরিজটাই হতে পারে ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ!

লর্ডসের দুই দল
এমসিসি একাদশ:
অ্যারন ফিঞ্চ, শচীন টেন্ডুলকার (অধিনায়ক), রাহুল দ্রাবিড়, ব্রায়ান লারা, শিবনারায়ণ চন্দরপল, ক্রিস রিড (উইকেটকিপার), ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, ব্রেট লি, উমর গুল, সাঈদ আজমল, শন টেইট৷

অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশ: তামিম ইকবাল, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (উইকেটকিপার), বীরেন্দর শেবাগ, কেভিন পিটারসেন, পল কলিংউড, যুবরাজ সিং, শহীদ আফ্রিদি, শেন ওয়ার্ন (অধিনায়ক), টিনো বেস্ট, পিটার সিডল, মুত্তিয়া মুরালিধরন৷