পার্থক্য গড়ে দিতে পারে রুনি

জিকো
জিকো

লুইস ফেলিপে স্কলারি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র দুটি দল ব্রাজিলকে হারাতে পেরেছে৷ গত আগস্টে সুইজারল্যান্ড, যখন দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই ব্যস্ত ছিল নিজ নিজ ক্লাবের প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতে৷ দ্বিতীয় দলটি ইংল্যান্ড, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েম্বলিতে ব্রাজিলকে হারিয়েছিল ২-১ গোলে৷ সেটির পেছনেও অবশ্য কিছু কারণ ছিল৷ স্কলারির এবারের দায়িত্বে সেটাই ছিল প্রথম ম্যাচ, দলে অনেক পরিবর্তন এনেছিলেন ‘বিগ ফিল’৷ আগের কোচের সময় যারা ছিল উপেক্ষিত, সেই হুলিও সিজার, রোনালদিনহো, ফ্রেডদের সুযোগ দিয়েছিলেন স্কলারি৷ তবে কনফেডারেশনস কাপের আগে, গত জুনে যখন আবার মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ডের, ব্রাজিল সেবারও জিততে পারেনি (২-২)!
জুনের ম্যাচটি আমি মারাকানায় বসেই দেখেছি৷ রয় হজসনের দলের পারফরম্যান্স সেদিন আমার দারুণ লেগেছে৷ সংঘবদ্ধ একটা দল হিসেবে খেলেছে ওরা৷ পুরো ম্যাচে ওয়েইন রুনির পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত৷ অ্যালেক্স অক্সলেড-চেম্বারলেইনকে প্রথম গোলটি বানিয়ে দিয়েছিল সে, এরপর হুলিও সিজারের মাথার ওপর দিয়ে অসাধারণ এক লব জালে পাঠিয়ে ব্রাজিলকে ভীষণ চাপে ফেলে দিয়েছিল৷ ঘাম ছুটে গিয়েছিল স্কলারির দলের, শেষ পর্যন্ত সমতা ফেরায় পাওলিনহোর গোল৷ হজসনের পরিকল্পনা ছিল খুব সাধারণ, প্রতি-আক্রমণে ব্রাজিলকে চাপে ফেলা এবং সেটা দারুণ কাজে দিয়েছিল৷ ফুটবলে ইদানীং ব্যবধানটা খুবই সূক্ষ্ম, প্রতিটি সুযোগই তাই লুফে নিতে হয়৷
গত এক বছরে অবশ্যই কিছু কিছু ব্যাপার বদলে গেছে৷ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, চোটে ইংল্যান্ড হারিয়েছে থিও ওয়ালকটকে৷ প্রতি-আক্রমণনির্ভর দলের অমন দ্রুতগতির একজন ফুটবলারকে হারানো বড় ধাক্কা৷ তবে আমি ইতিবাচক দেখছি ড্যানিয়েল স্টারিজের উত্থানকে৷ ওর এই মৌসুমের পারফরম্যান্সে আমি মুগ্ধ, লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে মিলে বিপজ্জনক এক জুটি গড়ে তুলেছে লিভারপুলে৷ মাঠজুড়ে বিচরণ আর গোলতৃষ্ণার কারণেও দলের জন্য সে খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে এই দলে সত্যিকার অর্থেই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে রুনি৷ নিজের ভেতরে যদি ও তাড়না অনুভব করে আর তেড়েফুঁড়ে খেলতে পারে, তাহলে প্রতিপক্ষকে ভীষণ চাপে ফেলে দিতে পারে৷ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মৌসুমটা হতাশাময় হলেও ১৯ গোল করেছে রুনি, সহায়তা করেছে অনেক গোলে—মোটেও খারাপ নয়!
মারাকানার সেই ম্যাচে স্টিভেন জেরার্ড খেলেনি৷ িকন্তু নতুন পজিশনে ওর খেলাও আমার দারুণ মনে ধরেছে৷ ওকে একটু নিচে নামিয়ে খেলানোয় লিভারপুল ওপরে ওঠা ও নিচে নামার কাজটা করতে পেরেছে দ্রুততায়৷ আমার ধারণা, ওর নতুন ভূমিকা জাতীয় দলেও কার্যকর হবে৷ জেরার্ড হয়তো মাঠে ক্লান্তিহীন ছুটোছুটি আর আক্রমণে কার্যকারিতার জন্য পরিচিত৷ কিন্তু নিচে খেলায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সে, পাসগুলো দিচ্ছে নিখুঁত, প্রতি-আক্রমণনির্ভর দলের জন্য যা জরুরি৷
ইংল্যান্ডের আরেকটি ভালো দিক, দলের এক নম্বর গোলরক্ষক জো হার্ট মনে হচ্ছে বাজে সময়কে পেছনে ফেলতে পেরেছে৷ ম্যানচেস্টার সিটির

কয়েকটি ম্যাচ আমি দেখেছি৷ পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল, হার্টের আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে৷ গত বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতার পর ইংল্যান্ডের ফুটবলার ও সমর্থকদের কেউই নিশ্চয়ই গোলকিপিংয়ে ভুতুড়ে কিছুর শঙ্কা করতে চাইবে না!
সব মিলিয়ে বলতে হবে, গ্রুপপর্ব উতরাতে হলে ইংল্যান্ডের সব ফুটবলারকে প্রথম ম্যাচ থেকেই ফর্মের চূড়ায় থাকতে হবে৷ লুকোছাপার কিছু নেই, তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে নিয়ে গড়া এই গ্রুপ খুবই কঠিন৷ কোস্টারিকার ওপর যেহেতু কোনো চাপ নেই, ওরাও কোনো অঘটন ঘটাতে পারে৷ সত্যি বলতে অনেকেরই মনে থাকে না যে কনকাকাফ অঞ্চলে মেক্সিকোর ওপরে থেকে দ্বিতীয় হয়েছিল কোস্টারিকা৷ ওদের মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না৷ কাছাকাছি মানের তিনটি ঐতিহ্যবাহী দল যখন একই গ্রুপে, ওরা পরস্পরের পথে বাধার দেয়াল হতে চাইবেই৷ কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচগুলো তাই হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি গোল-পার্থক্যের দিক থেকেও৷ তিন সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মধ্যে আমি উরুগুয়েকে একটু এগিয়ে রাখব লাতিন আমেরিকায় খেলা বলে৷ সুয়ারেজের মতো ফর্মের চূড়ায় থাকা একজন স্ট্রাইকারও আছে ওদের৷
২০১০ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ার সেই সময়টাকে অনেক পেছনে ফেলে এসেছে ইতালি৷ এবার ওরা যেকোনো দলের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে৷ তার পরও ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা আশায় বুক বাঁধতে পারে এই ভেবে, ২০১২ ইউরোতে ইতালিকে জিততে হয়েছিল টাইব্রেকারে৷ এবার আবার মুখোমুখি হচ্ছে এই দুই দল৷ পরের রাউন্ডে ওঠায় এই ম্যাচটি ইংল্যান্ডের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ ইংলিশরা কি পারবে? আমার ধারণা, পারবে!
একটা ব্যাপার, আমার খেলোয়াড়ি সময়ের মতো এখনকার ইংলিশ ফুটবল আর অতটা অনুমিত নয়৷ প্রিমিয়ার লিগে অনেক বেশি সংখ্যায় বিদেশি ফুটবলার খেলে বলে অনেকের অভিযোগ৷ কিন্তু এতে ইংলিশ ফুটবলের উন্নতি হয়েছে৷ আমি শুনেছি যে ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ও সমর্থকদের দলকে নিয়ে খুব উচ্চাশা নেই৷ মনে রাখতে হবে, ২০১০ বিশ্বকাপের পর দলটা বেশ ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে গিয়েছে এবং ওরা এখন সেটাই করছে যা করা উচিত৷ বিশ্বকাপে যদি গ্রুপপর্ব উতরাতে পারে, তাহলে কে জানে দারুণ কিছু হতেই পারে!
সেই মারাকানার ম্যাচটায় ফিরে যেতে হবে ইংল্যান্ডকে৷ সেদিন ব্রাজিলকে নিজেদের খেলাটা খেলতে দেয়নি ইংল্যান্ড, হতাশ করে ছেড়েছে৷ ব্রাজিলের দুটি গোলই ছিল ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে৷ ওই দিনের মতো পারফরম্যান্স সব সময়ই অনুপ্রেরণাদায়ক৷ হাতে থাকা ফুটবলারদের নিয়ে যা করার সম্ভব, হজসন সেটাই করছেন৷ এখনই তাদের হিসাবের বাইরে রাখা হবে ভুল!