রদ্রিগেজ, হামেস রদ্রিগেজ!

হামেস রদ্রিগেজ
হামেস রদ্রিগেজ

এবারের বিশ্বকাপ দেখছেন অথচ তাঁর নাম জানেন না, এ গ্রহে এখন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। যেমন মুশকিল হবে বিশ্বকাপের আগে পাঁড় ফুটবলপ্রেমী ছাড়া কজন তাঁর নাম জানতেন সেটা বের করাও।
কার কথা বলা হচ্ছে বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই। রদ্রিগেজ। জেমস রদ্রিগেজ।
ইয়ান ফ্লেমিংয়ের অমর সৃষ্টি জেমস বন্ডের সঙ্গে মিলিয়েই নাকি ছেলের নাম রেখেছিলেন তাঁর বাবা। ইংরেজি বানান দেখে বাকি বিশ্ব একটা দীর্ঘ সময়ে জেমসই উচ্চারণ করেছে। তবে খুব সম্প্রতি রদ্রিগেজ নিজেই শুধরে দিয়েছেন, কলম্বিয়ান ভাষায় উচ্চারণটা জেমস নয়, ‘হামেস।’
যে বিশ্বকাপ শুরুর আগে মেসি-নেইমার-রোনালদোকে নিয়ে মাতামাতি, যে বিশ্বকাপে ফ্যালকাও খেলতে পারবেন না বলে কলম্বিয়ায় হাহাকার, সে বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ‘সুপারস্টার’ হামেস রদ্রিগেজ। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির এই ২২ বছর বয়সী তরুণ যেন হয়ে উঠেছেন কলম্বিয়ার ‘মুখ’!
চার ম্যাচে পাঁচ গোল নিয়ে পরশু পর্যন্ত তিনি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা, ফ্যালকাওয়ের অভাব ভুলিয়ে দিয়ে কলম্বিয়ার নতুন স্বপ্নসারথি। গোল ছাড়াও মাঠে তাঁর পারফরম্যান্স মুগ্ধ করে যাচ্ছে সবাইকে। এমনকি রদ্রিগেজের অসাধারণ দুই গোলে দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে যাওয়ার পর উরুগুয়ের কোচ অস্কার তাবারেজ তো তাঁকে দাঁড় করিয়েছেন কিংবদন্তিদের কাতারেও। মুগ্ধ হয়ে বলেছেন, ‘আমার কাছে তারাই বিশেষ প্রতিভা যারা অসাধারণ কিছু করতে পারে। ম্যারাডোনা, মেসি, নেইমার, সুয়ারেজ, রদ্রিগেজ এ রকম করতে পারে। কারণ, তারা সেই ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে।’ সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ সম্ভবত কলম্বিয়ান কিংবদন্তি কার্লোস ভালদেরামা। মোনাকো প্লে-মেকারকেই তাঁর ১০ নম্বর জার্সির সবচেয়ে যোগ্য উত্তরসূরি বলে মনে করছেন তিনি, ‘দীর্ঘদিন ধরে কলম্বিয়া নতুন ভালদেরামা খুঁজছিল। অবশেষে আমরা তাকে পেয়েছি। রদ্রিগেজই হবে আগামীর তারকা। শুধু এই বিশ্বকাপের নয়, আগামী এক দশকের। সে অনন্য, আমার চেয়েও আলাদা এবং তার সামর্থ্য আছে লক্ষ্যে পৌঁছানোর।’ সেই লক্ষ্যটা কী সেটাও বলে দিয়েছেন ভালদেরামা, ‘ও শুধু কলম্বিয়ার সেরা ফুটবলার নয়, ফুটবল ইতিহাসের সেরাদের একজন হতে পারবে।’
এই প্রশংসা, স্তুতি—এখনই এত কিছু বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তবে বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত রদ্রিগেজের পারফরম্যান্স দেখে ভালদেরামার কথাটা উড়িয়ে দেওয়ার কোনো উপায় নেই। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল ঘোষণার আগে চোট ফ্যালকাওকে ছিটকে ফেলায় প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন কলম্বিয়ান সমর্থকেরা। কিন্তু রদ্রিগেজ এখন তাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ভালদেরামারা খেলেছিলেন শেষ ষোলোতে। এত দিন সেটাই ছিল বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার সেরা সাফল্য। কিন্তু এবার প্রায় রদ্রিগেজের একক নৈপুণ্যে এরই মধ্যে শেষ আটে পৌঁছে গেছে হোসে পেকারম্যানের দল। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রদ্রিগেজকে নিয়ে স্বভাবতই দুশ্চিন্তায় কলম্বিয়ার কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিপক্ষ ব্রাজিলের। মিডফিল্ডার ফার্নান্দিনহো যেমন আগেই সতীর্থদের সতর্ক করে দিলেন রদ্রিগেজকে নিয়ে, ‘আমি ওর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলেছি। ওই সময় ইউরোপে ওর ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে শুধু । ওই ম্যাচেই সে দেখিয়েছিল তার বাঁ পায়ের কারিশমা। আর এই বিশ্বকাপে তো সে প্রমাণ করেছে, মোনাকো ওকে এত টাকা দিয়ে কিনে একটুও ভুল করেনি। তাকে খেলার জন্য যত কম জায়গা দেওয়া যায়, ততই ব্রাজিলের জন্য ভালো।’
রদ্রিগেজ কি পারবেন নিজের জন্য সেই জায়গাটা করে নিতে? শেষ ষোলোয় উরুগুয়ের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছেন। এবার ব্রাজিলকে রুখে দিয়ে পারবেন কলম্বিয়ার ফুটবল ইতিহাস নতুন করে লিখতে?