ওল্ড ট্রাফোর্ডেই মীমাংসা?

কেভিন পিটারসেন: চোট কাটিয়ে খেলবেন আজ? ষ এএফপি
কেভিন পিটারসেন: চোট কাটিয়ে খেলবেন আজ? ষ এএফপি

গ্যালারিতে লাল রং, প্রেসবক্স, নতুন স্ট্যান্ডেও লালের ছোঁয়া। মাঠের আকৃতিও খানিকটা বদলে গেছে। চিরচেনা ওল্ড ট্রাফোর্ডকে কেমন যেন অচেনা লাগে জেমস অ্যান্ডারসনের। এই মাঠে খেলেই বেড়ে উঠেছেন, ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে দেখিয়েছেন দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্স, নজর কেড়েছেন জাতীয় নির্বাচকদের। ১৫৬ বছরের পুরোনো স্টেডিয়াম সংস্কারের পর বদলে গেছে অনেকটাই। চারপাশে তাকালে যেখানে ঐতিহ্যের চেয়ে বেশি এই সময়ের ছোঁয়া।
স্টেডিয়ামের মতো এখানে ভাগ্য বদলের আশায় অ্যান্ডারসনও। ইংল্যান্ডের পেস আক্রমণের নেতা ঘরের মাঠে ৩ টেস্টে পেয়েছেন মাত্র ১০ উইকেট। এবার সুযোগটা দারুণ, এই টেস্ট জিতলেই অ্যাশেজ ইংল্যান্ডের। ঘরের ছেলের সুযোগ নিজের দর্শকের সামনে জয়ের নায়ক হওয়া! এমন কিছুর আশায় বুক বেঁধে আছে এই মাঠের মালিক ল্যাঙ্কাশায়ার ক্লাবও। তিন বছর পর টেস্ট ফিরছে ওল্ড ট্রাফোর্ডে, সর্বশেষ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল এখানে বাংলাদেশ। অ্যান্ডারসনের নৈপুণ্যে যদি জিতে যায় ইংল্যান্ড, ওল্ড ট্রাফোর্ডের নতুন রূপে ফেরাটাও হবে স্মরণীয়।
মাইকেল ক্লার্কের ভাবনায় আবার ২০ বছর আগের ওল্ড ট্রাফোর্ড। অ্যাশেজে শেন ওয়ার্নের প্রথম বল, লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে অফ স্টাম্পের বেলে চুমু, হতভম্ব মাইক গ্যাটিং। এই ওল্ড ট্রাফোর্ডেই। অ্যাশেজ কেড়ে নেওয়ার আশা জিইয়ে রাখতে ক্লার্কেরও চাই এখন এমন অভাবনীয় কিছু। যে কারও কাছ থেকে, যেকোনোভাবে। চাই আবার একটা ‘ওল্ড ট্রাফোর্ড ম্যাজিক!’
তবে অ্যান্ডারসন ও ক্লার্ককে দুঃসংবাদ শোনাতে প্রস্তুত হয়ে আছে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ২২ গজ। স্টেডিয়াম পাল্টালেও পাল্টায়নি উইকেট। ঐতিহ্যগতভাবেই এখানে স্পিন ধরে বেশ। এখানেই জিম লেকার গড়েছিলেন ১৯ উইকেট কীর্তি, মন্টি পানেসার পেয়েছেন ৩ টেস্টে ২৫ উইকেট, এমনকি ভিনদেশি ল্যান্স গিবস পর্যন্ত তিন টেস্টে দুবার নিয়েছেন ১০ উইকেট। সর্বশেষ টেস্টেই ৫ উইকেট পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও গ্রায়েম সোয়ান। এবারও যথারীতি উইকেট বেশ শুষ্ক, ছোটখাটো ফাটল ম্যাচের আগে থেকেই। আর এটা তো প্রমাণিতই যে এই অস্ট্রেলিয়া স্পিনে দুর্বল, নিজেদের আবার নেই ভালো কোনো স্পিনার!
ট্রেন্ট ব্রিজ ও লর্ডসেও এবার আগের মতো সহায়তা পাননি পেসাররা। ক্লার্ক তাই কাল হাসলেন যেন অসহায়ের মতো, ‘অন্য দেশগুলো বেশ স্মার্টনেস দেখাচ্ছে, তাই না? আমাদের মূল শক্তি পেস বোলিং, আর মূল দুর্বলতা স্পিনে। তাই ওরা এমন ব্যবস্থা করছে যাতে আমরা শক্তির জায়গা কাজে লাগাতে না পারি। অন্য দেশের হলে হয়তো আমিও এমনটাই করতাম। বাস্তবতা হলো, শেন ওয়ার্নের পর আমরা ভালো কোনো স্পিনার পাইনি, সাম্প্রতিক সময়ে পাইনি স্পিনের বিপক্ষে ভালো ব্যাটসম্যান।’
শুধু শেন ওয়ার্নের স্মৃতি নয়, সরাসরি ওয়ার্নেরও দ্বারস্থ হয়েছেন ক্লার্ক। দলের দুই স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগার ও নাথান লায়নকে ওয়ার্নের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন টিপসের জন্য। আজ অবশ্য একজনের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। সেটা হতে পারেন নাথান লায়ন, ব্যাটে আলো ছড়ালেও নিজের মূল কাজে ব্যর্থ অ্যাগার। চোট পাওয়া স্টিভ স্মিথের জায়গায় ফিরতে পারেন ডেভিড ওয়ার্নার। স্মিথ ফিট হলে হয়তো খড়্গ নামবে ফিল হিউজের ওপর। ইংল্যান্ডের শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সোয়ান ও পানেসার দুজনকেই খেলানো হবে কি না। রাতারাতি অবনতি না হলে চোট কাটিয়ে কেভিন পিটারসনের খেলা অনেকটাই নিশ্চিত।
সর্বশেষ দুই অ্যাশেজেই প্রথমে এগিয়ে থেকে তৃতীয় টেস্টে হেরেছে ইংল্যান্ড। তবে দুই দলের যা অবস্থা তাতে এই মানসিক বাধাটাও এবার খুব বেশি প্রতিবন্ধক হওয়ার কথা নয়। জিততে হলে সত্যিকার অর্থে ক্লার্কদের করে দেখাতে হবে অভাবনীয় কিছু!’