'পদক তো হাতের মোয়া নয়'

শ্যুটিংয়ে থেকেও যেন নেই তিনি। অনেক দিন পত্রিকার পাতায়ও অদৃশ্য আসিফ হোসেন খান। কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী এই শ্যুটার কাল কথা বললেন, তাঁর নিজের ও দেশের শ্যুটিয়ের বর্তমান অবস্থা নিয়ে

আসিফ হোসেন খান
আসিফ হোসেন খান

l আপনি এখন কোথায় আছেন? কী করছেন?
আসিফ হোসেন খান: বিকেএসপির চাকরিটাই করছি। সেখানে কোচ হিসেবে বছর তিনেক হলো। এ মুহূর্তে বাড়ি (পাবনা) যাচ্ছি। আর মোটামুটি সব ঠিক চলছে। সব ঠিক থাকলে আশা করি আগামী মাসের ২২ তারিখ প্রথম সন্তানের বাবা হতে চলেছি। সবাই দোয়া করবেন।
l এশিয়ান গেমস মাত্রই শেষ করলেন শ্যুটাররা। গেমসে শ্যুটারদের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? কমনওয়েলথ গেমসে রুপাজয়ী আবদুল্লাহ হেল বাকি কেমন করলেন এশিয়াডে?
আসিফ: এশিয়ান গেমসে বাকি খারাপ করেছে বলব না। কারণ সে কমনওয়েলথ গেমসে যে স্কোর করে ১০ মিটার এয়াররাইফেলে রুপা পেয়েছে, এশিয়াডে তার চেয়ে মাত্র আধা পয়েন্টেরও কম করেছে। কমনওয়েলথে ৬২০, এশিয়াডে ৬১৯.৬। তার মানে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করেছে বাকি। কাজেই হতাশার কিছু দেখছি না আমি।
l তাহলে বিওএ প্রত্যাশার ফানুস ওড়াল কেন? কী মনে হয় আপনার?
আসিফ: কমনওয়েলথ আর এশিয়ান গেমসের মধ্যে পার্থক্য অনেক। এশিয়ান গেমস অনেক কঠিন মঞ্চ। যেখানে বিশ্বমানের অনেক শ্যুটার অংশ নেয়। নিজের সেরাটা করেও বাকি হলো ১৫তম। কাজেই অনর্থক প্রত্যাশা বাড়ানো উচিত নয়।
l সামগ্রিকভাবে কমনওয়েলথ গেমস এবং এশিয়ান গেমসে শ্যুটারদের পারফরম্যান্স কেমন হলো?
আসিফ: এশিয়ান গেমসে মেয়েদের স্কোর তুলনামূলক খারাপ হয়েছে। ওরা যে মানের খেলোয়াড় এবং অনুশীলনে যেমন করত সেটা করতে পারেনি এশিয়ান গেমসে।
l খারাপ হওয়ার কারণ কী মনে হয়?
আসিফ: এ ব্যাপারে আমি বলতে পারব না। কারণ আমি ক্যাম্পে ছিলাম না। তবে সাধারণত রত্না, শারমিনরা ৪০০-তে ৩৯৩, কখনো ৩৯৫ বা তারও বেশি স্কোর করে। সেটা ওরা করতে পারলে এশিয়াডে মেয়েরা এত পেছনে পড়ত না।
l দেশের শ্যুটিং নিয়ে অনেকেই একটু আশাহত। আপনিও কি সেই দলে?
আসিফ: না, সেই দলে নই আমি। শুনুন, আপনি খেলোয়াড়দের জন্য কিছু করবেন না, কোনো দায়িত্ব নেবেন না, তাহলে খেলোয়াড়েরা কেন খেলবে? আমি সাধ্যমতো কিছু মেডেল এনে দিয়েছি, কই আমার খোঁজ কেউ রেখেছে? আমার জীবন-জীবিকা কীভাবে চলছে, সেই খবর কেউ রাখেনি। এই হলো আমার দেশের সংস্কৃতি। সবাই শুধু পদকই চায়, পদক তো হাতের মোয়া নয় যে চাইলেই চলে আসবে। এর পেছনে অনেক শ্রম দিতে হয়।
l তার পরও যতটা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন খেলোয়াড়েরা, সেটাও কাজে লাগতে পারছেন না। এটা কি খেলোয়াড়দের মেধার অভাব?
আসিফ: মেধার অভাব বলব না। আসলে সামনে যখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, খেলোয়াড়ের কাছ থেকে আপনি কীভাবে শতভাগ আশা করবেন? আমি তো এক শ ভাগ দিয়েছি। তিনটি কমনওয়েলথ গেমসে খেলে তিনটিতেই পদক জিতেছি। আজ আমি কোথায়? হ্যাঁ, আমার নিজের কিছু ভুলত্রুটি আছে স্বীকার করি। তার পরও আমি এভাবে এত দ্রুত বিস্মৃত হব ভাবিনি।
l ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় কি আপনাকে দেখা যাবে আবার?
আসিফ: আমি জানি না। এই প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার জানা নেই।